"I DREAMED that one had died in a strange place
Near no accustomed hand..."
তারপর একদিন ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি পৃথিবী বদলে গেছে। দেহটা দেহের থেকেও হালকা। চতুর্দিক সবুজ, স্বচ্ছ উজ্জ্বল। উঠে বসার চেষ্টা করলাম কিন্তু সে প্রচেষ্টা যেন ডুবে গেল প্রয়োজনহীনতায়। যেন প্ৰচেষ্টার বিপরীতে থাকা সহজ বিতরণের জীবন আমার। অস্থিহীন, রক্ত মাংস, মজ্জাবিহীন– নিরুত্তর। আমার আশ্চর্য হয়ে যাওয়া বোধের অবাক যুক্তিগুলি খুঁজতে খুঁজতে আমি যেন ভেসে যাচ্ছি ঘরহীন, দেওয়ালহীন, পথহীন সৌরলোকে। দশ বাই বারো স্কয়ার ফিটের ভিতরে পড়ে রয়েছে আমার দেহ, বিছানা এবং অগুনতি নিষ্প্রাণ আসবাবপত্রের দরকার। আলমারি, আয়না, এত এত উৎকেন্দ্রিক বই, টেবিল-চেয়ার, কালি-কলম, জলের গেলাস সবকিছু এখনো সেভাবেই আমার দেহকে দেখছে যেভাবে ঘুমন্ত শিশুর দিকে চোখ মেলে থাকে তার মা। এর নাম প্রয়োজন!

ভালোবাসা আমাদের প্রয়োজনের কেন্দ্ৰাতীগ শক্তির নাম অনুপমা। এবং ঘুমভাঙার পরে এই অস্থির বেদনাহত দৃশ্যের দিকে চেয়ে থেকে বিচলিত হবে, সেই মন আর স্ফুরিত হয় না। মৃত্যুর আরেক উপায়ের নাম বুঝি মুক্তি? চেতনার পরাজয় হলে কীভাবে দুজনে খুঁজেছি তাকে বিচ্ছেদে। সেইসব দৃশ্যমহান ছবিগুলি ভাসে অতীতের ডট আর ড্যাশে। 
আমি আর ফিরব না ওই জড়বদ্ধ সাজে। প্রকৃতি লুফে নিয়েছে আমার মৃত্যু, তুমুল ঈশ্বরবাদে। এবং কর্মফল তুমিও কী অপূর্ব দুর্নীতি হয়ে আশ্বস্ত করেছ মানুষকে মুক্তির সুপরিকল্পিত অস্তিত্বে। 

এবং বিভূতিভূষণ 'দেবযান' লিখে মুক্তি-কে নির্বাসন দিয়েছিলেন পরাবাস্তবে সেকথাও অস্বীকার করতে পারব না। দেহহীন একটা সম্মানকে নিয়ে দেহগত আলাপ করে চলেছে এক আধুনিক পৌরাণিকতা। অপরিসীম আগ্রহ অথচ প্রমাণাতীত। ইন্দ্রিয়াতীত বোধ আমাদের প্রজাতিগত অভ্যাস নয়। স্পর্শ, গন্ধ, দর্শন, শ্রবণ এবং স্বাদ ভগবান এবং শয়তানকে প্রকট করেছে। প্রেম এবং অপ্রেমের ধারণার ভিতরেই ইন্দ্রিয়ের প্রমাণ। তোমাকে স্পর্শ করার সীমিত অধিকার লঙ্ঘন করে তোমাকে কেড়ে নেওয়ার যৌনতা প্রাণের অহংকার। নিরহংকারীতা মৃতদেহের বৈশিষ্ট্য। অতএব শাশ্বত মুক্তির খোঁজে অন্ধকারকে সত্য বলে মেনে নিলে সে খণ্ড করবে অস্তিত্ব। অথচ আমরা দেখতে পাচ্ছি মৃত্যু পরবর্তী স্তরে প্রাণহীন প্রাণময়তাকে কী নিপুণ সাজিয়ে তুলেছে দেবযান। মেঘের স্তরে স্তরে ইন্দ্রিয় তৎপরতায় মানুষ ঝুঁকে যায় ইন্দ্রিয়হীনতার দিকে। তবে কি বেঁচে থাকাই একমাত্র লক্ষ্য ছিল আমাদের? শুধু বেঁচে থাকা, শুধু ভেসে থাকা কীভাবে ব্যক্ত করবে মুক্তির ভাষা? মুক্তি কাকে বল তুমি? মাধ্যাকর্ষণের অমোঘ টানের ভিতরে স্বাধীনতাও একটি আপেক্ষিক চেতনা। আমাকে কঠিন বোলো না। সহজ কথায়, সহজ অঙ্কে মানুষ মুক্তগদ্য লেখে না। তুমিও সহজ ছিলে না সঙ্গত বোঝাপড়ায়। ধূপকাঠি এবং চরণামৃতর মতো স্বৈরাচার নিয়ে জপ করেছ মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র। অমর হতে কেন চেয়েছিলে তুমি? অমৃত স্বাদে প্রাপ্ত মৃত্যুহীন প্রাণের মতো এইসব ধারণা তোমাকে আধ্যাত্মিক করে তুলেছে। কুণ্ডলীর ভিতরে উত্থিত সেইসব জাগতিক চেতনার ধ্বংসাবশেষ। 

এই প্রবল অনাহারে, ক্লিষ্ট জীবনে, এই প্রবল ক্ষুধার সময়ে সন্ন্যাস একটি অশ্লীল শব্দকথা। শুধুমাত্র আত্ম-র মুক্তির জন্য মূর্তির কাছে তুমি জমা করো ফুল বেলপাতা। 

ক্ষুব্ধ হও একথায়। তোমার ক্ষুব্ধ হওয়ার প্রতি আমার অমোঘ আশাপ্রবণতা। প্রমাণ করে ভেঙে ফেল আমাকে। তারপর কেড়ে নাও স্বাধীনতা। শিকলের ভিতর থেকে আমি দেখব মুক্তির প্যারানর্মাল অ্যাকটিভিটি। দেখব মানুষ কেমন স্বাধীনতা উপভোগ করছে ক্ষমতার রসাতলে। দেখব আমার দু-চোখের তারায় পৃথিবীর শিকল থেকে টপটপ করে কেমন রক্ত ঝরে পড়ে। দেখব অগুনতি মুক্তিপ্রাপ্ত মায়েরা জরায়ুর যন্ত্রণা চেপে, বুক বিঁধে যাওয়া পেরেকের প্রদাহ চেপে, খুঁজে চলেছে নিরাপদ আস্তানা। এবং আমি দেখব কেমন করে নতুন শিশুকে দেওয়া হয় মুক্তির শ্রেণিনির্ভর ধারণাসমূহ। 

আমাকে মিথ্যে প্রমাণিত করে তুমি নশ্বর জীবনের ঊর্ধ্বে নিয়ে চল প্রিয়তমা। আমাদের সম্মিলিত দীনতাকে অতিক্রম করে চলে যেতে চাই মুক্তির কল্পিত স্বাদে। সহজ পাঠ আমার জীবনের একমাত্র পরিকল্পনা।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন