...
উড়িয়ে নেবে বুদ্বুদ জোয়ার মুছে দেবে আমার পায়ের দাগ। কিন্তু সমুদ্র থাকবে। এই সমুদ্রতীর থাকবে।
....
স্তব্ধতার নদী থেকে যখন পান করো তুমি তখনই আসলে তুমি গান... চূড়ায় পৌঁছোনোর পরেই প্রকৃত আরোহণ শুরু হয় তোমার তোমার রক্তমাংসের জন্য যখন হাত বাড়িয়ে দেয় পৃথিবী তোমার প্রকৃত নাচ শুরু হয় তখন।
....
হাওয়া-মোরগ ভর্ৎসনা করে বাতাসকে: "কী ক্লান্তিকর ও বিরক্তিজনক তুমি! আমার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো রাস্তা নেই তোমার! কেন নষ্ট করছ আমার ঈশ্বরনির্দিষ্ট স্থিরতাকে?”
উত্তর দেয় না বাতাস। শুধু মহাশূন্যে তার হাসি বেজে যায়।
....
সূর্যোদয়ে নিজের দীর্ঘ ছায়ার দিকে তাকিয়ে শেয়াল বলল: "দুপুরের ভোজে আজ একটা উট চাই আমার।" সারা সকাল কেটে গেল উটের সন্ধানে। দুপুরে নিজের ছোট্ট ছায়াটির দিকে তাকিয়ে সে বলল: "একটা ইঁদুর পেলেও খারাপ হয় না অবশ্য।"
....
দুটো খাঁচা আছে বাগানে। একটায় থাকে নিনেভা থেকে আনা একটি সিংহ। আর অন্যটায় গান ভুলে যাওয়া একটি ময়না।
প্রতিদিন সূর্যোদয়ে ময়না সিংহকে বলে: "সুপ্রভাত, আমার বন্দি ভাই!"
....
এই বিস্ময়কর হ্রদে ঈশ্বর যেদিন ছোট্ট পাথর ছুড়ে দিলেন আমাকে আমি সেই পাথর ভরিয়ে তুললাম অগণিত বৃত্তে আর রেখায়। কিন্তু অনেক গভীরে ডুবে গেলাম যখন সব চঞ্চলতা হারিয়ে গেল আমার।
....
গারদ হিসাবে জায়গাটা হয়তো খারাপ নয়, কিন্তু আমার আর পাশের বন্দির মধ্যে এই দেয়াল আমার ভালো লাগেনি।
তবে এটাও বলি যে আমি কিন্তু কোনোভাবেই নিন্দে করছি না ওয়ার্ডারের। এই গারদ যে বানিয়েছে তারও নয়।
....
কাকতাড়ুয়াকে একদিন বলেছিলাম, “একটা মাঠে সারাজীবন দাঁড়িয়ে থাকতে তোমার নিশ্চয়ই খারাপ লাগে, ক্লান্ত লাগে।"
হেসে বলল সে, "অন্যকে ভয় দেখানোর আনন্দ তুমি হয়তো জানো না। আমি উপভোগ করি আমার অস্তিত্ব।"
একটু ভেবে বললাম, "এই তৃপ্তি হয়তো মাঝে মাঝে পেয়েছি আমিও।” হাসল সে, "পাওনি। যারা শুধু খড়ে ঠাসা এই তৃপ্তি কেবল তাদের।" আমাকে তাচ্ছিল্য না প্রশংসা করছে সে, স্পষ্ট হল না। সরে গেলাম।
একবছর পর আবার যখন দেখলাম সেই কাকতাড়ুয়াকে, সে তখন দার্শনিক হয়ে গেছে। দুটো কাক তার টুপির ওপর বসে ঠোকরাচ্ছে।
....
মাঝে মাঝে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসেন দেবদূত আর শয়তান। দেবদূত এলে পুরোনো একঘেয়ে একটা প্রার্থনা-সংগীত গাই, যাতে তিনি বিরক্ত হয়ে চলে যান।
আর যখন শয়তান আসে আমি খুব প্রচলিত আর পুরোনো একটা অপরাধ করার চেষ্টা করি। বিরক্ত মুখে চলে যায় শয়তানও।
....
একজন প্রাচুর্যে থাকা মানুষ আর-একজন সর্বস্বান্তের মধ্যে পার্থক্য শুধু একদিনের অনাহার বা কয়েকঘণ্টা তৃষ্ণার।
....
এমনকী জীবনের মুখোশও একইরকম গভীর, রহস্যময়।
....
করুণা আসলে অর্ধেক বিচার।
....
মায়ের হৃদয়ে স্তব্ধ হয়ে থাকে যে-গান, শিশুর ঠোঁটে সুর হয়ে আসে সে।
কাহলিল জিব্রান
নিউইয়র্কে মৃত্যু হয় তাঁর। তাঁর প্রথম দিকের লেখা আরবি ভাষায়। লেখাগুলিকে আধুনিক আরবি সাহিত্যের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিঁড়ি মনে করা হয়। ১৯১৮ থেকে জিব্রান ইংরেজিতে লিখতে শুরু করেন এবং ১৯২০-১৯৩০ দশকের কাব্যভাষায় যে-বিপুল আলোড়ন এসেছিল তা মূলত তাঁর প্রভাবেই।
দুর্দান্ত কাজ! মনে করাল অনেক আলোচনা !
উত্তরমুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন