দিশারী মুখোপাধ্যায়
ওহে নিশ্চয়তা, আর কতদূরে
ওহে নিশ্চয়তা, আর কতদূরে তুমি ঘাপটি মেরে আছ?
পৃথিবীর সব পথ হাঁটতে হাঁটতে শেষ হয়ে এল,
ঠিকানা কি কোনোদিন পরিচিত হবে না আমার সঙ্গে
এ জীবনে?
মধ্যাহ্নে ছাদের কার্নিশে বসে
বিজাতীয় পরিচয়হীন দুটো পাখি
পরস্পরের কথা নিজ নিজ বোধ দিয়ে বুঝে নিচ্ছে ঠিক,
তাদের তো ধরা দাও তুমি সহজেই আপন গরজে।
ভাষা দিয়ে তৈরি হয় আমাদের যত ভালোবাসা,
ভাষার অভাবে তারা মারা যায় ইতিহাস জুড়ে।
এই নিয়তির অন্য কোনো অন্যথা হবে কি কখনো,
নিশ্চিত বাড়ির খোঁজ আসবে কি আমাদের কাছে?
তোমার সমস্ত কথা
তোমার সমস্ত কথা হানা দেয় আমার বাড়িতে,
আমার উঠোনে যত গাঁদা কসমস— এই শীতে,
তাদের পাপড়িতে লেগে থাকে।
গরম কফির ছোঁয়া তোমার দৃষ্টি ছুঁয়ে ফিরে আসে বলে
আমার হরমোন-তন্ত্র রম্য হয়ে ওঠে।
এই কথা জানা হয়ে গেছে বলে
অতিরিক্ত দেমাক দিয়ে নিজেকে অমিল করতে চাও।
তোমার কথারা কিন্তু, যা যা তুমি বলেছিলে একসময়,
জলের বিন্দুর মতো ভেসে ভেসে ফিরছে হাওয়ায়;
তারা ওই দেমাকের কথা ভেবে নিরস্ত হয় না কখনও।
তোমার সমস্ত ঘ্রাণ লেবুর পাতার দেহে
যেন ক্ষীর, নাচে কাফি-স্বর হয়ে।
তোমার সমস্ত ছায়া
উজ্জ্বল আলোয় ভরে থাকে।
জানি এটা বিষ
জানি এটা বিষ,
মুখে নিলে মৃত্যু অনিবার্য।
তবুও, সামান্য মৃত্যুর ভয়ে
বিষের মোহিনী-রূপ,
মধু-স্বাদ
অস্বীকার করতে পারি না।
জানি ঢি-ঢি হতে পারে,
সমাজে, সভায়
পদচ্যুতি হতে পারে
সংসারের দাক্ষিণ্য প্রাপ্তি থেকে,
তবুও গহ্বরে ঝাঁপ
না দিয়ে পারি না।
জানি ওটা শব্দভেদী,
বুকে এসে বেঁধে।
তবুও জলের সঙ্গে মিলনের কালে
শীৎকারের শিল্পরূপ
না এঁকে পারি না।
এসেছিলাম তোমার কাছে
এসেছিলাম তোমার কাছে কথা বলতে,
মুখোমুখি না হয়ে ফিরে গেলাম।
সাহস পেলাম না নিজের পায়ের কাছে,
পেলাম না নিঃসন্দিগ্ধ বাতাস।
যে তুমিকে নির্মাণ করেছিলাম
শূন্যের উপর বাঁধা ভারায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে,
সে যে কেবল ইলিউশন ছিল
সময়ে বুঝিনি।
এখন আমাকে সে কথা বলে বারবার
বিশ্বস্ত-পতন।
এসেছিলাম তোমার কাছে চিকিৎসার খোঁজে,
অসুখের বিবরণ দিতে পারব না বুঝে
অস্তিত্বহীনতার কাছে ফিরে যাই।
যখন ঘুমাতে যাই
যখন ঘুমাতে যাই
জেগে থাকায় আক্রান্ত হই।
যেই বলি— জেগে থাকা এসো,
রাজ্যের ঘুমের পাহাড়
গড়ে তোলে শীতল আন্টার্টিকা।
এসব কথা আমি তোমাকে
বা কাউকে শোনাতে চাইনি,
পৃথিবীতে আর কোনো
সুস্থ নাম বা সর্বনাম
আমার জন্য নেই।
প্রেম দিয়ে চকোলেট বানানো যায় না,
এ বয়সে এসে নিশ্চিত জেনেছি।
ঘৃণা দিয়ে যদি কিছু বানানো যায়,
ভাবতেই ঘৃণার অভাব পড়ে যায়।
চক্রান্ত শব্দটি বুঝি
নিজে নিজে সক্রিয় হয়ে উঠছে খুব
রক্তরসে, হাড়ে ও মজ্জায়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন