পুকুরে স্নান সেরে উঠে আসে মানুষকে সাহায্য করা আঙুল। চিতাকাঠের কথা মনে পড়লেই, কেউ আগুন ভাবে— কেউ মৃত্যু। এক হাতে রোদ্দুর, অন্য হাতে অন্ধকার, তার একটু পরেই মুক্তি। সব মায়া শেষ হয়ে গেলে মুক্ত হয়ে সরাইখানার দিকে উড়ে যায় মোটরসাইকেল। সেই খবর স্মৃতিতে পাঠায় বৃষ্টি আর আগুন। পৃথিবীর সবকিছু তবু একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে। শেষ বিন্দুতে ঘুমিয়ে আছে ওড়না। ভাঙা লন্ঠন নোঙর তুলে এগিয়ে যায় মেহেফিলে। নাভির চারপাশে।
তুমি নিজেই যখন নিজের ভেতর থেকে বেরিয়ে, দু-হাত ছড়িয়ে উড়ে যাও পাঁচ প্রহরের হরতনের দিকে, তখন পৃথিবী আর তোমার সাথে থাকে না। সাথে সাথে উড়ে যায় তোমার ছায়া। যে ছায়া এতক্ষণ ঘরের ভেতর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চোখে প্রতিচ্ছবি পড়ছিলো, সে বাইরে বেরিয়ে লণ্ঠন জ্বালিয়ে বসে থাকা নির্জনতার পাশে চুপ করে বসে থাকে। নিজেকে অনেক ভাগে ভাগ করে শরীর বেয়ে নেমে আসা গানের সাথে গল্প জুড়ে দেয়। অন্ধকার বাড়ির লাল জিভ স্নান সেরে আসা মোমবাতি জ্বালিয়ে চুপিচুপি মেরামত করে পুরোনো দিনের কুয়াশা।
মৃত সাপের মতো শুয়ে থাকা হলুদ বাড়ি জানে, জানলার বাইরে লাফিয়ে নামতে পারলেই মন চলে যাবে একচিলতে আলো ফেলা জাদু লণ্ঠনের বাইরে। রুমালচোর খেলার যাবতীয় ছাঁচের বাইরে। রিয়াল বা বাস্তবকে খুঁজে বেরালে সারাজীবন। তাইতো হাসপাতাল আর ভবিষ্যতের না-নামা শীত প্রতিদিন একটু একটু করে ঋতুমতী হয়। এই পৃথিবী ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকেই নিজের খেলা খেলতে থাকে। প্রাচীন বাংলার গ্রাম্য আলো কিংবা মোটরসাইকেল কোনো সংকেত না-
দিয়েই প্রতিধ্বনি বা মণিপদ্মে নিজের মুখ ধুয়ে নেয়। এলোমেলো পায়ে রিয়ালকে কে যেন ডেকে ওঠে মেরিজান বলে। সাপলুডো বলে।
চারপাশে যে শূন্যের ছাই উড়ে বেড়াচ্ছে তাতে স্নান সেরে নেয় জীবনের কিছুটা ভুল আর সামান্য ঠিক। এসময় রোদের, মুসাফির আর কাউকে চিঠি লেখে না। জেব্রাপারাপারে কমলা ফণা এগিয়ে যেতে থাকে শূন্য এবং ছায়ার অনন্ত আহ্লাদে। শূন্য এবং ছাই-তো অস্তিত্বের কথা জানায়। বর্ষাতি লিখলেও তার চোখে কোনো আয়না চলকে ওঠে না। দেরাজে শুয়ে থাকা কথাবার্তা আলতা-পরা ইসকুলের চরিত্র নিয়ে ভাবছে।
চিরদিন বর্ষাকাল লিখতে চেয়েছো। যাতে টুংটাং হয়। রিলিকঝিলিক হয়, মেয়েটি যেদিন স্মৃতি কিনে আনে, বৃষ্টি কিনে আনার শব্দ মাপা হয়। নিজের ভুলগুলি গড়িয়ে দেবার সময়, দু-চারটে ঠিকও নজরে আসে। ভাঙা সীমানা। ও পরে ঝুলবারান্দা, ধূসর রিসিভার এবং বিরতি চিহ্ন। ঝাপসা হতে হতে চশমার কাচ নিজেই নিজেকে খাচ্ছে। গাছকে হাতধরে এগিয়ে নিয়ে যাবার সময় চোখ পরাও। মুর্শিদাবাদী সিল্ক মোমবাতির মধ্যে গাইতে গাইতে চাঁদ থেকে দুটো চোখ নেয়। নৌকায় ভেসে যাওয়া রণ-পা কবর থেকে ফিরে লিপস্টিপ মেখে হেঁটে যায় প্রজাপতিতে।
মুক্তি বলতে চোখের সামনে যে রংগুলি ভেসে উড়ে বেড়ায়, তা চোখেই বসবাস করে। মুক্ত বিজন, —তোমার স্বপ্ন, কল্পনা আলো এবং অন্ধকার থেকে পিছলে নামে। সত্যিই কী কেউ মুক্ত! মুক্তির যে ঈশ্বর তারও কি নিজস্ব কোনো ঈশ্বর ছিল? চিতাকাঠ কবরখানার দিকে যেতে মানুষটির ভেতর থেকে বেরিয়ে আরেকটি মানুষ পাশাপাশি হেঁটে যায়। যাওয়ার সময় কেউ কারো সঙ্গে কথা বলে না।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন