মুক্তি? মুক্তি আমার এক গ্রাম তুতো কাকা, যাঁর সলিল সমাধি হয়েছিল। ওঁর মৃত্যুর দিন আমি গ্রামের বাইরে, আমার মাসিমার বাড়ি। কাকার মৃত্যু-সংবাদ জানতাম না। আজ থেকে ৩৫ বছর আগেকার কথা। তখন হাতে হাতে মোবাইল ফোন ঘুরতো না। কিন্তু পরে সময়, দিনক্ষণ মিলিয়ে দেখেছি যে আমি মুক্তি কাকাকে দেখেছিলাম তাঁর মৃত্যুর কিছুক্ষণ পরেই। আমার আত্মীয়ার বাড়ির দোতলা বাড়ির জানালার গ্রিল ধরে  দাঁড়িয়ে থাকা মুক্তিকাকা। মুক্তিকাকার ছায়া। চলে যাওয়ার বেদনায় বিধুর ছায়া। এই স্মৃতিটুকু আমার মনে অমলিন হয়ে আছে। বাস্তবের মুক্তি নয়, স্বপ্নের মুক্তি। 

আসলে সব মুক্তিই চকিত, মৌহূর্তিক এবং স্বপ্ননীল। ক্ষতভরা মুখের উপর এক টুকরো হাসি।  বঙ্কিম হাতির দাঁত, অন্ধকারে ভেসে ওঠে, ডুবে যায় অকূল পাথারে।

চারকোল গ্রামের পাশেই দিনারশাহী পীরের থান। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সুগন্ধ পাই। সঙ্গীরা পায় না। তাই বিশ্বাস করে না। বুক ভরে দম নিই। বিশ্বাস দৃঢ় হয়। তবু ধরতে পারি না কে জ্বেলে রেখেছে অলীক ধূপকাঠি মাটির পাঁজরে। মাথার উপর দিয়ে পাখি উড়ে যায়। দলবেঁধে। দীর্ঘ ছায়ার চন্দ্রাতপ। বর্ষীয়ান পথচারী বলেন: কোথায় যাবে বাপ?
 আমি তাকিয়ে থাকি নিরুত্তর:
   কোথায় যাব? 
   কোথায় আমার ঘর?

পুরীর সমুদ্রসৈকত। রাতের অন্ধকার নেমে এসেছে। ঊর্মিবহুল ময়ূরের অপার্থিব কেকারবে জেগে ওঠে জন্মান্তরের স্মৃতি। এক তরুণ মন্দিরা বাজিয়ে গায়ছেন: রাধে রাধে শ্যামকো মিলাদে। তাঁকে ঘিরে নাচছেন দুই নারী। হয়তো একজন তাঁর তরুণী স্ত্রী। অন্যজন তাঁর জননী। বহুক্ষণ অন্ধকারে আমি উপভোগ করছিলাম সেই অসামান্য গান। সামুদ্রিক বাতাসের সঙ্গে সেই গান কখনও এক নৌকা, কখনও এক বাতিস্তম্ভ। আমি গলতে গলতে জল হলাম। ঢেউ হয়ে আছড়ে পড়লাম তাঁর পায়ে। 

স্পর্শকাতর একটি পাখি, স্পর্শকাতর এক সুগন্ধ। ছায়ার মতো জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে থাকে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন