হান কাঙ



     দক্ষিন কোরিয়াবাসী লেখিকা হান কাং এই বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের জন্য সাহিত্যে নোবেল

পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। সাহিত্যকৃতির জন্য তিনিই প্রথম এশীয় মহিলা হিসাবে এই সম্মান অর্জন করলেন।কাব্যিক গদ্যরীতি-র জন্য মানপত্রে বলা হয়েছে intense poetic prose that confronts historical traumas and exposes the fragility of human life”
২৭শে নভেম্বর ১৯৭০-য়ে সাউথ কোরিয়ার গোয়াংজুতে জন্মগ্রহণকারী শ্রীমতী হান এখন সিউল শহরের অধিবাসী।  ১৯৯৩ নাগাদ কবি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করলেও বর্তমানে নভেল ও ছোটগল্পই তাঁর প্রিয় বিচরণ-ক্ষেত্র। বলা হয় যে 
তার রচনায়, তিনি চর্চিত ও  পরীক্ষিত ঐতিহাসিক আঘাত এবং নিয়মের অদৃশ্য সেটের মুখোমুখি হন এবং তার প্রতিটি কাজে মানব জীবনের ভঙ্গুরতা প্রকাশ করেন। দেহ এবং আত্মা, জীবিত এবং মৃতের মধ্যে সংযোগ সম্পর্কে তার একটি অনন্য সচেতনতা রয়েছে এবং তার কাব্যিক এবং পরীক্ষামূলক শৈলীতে সমসাময়িক গদ্যের একটি উদ্ভাবক হয়ে উঠেছে।












চাঁদপানা চালের পিঠে
হান কাঙ
                                                     
প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় 


      গত বসন্তে,একটি রেডিও সাক্ষাৎকারে কেউ আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল যে—ছোটোবেলায়
 
আমাকে দুঃখিত করেছিল খুব— সেরকম কোনো বিশেষ স্মৃতি-অভিজ্ঞতা আমার আছে কিনা?" 
প্রশ্নটির মুখোমুখি হয়ে, সেই মৃত্যুর কথাটাই  আমার মনে পড়েছিল। সেই কাহিনীটাকে মনের ভিতর পুষেই তো বড় হয়েছি যে। কমবয়সী সমস্ত প্রাণীদের মধ্যে সবথেকে অসহায়। চাঁদপানা মিষ্টি একটা শিশু—চালের পিঠার মতো সাদা। ঐ  মৃত্যুকূপে আমি কীভাবে জন্মালাম, বেড়ে উঠলাম!চাঁদেল ফুটফুটে সাদা ভাবটার তো কিছুই ফুটে ওঠেনি ছ-বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত—চুসেওকের  জন্য অর্ধচন্দ্রাকৃতি চালের পিঠে তৈরির গোলা বানানোয় হাত লাগানোর জন্য আমি তখন যথেষ্ট বড়ো হয়ে গেছি। ভাপানোর আগে, চালগুঁড়োর সেই উজ্জ্বল গোলক বা লাছিগুলোকে অপার্থিব, ভিন্‌জগতের খুব সুন্দর জিনিস মনে হতো। পরে, একটি রেকাবিতে—ছুঁচালো পাইন-পাতা সহযোগে সাজিয়ে দিলে তারা যেন অতি-সাধারণ এক বস্তুবিশেষে বদলে যেত। হতাশাজনকভাবে নীরস সাধারণত্বে রূপান্তরিত হয়ে ভাজা তিল-তেলে ঝলসে-সেঁকে নেওয়া ঝকঝকে রং আর বুনটের ভাপ ও বাষ্পের কারণে— তারা সুস্বাদু ছিল বটে, তবুও যেন সম্পূর্ণরূপে  আগের সেই সৌন্দর্যটাই গায়েব হয়ে গ্যাছে, অবশ্যই। তাই যখন আমার মা বলেছিলেন  যে চালের পিঠার মতো  সাদা—তখন আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে তিনি ভাপানোর আগে একটি চালের পিঠার— সেই অপাপবিদ্ধ আদিম মুখচ্ছবির —কথাটাই বোঝাতে চেয়েছিলেন। এই ভাবনাচিন্তাগুলো আমার বুককে কেমন কুঁকড়ে-দুমড়ে ইস্পাতকঠিন, ভারাক্রান্ত করে তোলে।
  
গত বসন্তে, রেকর্ডিং স্টুডিওতে, আমি এসবের  কোনওকিছুই উল্লেখ করিনি। তার বদলে বরং আমার পোষা যে কুকুরটি আমার  পাঁচবছর বয়সে—মারা গেছে—তার কথা বলেছিলাম। একটি অস্বাভাবিকরকম বুদ্ধিমান বর্ণসঙ্কর কুকুর ছিল সে, কিন্তু বিখ্যাত জিন্দো-বংশীয় মিশ্রজাতের। আমার কাছে এখনও আমাদের দুজনের একটি সাদাকালো ছবি আছে, অন্তরঙ্গ মুহূর্তের একটি অকপট শট, কিন্তু, আশ্চর্যজনকভাবে, আমি তাকে জীবিত মনে করতে পারি না। আমার একটি প্রাণবন্ত স্মৃতি হল সকালের দিকে সে যখন মারা যায়। পশম-কোমল সাদা লোম, কালো চোখ, তখনও ভেজা নাক। তারপর থেকে কুকুরের প্রতি কেমন এক বিতৃষ্ণা তৈরি হয়েছে আর আজও তা অব্যাহত। নরম পশম এলোমেলো করে দেওয়ার চেয়ে আমার হাত এখন আমার শরীরেই সেঁটে থাকে। 


প্রতিবিম্বিত শীত—আয়নায়
তীক্ষ্ণ নজর দিও বহ্নিশিখার ওই চোখের তারাটিতে 

নীলাভ 
হৃৎপিণ্ডের 
আদল নেওয়া চোখ
ধকধকে প্রোজ্জ্বল উত্তপ্ত বস্তুটি  
ঘিরে রেখেছে অন্তরমহলের 
দপ্‌দপে কমলা অগ্নিশিখা 
স্বচ্ছ আর অর্ধস্ফূট 
বর্হিজ্বলন  
আগামীকাল ভোরে, যখন 
সবচেয়ে দূরবর্তী শহরটার দিকে পা বাড়াই আমি
আজ ভোরে
বহ্নিশিখার নীলাভ রশ্মি 
চেয়েই থাকে– আমার চোখের আরো গভীর অন্দরমহলে   

২.
বসন্তের সকাল এখন আমার শহরে, যদি তুমি পৃথিবীর অন্তঃস্থলে সিধোও, এদিক–ওদিক না করে ঠিক মাঝবরাবর খুঁড়ে এগিয়ে যাও, তবে সেই শহরটি দেখা যায়— সময়ের দিক থেকে যেটি ঠিক বারো ঘন্টা পিছিয়ে রয়েছে আর ঋতু-র হিসাবে অর্ধবছর পিছনে— তাই সেই শহরটিতে এখন একটি শরতের সন্ধ্যা, যেন নিঃশব্দ অনুসরণকারীর মতো সেই শহরটি আমার পিছু পিছু চলে, রাতটি পার হওয়ার জন্য, শীতকে অতিক্রম করার জন্য নীরবে অপেক্ষা করি আমি— [ আর] আমার শহরটি তখন ওই শহরটিকে পিছনে ফেলে নীরবে এগিয়ে যায়। 


৩.
শীত অপেক্ষমাণ–আয়নার ভিতরে
বরফিলা হিমশীতল 
জবরদস্ত ঠাণ্ডা 
অসহ ভীষণ, কনকনে  
শিহরিত হতে পারে না জিনিসপত্র
একদা (ঠাণ্ডায় জমে যাওয়া) তোমার মুখ 
বিদীর্ণ হতে পারে না 
হাত বাড়িয়ে দিইনি
তুমিও
হাত বাড়াওনি
হিমার্ত এলাকা, সবসময়ের জন্যই 

হেলদোলহীন— চোখের তারা দুটো
চোখের পাতা 
জানেই না কীভাবে বন্ধ করতে হয়, একসাথে
আয়নার ভিতরে
অপেক্ষমাণ শীত
চোখটি এড়াতে পারিনা তোমার—কিছুতেই আর
তুমিও চাওনা বাড়িয়ে ধরো হাত। 


৪.
সারাটা দিন কেবল উড়তেই থাকবে—তারা বলেছিল 
চব্বিশ ঘন্টাকে আষ্টেপৃষ্ঠে চটাপট বেঁধে
মুখের ভিতরে পুরে আয়নার ভেতরে ঢুকে পড়বে 
যন্মাত্র আমি সেই শহরের একটি ঘরে প্যাঁটরা খুলছি 
মুখ ধোয়ার জন্য আমার সময় নেওয়া উচিত। 


এই শহরের দুঃখদুর্দশা যদি নীরবে ছাপিয়ে যায় 
নিঃশব্দে পিছিয়ে পড়ব আমি নিঃসন্দেহে আর 
তুমি যখন মুহুর্তের জন্যও 
এটির দিকে ফিরেও তাকাবে না 
আয়নার বরফিলা পিছনের দিকে 
শরীর এলিয়ে, অগোছালোভাবে গুনগুন করতেই থাকো 

যতক্ষণ না পর্যন্ত, খরখরে জিভে নেড়েচেড়ে 
শক্তভাবে ভাঁজ করা চব্বিশটি ঘন্টা 
থুক করে ফেলে দাও আর   
ফিরে আসো তুমি, আমার দিকে তাকাও


৫. 
পলতেটা দগ্ধে-ঝলসে ফোঁটা ফোঁটায় টুপটুপিয়ে ঝরে পরা মোমবাতির গলিত মোমের মতন আমার চোখ দুটো—ছেঁকাও দেয় না, বেদনাদায়কও নয়— ওরা বলে যে ওই যে নীলাভ শিখাটা কেঁপে কেঁপে জ্বলতে থাকে [তা আদতে] আত্মার হাজিরা দেওয়া, আত্মাই শিহরিত হচ্ছে আমার চোখের উপর বসে, গুনগুন করছে, সামান্য দূরত্বে বাইরের দিকে আরও দূরে যাওয়ার জন্য যে শিখাটি দুলছে, আগামীকাল সবচেয়ে দূরবর্তী শহরের দিকে রওনা হবে তুমি, আর আমি পুড়ছি এখানে, শূন্যতার সমাধিতে হাত রেখে অপেক্ষা কর তুমি এখন, স্মৃতি— সাপের মতো তোমার আঙুলে দংশায়—ক্ষতবিক্ষত হও না তুমি, অসাড়ও নও ব্যথায়—ঝলসে যায় না বা ভেঙে টুকরো–টুকরো হয় না তোমার অবিচলিত মুখ।    



কুয়াশা 
প্রতিনিয়ত কেন ভুসভুসায়–পুরোনো স্মৃতিগুলো— এই অচেনা শহরে?   

রাস্তায় বের হলে, আমাকে পাশ কাটিয়ে যায়,লোকজনের কথাবার্তার টুকিটাকি্‌,
প্রায় সবটুকুই—
পথ কিংবা দোকানের চিহ্নগুলিতে সাঁটানো অ-বোধগম্য শব্দাক্ষর। 
আমি আর আমার অবিচ্ছেদ্য মাতৃভাষা– মাঝে মাঝে 
শরীরকে মনে হয় একটি জেলখানা,
এই যে বেঁচে থাকা—
জাল বুনে চলা একটি নিরেট চলমান দ্বীপ—ভিড়ের ভিতর—
আমারই সমস্ত স্মৃতি বহনকারী একটি অবরুদ্ধ ঘর।

যত বেশিই শক্তপোক্ত হোক বিচ্ছিন্নতা,
যদি আরো বেশি সুস্পষ্ট হয় অনাকাংক্ষিত এইসব টুকরোটাকরা,
তত বেশি অত্যাচারী তাদের ভর—
যাতে মনে হয় যে জায়গাটিতে আমি পালিয়ে এসেছি –
এ তো সেই স্থান নয় 
পৃথিবীর অন্য কোনো প্রান্তের এক শহর—
বরং, এ আমার নিজেরই অভ্যন্তর।

কুয়াশা-আবৃত, কাকভোরের শহর। 
ঘষটে তুলে ফেলা হয়েছে আকাশ ও পৃথিবীর সীমানা। আঁকাবাকা 
রাস্তাটি যেখানে ঢাকা পড়েছে কালি-লেপা প্রান্তরেখায়—
সেই চার কিংবা পাঁচমিটার ওপরে দুটি পপলারের ঝাপসা আবছায়াই 
একমাত্র দৃশ্য আমার জানালার; বাকি সব সাদা। 
কিন্তু আমরা কি সত্যিই এটাকে সাদা বলতে পারি?  
কালো অন্ধকারের সপ্‌সপে বুনটে গড়া 
প্রতিটি শীতল জলকণার সুবিশাল নৈঃশব্দ্যই তো 
তরঙ্গায়িত পৃথিবী আর তার ভিন্‌-জগৎ।   

বহুদিন আগের এক দ্বীপে, এইরকমই 
ঘন-কুয়াশামন্দ্রিত সকালের কথা মনে পড়ে। 
দলের অন্যদের সাথে 
একটি পাহাড়ী পাকদণ্ডিতে  হাঁটছি। অস্তিত্বের ভিতরে 
এবং বাইরে ঝিকমিক করছে পাইন গাছগুলো। 
ছাইয়ের উঁচু পাহাড়-চূড়া। 
ঘন সামুদ্রিক কুয়াশার নীচে অপসৃয়মাণ 
কালো জলের দিকে তাকিয়ে 
আমার সঙ্গীদের মাথার পিছনের অংশগুলোকে মনে হয়েছিল
ভয়ঙ্কররকম ফাঁকা আর ধারালো কোণবিশিষ্ট 
কিন্তু পরের দিন বিকেলে আবার যখন হাঁটলাম 
তখন সেই একই পথ কীরকমই না এক 
সাধারণ দৃশ্য টাঙাল। আমি যাকে রহস্যময় জলাভূমি ভেবেছিলাম 
তা আদতে এক বিশুষ্ক ধুলো জমে থাকা ডোবা। 
ঝট্‌-নজরে অপার্থিব মনে হওয়া পাইন গাছগুলোয় 
বিস্তৃত কাঁটাতারে বেড়া। সমুদ্রের গভীর নীলে—
ট্যুরিস্ট পোস্টকার্ডের চাকচিক্য। শ্বাসরুদ্ধ কীরকম,
সবকিছুই—ফিরে এসেছে নিজস্ব সীমান্তের আবর্তে,
রুদ্ধ নিঃশ্বাসে অপেক্ষমাণ-কুয়াশার আশায় ।   

শহরের নিঃস্বর ভূতেরাই বা কি করে, কাকভোরে? 
হাঁটতে  বেরিয়ে পড়ে কি অপেক্ষমাণ কুয়াশা চিরে? 
তারা কি একে অপরকে অভিবাদন জানায়, 
জলকণার মধ্যবর্তী ফাঁক দিয়ে চল্‌কে—অশ্রুত কণ্ঠস্বরে? 

নিজস্ব মাতৃভাষায়,
যার অর্থ আমাকে কৌশলে এড়িয়ে যায়। নাকি 
বিনা বাক্যব্যয়ে তারা শুধুই মাথা নাড়ায়?

---------*‘ হোয়াইট বুক’ বই থেকে অনুবাদিত। ‘fog’ শিরোনামে— গদ্যাকারে রয়েছে ঐ বইতে। মনে হয়েছে এ তো পিওর কবিতা। তাই কবিতাকারে সাজিয়েছি! ধৃষ্টতা মার্জনীয়!) 



সাদা শহর
1945 সালের বসন্তে একটি মার্কিন সামরিক বিমানের তোলা এই শহরের কিছু ফুটেজ দেখেছি। শহরের পূর্বদিকে অবস্থিত মেমোরিয়াল হলের প্রথম তলার প্রজেকশন রুমে ছবিটি দেখানো  হয়।সাবটাইটেলে বলা হয়েছিল যে 1944 সালের অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে ছয় মাসের মধ্যে শহরের 95 শতাংশ অস্তিত্ব মুছে ফেলা হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায় যে এ হল সেই শহর,যার বাসিন্দারা নাৎসিদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জানায় এবং জার্মান সৈন্যদের যেখান থেকে বিতাড়নের পরে 1944 সালের সেপ্টেম্বরে মাসখানেকের মতন এক বেসামরিক সরকার গঠিত হয়েছিল—তাই এটিকে অস্তিত্ব থেকে ছেঁটে ফেলার জন্য প্রয়োজনীয় যে কোনও উপায় ব্যবহার করার জন্য হিটলারের এমন সিদ্ধান্ত। 
ছবিটির শুরুতেই,অনেক উপরে থেকে দেখানোর কারণে শহরটিকে তুষারাবৃত মনে হয়েছিল। তুষার বা বরফের একটি ধূসর-সাদা চাদরের ওপর হালকা কালিঝুলির ছোপ লেগেছিল।বিমানটি উচ্চতা কম করতেই শহরের চেহারাটি তীক্ষ্ণ হয়েছে। কোনো তুষারের আচ্ছাদন নয় ম্লানতাময় বরফও নয়। বাড়িগুলোকে গুঁড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে,আক্ষরিক অর্থেই ছিন্নভিন্ন।যতটুক নজরে পড়ে— আগুনের ছোঁয়া লেগেছিল যেখনেই— পাথরের ধবংসাবশেষের সাদা বর্ণাভায়, সেখানেই, যতদূর চোখ যায় কালোর আভাস দেখা যাচ্ছে। 
বাসে চড়ে ফ্ল্যাটে ফিরে যাওয়ার পথে একটা পার্কের কাছে নেবে পড়লাম। শুনেছিলাম সেখানে নাকি অনেক পুরনো একটা দুর্গ রয়েছে। বনবাদাড় গজিয়ে ওঠা মাঠ দিয়ে কিছুক্ষণ হাঁটার পরে আমি একটি পুরানো হাসপাতালের কাছে পৌঁছলাম। ১৯৪৪ সালের বিমান হামলায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া একখানা বাড়ি অবিকল পুনর্গঠিত হয়ে পুনরায় হাসপাতাল হয়ে ওঠার বদলে বরং একটি আর্ট গ্যালারি হিসেবে ব্যবহৃত হতে শুরু করল। গাছের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সহযোগে বানানো খিলানের সরু পথরেখা ধরে যেতে যেতে পাখিদের উচ্চৈঃস্বরে গান আমাকে স্কাইলার্কের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল, মনে হয়েছিল যে এইসব গাছ আর পাখি, পথ আর রাস্তা, বাড়িঘর আর ট্রাম, আর সমস্ত লোকজন— সবকিছুই এক সময় মারা গিয়েছিল।
সত্তর বছরের বেশি পুরনো এই শহরে কিছুই টেঁকে না। পুরানো কোয়ার্টারের দুর্গ, চমৎকার প্রাসাদ, শহরের উপকণ্ঠেই হ্রদের কিনারায় রাজন্যবর্গের গ্রীষ্মাবকাশ কাটানো—সবকিছুই অলীক। আলোকচিত্র, ছবি আর মানচিত্রের ভিত্তিতে যত্নসহকারে আর শ্রমসাধ্যভাবে পুনর্গঠিত সেগুলি সব নতুন জিনিস—রক্ষা পেয়েছে, সম্ভবত, একটি স্তম্ভ কিংবা একটি প্রাচীরের নীচের অংশ—নতুন কাঠামোতে [যা] অন্তর্ভুক্ত। পুরাতন থেকে নতুনকে আলাদা করে ফেলা সীমানাগুলির জোড় [কিন্তু] সুস্পষ্টভাবে উন্মোচিত সেই ধ্বংসের সাক্ষ্য বহন করে।
সেইদিন, পার্কের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময়, সর্বপ্রথম তার কথা আমার মনে পড়েছিল।একজন ব্যক্তি—যার অদৃষ্ট সেই শহরের মতন একইরকমের ছিল অথবা সেই মানুষটি যিনি যত্নসহকারে পুড়ে যাওয়া ধ্বংসস্তূপের ওপরেই তাদের পুননির্মাণ করেছিলেন, বিনাশপ্রাপ্ত হন।প্রাসাদের উপরিভাগে ত্রিকোণাত্মক কিছু ভাঙা অংশ টিকে থাকার পর, একটি অদ্ভুত নক্‌শার মতো মনে হয় কোনটাই বা নতুন কিছু—পুরানো থেকে ভিন্ন কিছু—নতুনত্ব।
                                                    




Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন