কাজল সেন
সবাই তো আর কৃষ্ণগোপাল হয় না
সবাই কি আর কৃষ্ণগোপালের মতো হয়
হয় না কখনোই
কৃষ্ণগোপালের মতো হয় শুধু কৃষ্ণগোপালই
অবেলায় এসে উলটে দেয় ছক্কা পাঞ্জা
অসময়ে এসে পালটে দেয় বংশের সুনাম
সেরা মেজাজ সেরা আবদার
তখন বড় রাস্তায় সার বেঁধে দাঁড়িয়ে পড়ে
ভাড়া করা গাড়ি
ভাড়া করা বাড়ি
ভাড়া করা মেয়েমানুষ
ধুমসো পুলিশ
বলদের শোভাযাত্রা
সবাই তো আর কৃষ্ণগোপাল হয় না
নতুন বউয়ের চলন বোঝা কি এতই সোজা
মন যখন ভালো নেই তখন মনের কথা না ভাবাই ভালো
ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হলে ঠগ আর না বাছাই ভালো
কৃষ্ণগোপাল বলেছিল তখন নিজের দিকে না তাকানোও ভালো
উচ্চতা কম হলে উচ্চতর ভাবনার ভেতর না ঢোকাই ভালো
রাতে আজ জলসা হবে কৃষ্ণগোপালের বাড়ির ছাদে
মহুয়া গাইবে গজল
লতিকা গাইবে ভজন
দেবতোষ বাজাবে সারঙ্গী
মহাবীর বাজাবে দোতারা
বেচারা কৃষ্ণগোপাল বেচারাই থেকে গেল চিরটাকাল
সে না জানে গান না জানে নাচ
তবে কেউ যদি ঘোমটা খুলে নাচতে পারে খ্যামটা
নিধুবাবু স্বয়ং হাজির হবেন জলসায় সঙ্গে টপ্পা
কৃষ্ণগোপালের কথা আর বলব কত বলো
কৃষ্ণগোপালের কথা আর নাই বা বললাম
তার কথা বলে কি আর শেষ করা যাবে
এই যেমন ঝড় বাদলার দিনে সবাই যখন
আকাশের দিকে তাকিয়েই করছে দিন গুজরান
যেন কারও কোনো তাড়া নেই ব্যস্ততা নেই
অথচ তখন দেখ কৃষ্ণগোপাল সারা পাড়া ঘুরে
খুঁজে ফিরছে তার মনের দোসর তার প্রাণের নাগর
অথবা যেদিন অনেক নাকানাকির পর বসল বাসর
মনের দোসর আর প্রাণের নাগর এসে জমালো আসর
দেখা নেই আমাদের কৃষ্ণগোপালের
কোথায় গেল কৃষ্ণগোপাল আমাদের প্রিয় কৃষ্ণগোপাল
রাত্রি যে বয়ে যায় প্রহর গড়ায় সবার চোখে ঘুম জড়ায়
খোঁজ খোঁজ খোঁজ সারাটা পাড়া লোকালয় তেপান্তর
দেখা গেল কৃষ্ণগোপাল ঘুমিয়ে আছে নাগরের শূন্য ঘরে
একেবারে শুনশান চারচালা টঙের ওপরে
কৃষ্ণগোপালের কথা আর বলব কত বলো
তার কথা কি আর শেষ হয় কখনও
কৃষ্ণগোপালের মতোই বা আর কে আছে বলো
ভাতে পড়ল মাছি কোদাল দিয়ে চাঁচি বেলা গড়ালো
কৃষ্ণগোপালের জুড়ি মেলা ভার
সন্ধ্যে গড়ালেই ঘুম নামে হাসপাতালের বিছানায়
ঘুম নামে কৃষ্ণগোপালের চোখেও
সারাদিন সে করেছে রাজ্যশাসন
রাজ্যের প্রতিরক্ষা অঙ্গরক্ষা সঙ্গরক্ষার পর
ক্লান্ত শ্রান্ত কৃষ্ণগোপাল আর তাকাতে পারে না চোখ মেলে
হাসপাতালের বিছানায় সন্ধ্যে গড়ালেই
কৃষ্ণগোপালও ঘুমিয়ে পড়ে
রাতের রাজ্যশাসন করে তারই সহোদর নন্দগোপাল
রাতে যারা জেগে থাকে তাদের শাসন
সে আর এমন কী কথা কৃষ্ণগোপালও জানে সে কথা
রাতের রাজ্যপাট অন্ধকারে মেলে তার ডানা
নন্দগোপালের দু হাতে তখন কৃষ্ণগোপালেরই ছেঁড়া দস্তানা
যতই বল না কেন কৃষ্ণগোপালের জুড়ি মেলা ভার
স্বপ্নে তার ভেসে যায় হাজার হাজার জন্মের দায়ভার
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন