পাগলে পাগলে কাজিয়া নাই
সাঁই

আচমকা ভগেবাঁশিকে সামনে পেয়ে
মনটা কেমন আমোদে ভরে গেল।

আপ্পা সকাল, পাল্লা দিয়ে শীত,
 ভিজে কড়িয়ে যাচ্ছে পথের দুধার,অথচ ভগেকে দেখছি থোড়াই কেয়ার.....
জঘন্য বাঁসটে একটা সয়েটার তার গায়ে 
হাঁটু পর্যন্ত ঝোলা....
 কিন্তু হাঁটছে খলবল করে!

শুধু  হাত দুটো তার এতটাই থির
মনে হবে 
হাঁটা ছাড়া মানুষটার বাঁচার আর কোন পথ নেই!

ডাকলাম! 
ও ভোগে দা,এই সকালেই বড় ব্যস্ত দেখছি
চা খেয়ে যাও,এসো!

মানুষটা ফড়কে ফড়কে হাঁটছিল,এবার, হুট করে থেমে 
একদম সরাসরি তাকাল আমার দোকানের দিকে!

 আর আমি যে আদতে হাতুড়ে ডাক্তার, সেটা মুখের ওপর বলে
বললঃ
হাতুড়ের বেরাম হয়েছ্ দেখছি,এর ওষুধ ত
আমার জানা নেই হোসেন!!
তুমি ফাজলামী অন্য জাগায় মারাও গে যাও!

... ও ভগেদা,রাগ করলে?
 আমি ফাজলামী করছি নে,আসো,দুজন মিলে চা খাই,দেখছ না কেমন জাড় পড়েছে!

শুনে, 
খার আরো  খেল ভগেবাঁশি!

এবার রেগে একেবারে  টঙ হয়ে, আমাকে আরো বোকা বানিয়ে তেড়ে এল সে!
বলল
...... চুদনা বলে ডাকো  শোরের বাচ্ছা বলে ডাকো ---শোনবো,কিন্তু দাদা বলে ডাকলি
খবর আছে কলাম! -----প্রধানের দিয়ে  ----এমন কেলান---- খাওয়াব,কার নাম বাবাজী,টের পাবা!

সত্যি বলতে
ভগেবাঁশি এমন ট্যাঁকখোরে মানুষ,জানা ছিল না!

আমাকে কিনা বলছে অঞ্চল প্রধানকে দিয়ে মার খাওয়াবে!

এদিকে নিজে
 দেশসুদ্ধু লোকের ঝেঁটা লাথি কি না খায়....!

এলাকার মানুষ হয়ে কে না তাকে দূর্ছাই করে!
শুনি ত সব!!

জগন্নাথপুরে ত শুনি সে ঢুকতেই পারে না ঈদে গোস্ত খায় বলে!
বল্লভপুরে ত গেলবার ক্লাবের ছেলেরা তাকে ধরে
ওরে 
  চুবানি দিল মরালীর ঠান্ডা জলে!!

-----কালীমন্দিরে বসে
 " যদি তরিতে চাও 
মুখে আল্লাহ রসুল বল মন..."....... গান ধরেছিল বলে!

তার গান না শুনি,গানের গল্প হাঁটুরেদের মুখে ত খুব শুনি!
ইতিমধ্যে
 আরেকটা কথাও খুব কানে এসেছে!
ভগে নাকি
 কোথার থেকে এক মেয়েমানুষ ধরে এনেছিল ঘরে!সেই
মানুষটা নাকি ঘুমের ঘোরে  কেঁদে ওঠত রক্কে করো ঠাকুর বলে বলে----সেটা দশকান হল!

এমন মানুষ ভগেবাঁশি নয়, যে,মেয়েমানুষ পুষবে!

আবার 
তার চেহারায় সুরোতে এমন বেঘিন্নে দশা,যে,মেয়েমানুষ ভালবাসবে,তাও সম্ভব নয়!

পাকড়াও করল অধন্য সরকার!
দিল মেয়েমানুষটাকে পুলিশের হাতে তুলে!

আর
 ভগেকে এমন ধামকি দিল এলাকার উঠতি ও পড়তি অতিভক্ত ভিড়ের এক দল,যে, যে,দিন পনের হল সে নিজের ঘরেই  ঢুকছে রাত গভীর করে করে ,
তাও,
প্রাণটুকু হাতে নিয়ে,চোরের মত!

এই কড়া পৌষ,বিলের জল তাই পরাণ পর্যন্ত ঠকঠক করে কাঁপছে...

আর ভগের ত মানুষেরই প্রাণ,কি করে যে রাত কাবার করছে কে জানে!

তার যে ঘর ছিল,তাও শুনলাম পিকনিক পার্টির মানুষজন হেগে মুতে
নরক করে থুয়ে গিয়েছে!

ভেবাচেকা খেলাম একটু! 
ভগেবাঁশি এবার আমার দোকানে এসে বসল,আর মিনতি করার ভঙ্গিতে বলল
.....আমারে বলবা ভোগে হারামী!নয়ত,ভোগে ওলাওটো
বলে ডাকবা,জুত পাবা,বুজিছো!

এটা অভিমান না নালিশ বুঝলাম না!

মানুষকে সে ত তার বাঁচা দিয়ে চিনেছে,আমি আর কথা বাড়ালাম না!
চায়ের দোকানে গিয়ে দুটো চা দুটো গাবদা গাবদা বিসকুট আর আরেকটা বাশি পাওরুটি এনে সামনে দিয়ে বললাম খাও।
এইজন্যেই ডেকেছিলাম,জানো!
তোমার নাম ত শুনি,কিন্তু ধরা পাইনে,আজ দোকানের সামনে দিয়ে যেতে দেখে তাই আর 
না ডেকে পারলাম না...,!
বিসকুট দিয়ে চা খেল ভগেদা,মুখটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে খেল
 কত না লুকিয়ে, কত না লজ্জায় সে খায়!চোখে পড়তে সে বলল
....জানো হোসেন,কোনদিন আমি মরেই যাব এই খাওয়ার লোভে!
এবার সুযোগ হল কথা বলার।বললাম,মরবা কেন
সবাই বাঁচে,তুমিও বাঁচবা,ভগেদা!
.... আবার! 
ভগেদা বলায় ভগেদা তড়াক করে উঠে দাঁড়াল,তাও বিসকুট দুটো বগলদাবা করে,দেখে আমার কেমন হাসি পেল।
আচ্ছা  বলেন তো,তার ঐ এঁটো করা বিসকুট
তাতে
 সারা গায়ে- মুখে তার ঐ সয়েটারে কেমন গুগু দুর্গন্ধ.... 
,,যদি সে  ঐ বিসকুট কটা  আমাকে দেয়ও,আমি কি নিতে পারব!দিতে পারব মুখে!
আমার কাচুমুচু মুখ দেখে তার বোধয় দয়া হল একটু!
বলল, সবাই খেয়ে বাঁচবে না, বুজেছ হোসেন,কেউ কেউ না খেয়েও মরবে,নৈলে সুমসার অটল থাকবে
কেবা করে,বোঝ না!
আর তুমি ত ডাক্তার মানুষ,এটুকু কেন জাননা,আমারে দাদা কাকা মামু বলা চলে না 
বলছি ত, 
বাল বলবা, হারামী বলবা, না পারলি
চুক চুক করে ডাকবা,যেরম করে সবাই কুকুর ডাকে-----
বুঝলে না!?
মুখ নামিয়ে নিয়েছি দেখে ভগেদা পেয়ে বসল আরো।বলল
সবাই ত পিছন মারে এই ভগের,তা, তোমার কি ধান্দা? সামনে না পিছনে 
মারবা,বলো,নাহলি পথ ধর্বো!
এমন বিপদে পড়ব,জানলে,ভগেকে ডাকতাম না,যত্ন করে খাবার এনে খেতেও দিতাম না,তবু
বললাম,
তুমি খাও, কথা বলে না আর!
তারপর প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে বললাম
.....তা এই সকালে বেরলে কোথায়,শীতে ত মরবা,দেখছি!
শুনে ওরে হাসি তার! বলল
.....পথেই ত শিয়াল কুকুর মরে,মানুষও মরে,আমিও মরতে পারব!
কিন্তু তোমাকে,তোমাদেরকে নিজের মগের মুল্লুক করতে পারব না বাছাধন!
বলবও না
কনে যাচ্ছি,তোমার গাঁড় মারার সুবিধে হোক,চাইনে!
এবার মেজাজ আমারো গরম হল,আমিও বললাম
.....এত টকে আছ কেন ভগেদা!
জামা কাপড় সেরকম পরোনি,আমি কি মরার কথা বলিছি!
না,কোথায় যাচ্ছ,আমার কোন দরকার আছে তা জানার!
ভগে এবার মুখ গোমড়া করে নিল ।হয়ত বুঝল
এই হাতুড়েও লাচার মানুষ,তবে ধান্দা কিছু নেই!

আসপাশে কেউ নেই,চায়ের দোকানটাও অনেকটা দূরে!
তবু ভগে মুখটা একদম আমার সামনে এনে গলা টিপে টিপে বলল
..... মানুষটার একটা খবর পেয়েছি,সেখেনেই যাচ্ছি!
... কিডা সেই মানুষ?
..... অচিন মানুষ !
..... অচিন মানুষ?? কেমন চমকজ্বরা এল মনে,
মেয়েমানুষ আবার অচিন হয়??
...  হয় বৈকি!
ভগে কোনদিন স্কুলে পড়েছে বলে শুনিনি!
কিন্তু কথায় তার কি অপূর্ব এক চালাকি,বলল,
..... জনমের বাড়ীঘর আমার আর হল কৈ!
গান গাই,যা পাই,তা দিয়ে পেট চলে।
কিন্তু 
যা মনেমনে পাই,মনেমনে শুনি,তা আর কিছু না,ঐ অচিন মানুষের কথা,যা করি যেখানেই যাই....
আমার 
এই কান তাই পাতাই থাকে
 যখনি সে ডাকবে যেন শুনতে পাই,এই লোভে!

হায়রে ভগে!!
টাকা নয় ঘর নয়,ডাক শোনার লোভ!

হাসব না কাঁদব,ভেবে না পেয়ে বোকা মেরে  গেলাম!

ভগে বলল
দেখছ না মানুষটাকে কুড়িয়ে পেয়েছিলাম ইস্টিশনে!
কিন্তু কপালে ত পাওয়া হয়নি
তাই 
হেরিয়ে গেল!
এখন আবার যাচ্ছি পাব ত না,তবু যাই,দেখি! 

......শুনলাম অধন্যবাবু সরিয়ে দিয়েছে,থানায়!
থানায় নিয়ে গিয়েল তোমারও?কোনমতে শোধালাম!

ভগে বাঁশি হল এবার!
বলল,
হু তো! তাইতেই ত আছাড় খালাম বুকে,আর মনডা ছিঁড়ে দুভাগ হয়ে গেল!

.... একেবারে দুভাগ???
....হু,একেবারে দুভাগ!
একভাগ তার,আর,আরেক ভাগ আমার!

..... তাহলি যাচ্ছ যে বড়?
...যাব না,সে যে মন নিয়ে চলে গেল,মন ছাড়া মরে যাব যে..! 
.... তখন যে বললে  না খেয়েই মরে যাবা??

এবার
মুখ আরো বড় করে হাসল ভগে! 
বলল
 সহায় সম্পদে বাঁচব কি করে হোসেন,আমি যে মনমরা মানুষ,মনেমনে বাঁচি.৷ 
তা মনের বুঝি খোরাক লাগে না??
দেখো না গেরস্তরা কিরাম মাছ খায় গোস্ত খায়
আমি
 তেমন নিজেরই মনের মাথা খাই,বুজেচ!

...মন কি তুমার সেই মেয়েমানুষটায়??
.... না!
.....তাহলি??
..... অচিন মানুষটায়!

এবার ফাজলামো করেই হাসলাম।
শুধোলাম
সে কোথায় থাকে ভগে??

ভগেবাঁশিও বড় সেয়ানা!
 মুখ চান্দের আকার করল!
তাতে জোস্নার নকশা তুলে বলল
..... অচিন দেশে!
বলেই ঝাড়া মেরে উঠে--- পথে নামল ভগেবাঁশি!

আমিও
 পিছন থেকে জোরে হাঁকলামঃ
পেলি
ধরে এনো,আর খবর দিও,দেখে আসব সেই অচিন মানুষ!

পিছন ঘুরল ভগেও।যেন কান মলে দিয়ে
বলল
.... ও হোসেন 
ধরে চাষা,.....হাল!
ধরে গাছ ,......ফল!
আমি ভোগে,ভোগে যাওয়া মানুষ! 
ধরব কি গো
যে  মনে পার পাব, আছি সেই মনের তালাশে,বুজিছো!

ভোগের বক্তব্য শুনে আর কথা বাড়াবার সাহস পেলাম না। 

ছন্দে বন্দে কথাও জানে
মানুষটা!

তবে খেয়াল করে দেখলাম হাসিটুকু
তার বড় মুখভরা বড় দুচোখভরা...!

সেই হাসি
গাছের পাতার মত মুখের সামনে মেলে 
ভগেবাঁশি চলে গেল বাস স্ট্যান্ডের দিকে।

ওখানে ফার্স্ট বাস আসত এইসময়,এখন করোনার কারণে সেই বাসের টাইম টেবিল বদলে গিয়েছে কিনা, কে জানে!

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন