কথা অনঘসমান


 

 

মায়ামৃগ তুলে রাখো সন্তানের চোখে;

মাতৃপ্রেম ছিটকে পড়ে এ পুণ্যশ্লোকে!

চারিপাশে চেয়ে দেখো রং যত ঘোর

সোহাগেতে বানভাসি, ভাসে যে আদর।

আমাদের দেহজোড়া জোড়াতালি প্রাণ—

আত্মাদ্বয় একখাঁচা ঝিঙেফুল ঘ্রাণ।

সুবাসিত বাগিচার মধুলোভে ধায়

মাতাপুষ্টি কুসুমের মমতা জাগায়।

এসো মাতা— পুণ্যিপুকুর আহ্লাদী কাঁখ

দুধেল পুষ্পটি মাঝে থাক সুধা থাক;

যেথা তুমি সেথা পুত্র ঈশ্বরীসহায়

দিন-রাত ভুলে যাও দেবী তুমি হায়!

সারাবেলা কাব্যিগুণে মুগ্ধ মুনিবান।

মাতাশাখে মধুচাক অনঘসমান।।

 

 

 

মায়া মধু, মধু মায়া! ইতিউতি রাত

কোনোক্রমে কেটে যায়, নয়ন ছলাৎ

ছল! জাগে মাতাদেহ পুরো দিনভর  

মা-ভাবে মেখেছে নারী দৈবের আতর!  

কূলে তার কেউ নেই, সন্তানই সব—

এদিক-ওদিক হলে ‘গেল, গেল’ রব।     

খেয়ে ফেলে কুরে ফেলে চিন্তার সে কীট

মায়ের পরানখানা ঝাঁঝরা ও পিঠ-

কোল-কাঁখ ভরে ওঠে, হাসলে 'বাজান'— 

দেবতার দান বুঝি! স্বর্গের আজান

পড়ে চলে মাতাঠোঁট, ক্ষুধার কাঙাল!

গপগপ ছেলে খায় আকাশ-পাতাল;

সব ফুঁড়ে তবু ওড়ে ‘মাতা, মাতা’ গান। 

মাতারূপে তানসেন অনঘসমান।।

 

 

 

ঝরেছে কামনাবারি, হৃদয়ের শ্লাঘা

মেখে যিনি বসে আছেন সহ্যের তাগা

হাতে তাঁর পরা থাকে পৃথিবীর ন্যায়!

দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণা আর আর্তির ব্যয়

সবশেষে ফুটে ওঠে রাঙা সে কমল!

রাঙা রাঙা দুটি ঠোঁট, অমল ধবল

গাত্রে ডুব দেয় হাঁস, ননীচোরা নদী!

মায়ের আহ্লাদ সুখ ভেসে যায়, যদি

তাহা বোঝো তুমি তবে সত্য পুত্র জেনো,

তোমার কাতর কন্ঠে মাতাবাদ্যি শুনো।

ঢং ঢং ঢ্যাং ঢ্যাং শতেক কাঁসর!

শিশুজন্মে ধন্যি হয় বেহুলাবাসর।

মুনিভাগ্যেও ঐ ভেলা, সনকাপুরাণ!

চাঁদস্নেহ সদাগর অনঘসমান।।

 

 


 

দর্শক বিপুল হোক, প্রলাপের সাদা 

ডান বাম বেয়ে গড়ে! রং গাদা গাদা

তবু লেগে আছে চারিপাশ জুড়ে যত

মামা মাসি রাশি হাসি দেখে নিক তত

দেখুক বা না দেখুক যায় আসে না তো

রঙের বাহার মিলে বাগানের মতো

ফুটে ওঠে ফুলে ফলে শিশুকন্ঠ জুড়ে

মাতাই দেখেন তাহা নিকটে অদূরে!

মাতাচক্ষে কত দৃশ্য হয় যে বুনন—

শিশুফুলে মউলোভী ভ্রমরের বন!

গুনগুন গান গায়, চোখে-ঠোঁটে ফেরে

মায়ের শরীর খুঁটে চাক তোলে ভরে।

মুনিও দেখেন তাহা, মাতা দয়াবান।

আশীর্বাদে ভরে রাখে অনঘসমান।।

 


 

সোহাগপুত্র অনন্ত দুগ্ধ টেনে চলে!

আলো বায়ু মাটি দেখে কত কথা বলে—

ভাষায় অক্ষর আছে; শব্দের বাঁধুনি

কন্ঠে তার নাই ধরা, আছে ছন্দখানি।

মা দেখে তানসেনের তানপুরা টান

আকাশের গা চুঁইয়ে ভূমে আনে বান!

এমন শব্দের বুলি তোতা হার মানে

ঠাকুমার ঝুলি ভরে রূপকথা আনে!

রাজা রানী রাজপুত্র— হোক সুধা হোক

রাক্ষুসীরও পেটে ঐ সুধার আলোক

মাখা থাক, মাখামাখি হোক সবখানে!

মুনি দেখে মাতৃহৃদি করুণার বানে

যায় ভেসে ছলছল কুটোসম প্রাণ।

কল কল বলে কথা অনঘসমান।।






শীর্ষা

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন