পালক সময় ফিরে যায়

গাছের পাতায় পাতায় অন্ধকার নামে,বসফরাসের কালো জলের গভীর মগ্নতা নিয়ে। শরতের একটা সকাল, শিশুদের ধর্মপাঠের আহ্বান, মক্তবের সামনে সবুজ গালিচা,অশ্বত্থের রক্তকোমল বীজ, সব যেন পর্দায় জেগে ওঠা গাভীর নরম ওলানের কোমলতা। কিশোরীর কৌতূহলী মুখের অস্ফুট ছায়া, শিশিরের জলে শিউলির সম্ভাষণে প্রমত্ত। মেঘের সাথে ভোর আসে নিস্তব্ধ জাগরণে, শেফালির গান আর ঘ্রাণ রাতের পর্দা ফুঁড়ে উড়ন্ত। ভূদৃশ্যের নস্টালজিক বাতাস শূন্য প্রান্তরে উড়ে এসে উগরে দেয় চল্লিশ বছর। বাতাবিলেবু তলের আয়ুস্কাল কখনো আর পিছনে তাকায় না। কখন, কীভাবে প্রশ্নপত্র তৈরি হয়  সময়ের স্বর্ণকলমে, অজান্তে ব্যস্ততায় আমাদের দিকে হেসে হেসে। বাবলা বন, বাঁশঝাড়ের তলে হেঁটে চলা আবছা আঁধার, উঁচু ঢিবির উপর পূর্বপুরুষের ভেঙে পড়া সমাধি সমীহ জাগায় ভবিষ্যতের ইঙ্গিতে। ঊষাবিন্দু জলসিন্ধুর স্তরে স্তরে নির্মাণ করে মধ্যদুপুর থেকে গোধূলিগন্ধা অবসর। অকর্ষিত মৃত্তিকায় দোলা লাগে জৈব ভাঙার নির্ভার আনন্দে। দূরে...দূরে... সরে যায় শিউলির অবয়ব,স্মিত হাসি চোখের পাপড়িতে আঁকে ঘুম কালের ঘোরে আমার ও তার।

 



আমাদের অন্তর্দাহ

প্রতাপের তাপে ঝলসে ওঠে কালো পিচঢালা পথ। পাখিদের পালক ছেয়ে গেছে কুয়াশার রঙে। জাফরানি গোলাপে সেঁকো বিষের দুরন্ত থাবা; ঘোড়ার খুরে এক অবিনাশী মহামারি আটকে আছে বছরকে বছর। বিপ্লবী বাঁধন আলগা হয়ে গাঁজানো খাদ্যে বুঁদ হয়ে আছে। মাঠের পর মাঠ আমাদের ভালোবাসা নিমগ্ন আধ্যাত্মিকতায় কিংবা ফুরিয়ে যাবার ভাবনার মাথা গুঁজে বিবশ। প্রশ্নের পাহাড় নুয়ে আছে দিগন্তে ; স্বপ্নপিয়াসী সর্ষের সুবাসিত পাপড়ির কোমল করাঘাত তার বুকে তোলে না শিহরিত জাগরণ। আমরা মুখোমুখি অপেক্ষায় আছি কতো শতাব্দী, কাল ফুরিয়ে যায়, কাল আসে আমদের পরিধি সংকুচিত হয়, কমতে থাকা ব্যাসার্ধের উপর দাঁড়িয়ে থাকে আমাদের চেতনার রঙ। এক অনন্ত আগ্রহ আমাদের বাঁচিয়ে রাখে ছোট হয়ে আসা বৃত্তে। তোমার দৃষ্টি বিভ্রম দেখে নেয় অনালোকিত এক দৃশ্যলোক। নির্ভেজাল মোহ থেকে আমরা সরতে পারি না বহুদূর। আমাদের কামনা কুরে খায় আমাদের করোটি।

 

হুজুন কাব্য

নিমিত্তে রচিত হয় কোন যুক্তি তবু চারিদিকে ধোঁয়াশা মাখা শান্তি। শুধু 'নেই' বলেই শূন্যের বুকে মিলায় জনজীবন। ওরা আনন্দ খোঁজে বিভ্রমে। শতায়ু জীবন ঠকঠক হেঁটে চলে ঝড়ে উড়ে যাওয়া পাকুড় পাতা।'হুজুন' কাব্যময় হয়ে উঠে ভেজা মাটি থেকে প্রতিফলিত রোদে। পলাতক ছায়া আর রোদের দোলাচলে ঘুরতে থাকে পাতার জীবন,যেমন বিষম কামনা লেপ্টে রাখে শয্যার চারপাশ। অদৃশ্য আনন্দ নামিয়ে দেয় চর্মপর্দা; ক্ষণিক বৈভবে। শ্রুত হতে হতে মাঠের সঙ্গীত থেমে গিয়ে কলরব ওঠে জলজঙ্গমে।অ্যাক্রোস্টিক কবিতায় শব্দরা হেসে ওঠে দ্যুতিহীন শক্তিতে। ঢেউয়ের তরঙ্গে ভেঙে আসা ক্ষয়িষ্ণু পাড়ে জড়ো হয় সিনোসাইটিক ফোস্কা। ব্যথার বর্ণালী ছড়িয়ে পড়ে সূর্ষের খেরো খাতায়।

 



রঙিন ঝিনুকে অ্যালকোহল

পুরোনো বাকল খসিয়ে দিয়ে বৃক্ষসমারোহ কেমন নীরবে দাঁড়িয়ে থাকে। অপেক্ষায়, শোকে মুহ্যমান নাকি আতঙ্কিত  ঠিক বুঝে ওঠার আগেই কেপটাউনের সমুদ্র সৈকতে একদল বন্দি শৈবাল সংগ্রহ করতে থাকে। চুনাপাথরের খনিতে অতিবেগুনিরশ্মির ঝলকে ওঠা শ্বেতশুভ্র দিকভ্রান্ত অদৃশ্যালোক চিফ লুথুলির নিউরনকে আহত করে। বন্দিরা তখন রঙিন ঝিনুক আর ভেসে আসা অ্যালকোহলে নিজেদের অলঙ্ঘনীয় সীমানাকে বাড়িয়ে নিচ্ছিল। বৃক্ষসমারোহের নিস্তরঙ্গ স্থৈতি ভেঙে শাবল আর কুঠার হাতে উদ্ধত, হিংস্র পরাভূত, সন্ধ্যার সঙ্গীতে গলা ভিজিয়ে হত্যার কার্নিভালে মেতে ওঠে। আমার ভীষণ বাইরে যেতে ইচ্ছে করে। মুহ্যমান বৃক্ষের কাছে, রঙিন ঝিনুকের কাছে, এলিয়ট আর নেরুদার কবিতায় অঙ্কিত চিত্রকল্পের কাছে। আমি ঘর ছেড়ে বের হতে পারি না ওয়াকওয়েতে জমে থাকা সুযোগসন্ধানী বর্ষার জড়ো করা পূতিগন্ধময় পললের জন্য। কলাগাছের চওড়া পাতার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখি ভোর হতেই যা আমাকে একটু উষ্ণতা দেয়।

 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন