হেনরি লংফেলো
বঙ্গানুবাদ সপ্তর্ষি বর্ধন




এক ক্রীতদাসের স্বপ্ন


ছড়ানো ধানের স্তূপের পাশে সে পড়ে আছে ,
হাতে তার কাস্তে,
অনাবৃত বক্ষ, এলোমেলো চুল
বালিতে পতিত ।
আবার , তার ঘুমের আবছায়াতে
সে তার জন্মভূমিকে দেখল ।

তার স্বপ্নের পূর্ণ প্রেক্ষাপটে
রাজকীয় নাইজার নদী বয়ে চলেছে,
তাল গাছের নিচ দিয়ে
সে আরও একবার রাজার মতো চলেছে ,
আর শুনেছে পাহাড়ি পথ থেকে নেমে আসা
কাফেলার রিনিঝিনি শব্দ ।

সে আর একবার চাইল তার রাণী কালো চোখের দিকে,
সে দাড়িয়ে আছে সন্তানদের মাঝে ,
তার গলা জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খেল তারা ,
তার হাত দুটো চেপে ধরে রেখেছে তারা ! -
ঘুমন্ত চোখের কোণ বেয়ে জল
গড়িয়ে পড়ল বালিতে ।

আর তার পর দ্রুত গতিতে ঘোড়া ছুটিয়ে চলল
নাইজারের পার দিয়ে ,
তার লাগাম ছিল সোনার তৈরি ,
আর তাতে ঝনঝন শব্দ ,
সে যেন অনুভব করছে ইস্পাতের তরবারি
ঘোড়ার প্রতিটা লাফে তার গায়ে আঘাত করছে।

তার সামনে, রক্ত বর্ণ ধ্বজার মতো,
সেই উজ্জ্বল পাখিরা উড়ে গেল,
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তারা উড়ে চলল
সমভূমির উপর দিয়ে যেখানে তেতুল গাছ গজিয়েছে
যতক্ষণ পর্যন্ত সে দেখতে পেল আদিবাসী ঘরের চাল আর মহাসাগর ।

রাতে সে শুনতে পেল সিংহের গর্জন,
আর হায়নার চিৎকার ,
আর জলহস্তী, যখন সে কচুরিপানা পার করছে
কোন এক লুকোনো নদীতে,
আর এই সব কিছু তার স্বপ্নে
রাজকীয় ভাবে বেজে চলেছে ।

গাছেরা, তাদের অগনিত জিহ্বায়
চিৎকার করছে স্বাধীনতার কথা,
আর মরুভূমির তপ্ত বাতাসের
হিংস্র, মুক্ত কণ্ঠের চিৎকারে
সে ঘুমের মধ্যে চমকে ওঠে
আর তাদের হিংস্র আনন্দ দেখে হাসে ।

মালিকের বেতের বাড়ি বা রোদের তাপ
কিছুই সে অনুভব করতে পারেনি ,
কারণ মৃত্যুর আলোয় তখন ঘুমের জমি পূর্ণ,
আর পড়ে রইল তার প্রাণহীন দেহ -
একটা ছেঁড়া তার , আত্মা যা ছিঁড়ে ফেলে রেখে গেছে ।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন