ঘর আঁকি 
তারপর পাগলের ছায়া দিয়ে মুছে দিই 



ছড় টানতে টানতে 
বেহালা হয়ে উঠল যে বাদক

কোনও এক পাখিজন্মে
এই গাছেই শিস দিয়েছিল সে

আর এ-জন্মে, কাঠ
তার প্রতিশোধ নিচ্ছে




দিদিমা
যার জন্য সারারাত
টয়লেটে আলো জ্বেলে রাখা হয়

আমরা সব যে যার মতো ঘুমিয়ে পড়ি
মাঝেমাঝে টের পাই
মাঝরাতে জেগে ওঠা একটা মানুষ
পা ঘষে ঘষে এগিয়ে যাচ্ছে
            আলোর দিকে...






পায়ে রুমাল জড়িয়ে কেন এলে
জল জল জল জলোচ্ছ্বাস

নীল, তুমি তটরেখার কনে
কাঁদতে গেলে তাই মেঘ করে আসো এখন

যেন পুরনো সাইকেলের দাগ ভালোবাসো
বালি পছন্দ করো

আর 
শিস দিতে দিতে ঝাউবনের 
একটু ভিতরে চলে গেলে





৫ 

আমি আর সে পাশাপাশি বসলে একটি বিন্দু পাওয়া যায়
গ্রাফজুড়ে এভাবেই স্থানাঙ্ক বদল করি আমরা
আর ঘুরে বেড়াই
এভাবে একদিন নদীর কাছে যাওয়া গেল
দেখলাম বুনো হরিণের দল নেমে আসছে পাহাড় থেকে
জল খেয়ে একে অপরের জন্য জায়গা করে দিচ্ছে তারা

আর তলিয়ে যাবার আগে কেউ কারুর দিকে তাকাচ্ছে না






৬ 

একটা গান মাঝখানে থেমে গেল
গলার মাঝপথে গান আটকে রয়েছে কাঁটার মতো
বিড়াল কাঁটা খেতে এলো
গলার মধ্যে ঢুকে, গানের মধ্যে ঢুকে
সেই কাঁটা টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে এল বিড়াল
এখন এই জ্যোৎস্নার ভিতর বসে
কাঁটা চিবোচ্ছে সে, অল্প অল্প গানও গাইছে
নিজের ছড়ে যাওয়া মুখের ভিতর রক্তের স্বাদ
মনে হয় অন্যের, মনে হয়
জিরাফের সঙ্গে এই তার শেষ লড়াই
কখনো স্রেফ উচু বলেই কাঁটাগাছ অবধি পৌঁছে গিয়েছিল তার গলা





সমুদ্র দূরে রেখে যে হেঁটে গেছে ঝাউবনের দিকে
সে ঢেউয়ের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী

আর কাঠের অনন্ত নিঃশ্বাসে ভেঙে ফেলেছে গতজন্মের আলনা





তোমার আঙুলে তার নড়ে উঠল
যেন সেলাই ফুটে উঠছে 
সুতো ভেদ করে

প্ৰিয় সূচ, এভাবে বোতাম কোরো না 






তাহলে সম্মোহন একটি বাঁশি
দূরের কোনো সাপুরে যাকে বাজায়

তা দিয়ে গরম করা ডিম
পাখি ও উষ্ণতাকে ছেড়ে কোথায় চলে যায়

গড়িয়ে পড়তে পড়তেও
সেই রক্তই কি একদিন ক্ষতস্থান বন্ধ করে দেয়





১০

দূর ছায়াতলে খুলিটি ভাসে
আমি তার একাকী ফড়িং

কেন গান বাজে চুলের শিবাজি
কেন কাঠের আঙুল নয়

তবু সূর্যমুখী চমকে দিলে
টিয়া উড়ে যায় দিগন্তের দিকে

পেটের বাক্স থেকে
মেয়ে ওঠে হাততালি দিয়ে

তখনও হরিণ

ঘুম ছোট 
দাঁতের খামতিগুলো ভালো করে দেখি

সাধের চাকরি
কাগজের নৌকায় চেপে ছুটি কাটাতে যাচ্ছে

আঙুল শিরশির করে

মেয়ের অভিমানের ভিতর 
একবারের জন্য উঠে বসতে ইচ্ছে করে






১১

নরম মায়ার মতো মেয়ে স্কুল যায়
সকালে উঠেছি, ওর ঘুমের পাতা চোখের চেয়ে ভারী
আজ কি ফসল লাগাবে 

ও ঘরের হাসি, ছোট হয়ে কাগজে লেখেনি কেউ
মেয়ের মৃদুল হাত আমি কী মচকাতে পারি!
তোমার দোষের ভিতর গানের অ্যাকোয়ারিয়াম; ছোট ছোট চাষ

কথা বলো, কত কথা বলো
মনে হয় টমেটো বাগান, সূর্যের সাথে কত তার কথা
আঁটি ঠেলে উঠে আসে পালঙের শিস

তবু হাওয়া দিলে তোমাকে অবাক হতে দিই
চুলের শিশির থেকে ভেঙে যায় কাচের বয়াম
আমাদের ছোটবেলার বিস্কুট রোদেই শুকোয়

সে রোদে কিছু উড়ছে
হালকা, ঘুরে ঘুরে, দেখি নাচো
আঙুর ভালোবাসলে সূর্য লাল মনে হয়






১২

দূরত্ব


এক 

তবু কেউ এই বরফের দেশে বেড়াতে আসে
ভাঙা হাতুড়ির কাঠ দিয়ে আগুন জ্বালায়

বহুদিনের এই জল গলে গেলে 
একটি পুকুরই খুঁজে পাবে হয়তো...



দুই 

নিরাময় আসার পর তাকে আর চিনতে পারা যায় না
ঘুমিয়ে থাকা এক দরজার কথা মনে পড়ে

তালা থেকে দূরে এক পাগল
গ্রামেগঞ্জে ঘুরে বেড়ায় এখন




তিন 

একমনে পাথর সেলাই করো
বুনো হাতি দিয়ে সাজিয়ে রাখো ঘর

অথচ জানো না, জঙ্গলের ভিতর
একটা ছোট ঘর ছিল




চার 

ঘুমিয়ে পড়ার আগে
দরজার বাইরে আগুন জ্বেলে রেখেছে যারা

আর কিছু নয়, হয়তো
সাদা একটি  খরগোশ ফিরে চলে গেল...




পাঁচ 

কমে আসে যে ঘুড়ি তাকেই বেলুন বলি

এমনিতে, একটা সময়ের পর
দুজনেই উড়তে পারে না




ছয়

মানুষ নয় বলেই সব বেড়াল একদিন ফিরে আসে

এতটা অসহায় যে
বরফের তলায় স্ত্রীর দেহের উপর
আগুন জ্বালিয়ে রেখেছে একজন... 





সাত 

ঘুমের ভিতর তলদেশ খুঁজে পায়নি জাহাজ
ডুবে যাওয়া মাছ তাই জলের উপরেই ভেসে ওঠে

এমনও তো হতে পারে, ফিরে এসে দেখলে
ভাঙা দেওয়ালের সামনে, একা একটি
আয়নাই দাঁড়িয়ে রয়েছে...!




আট 

কোনো সামুদ্রিক বোতলে
চাবি ও চিঠি
শুয়ে আছে পাশাপাশি

ঘরকে রেফার করছে এমন এক তালা




নয় 

নদী যাকে যেতে দেয়
তার নাম চর...

ভাবুন, আপনারই মতো নিঃসঙ্গ
কোনো ঘোড়া চলে যাচ্ছে




সজল দাস 

ডাক সহকারী পদে কর্মরত। 
বয়স ৩৫। 
লেখালেখির শুরু : ২০১২ 
প্রকাশিত বই : - হারানো বেহালার নাবিক (২০১৭) এবং কাগজই ভালো ছিল (২০১৯)। 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন