সৌমনা দাশগুপ্তের কবিতা 






আয়নামহল




সে থাকে আমার ভেতরেই। কাচ ও পারার মাঝে ধরে রাখে ইহকাল পরকাল। এ-এক অলিভ আর্কাইভ। স্মৃতির বেড়াল এসে উঁকি দ্যায় স্নানঘরে, উঁকি দ্যায় সমুদ্রভ্রমের জামা, জাহাজ আর চোদ্দবছর।

 

নীলকে তখন খুব নীল বলে মনে হত। তারপর ধীরে ধীরে প্রুশিয়ান ব্লুতে এসে মিশেছে ধূসর। রেটিনায় শুয়ে আছে সাপ। শরীর-ফসিলে শুধু নুনদাগ, ঢেউয়ের পায়ের ছাপ। তুমি তাকে বলেছ ব্রাশের স্ট্রোক, আমি বলি মালভূমি, কেবলই ভাপ ওঠে। স্টার-ফ্রাই হয়ে যায় এ-কলিজা।

 

স্নায়ুতে মাঞ্জা দিই, ওড়াই তুখোড়। ছিটকে ছিটকে পড়ে আগুনপাথর। শামুকখোলের ভাঁজে পড়ে আছে মন। কাঁইক্যা মাছের দল ঠুকরে ঠুকরে খায় ডায়েরির পাতা।

 

ঝড়ে যায় উড়ে যায় নিরেট স্মৃতির স্তূপ, বালিয়াড়ি…





লোহুর আতর মেখে পড়ে আছে পথ। আয়াতের শরীরে আগুন। ঋতুকাল চলে যায় ঋণাত্মক ইনফিনিটির দিকে। স্ক্র্যাপবুকে ফুটে ওঠে লোহিতের ফুল।

 

বরফের আস্তর ফাটিয়ে খুঁজি গাছের শৈশব, ঝুরোমাটি। তখনও নামেনি বৃষ্টি এই ঘরে। তখনও দমচাপা মেঘেদের গুজুরফুসুরে ভরা ঘর।

 

গুজবের থেকে সরে আসি। সরে আসি জাদু-বাঁশিটির সুর থেকে। উলগুলানের গান গেয়ে ধানের বুকের থেকে ঝরে গেল দুধ। হাতড়ে চলেছি শুধু গোলাভরা অন্ধ চিহ্নের দাগ।

 

হাড়গোড় ঢিলেঢালা, শব্দশরীরের থেকে খুলছে অক্ষর ধীরে ধীরে। ফিলামেন্ট বেয়ে বেয়ে গড়ায় শব্দেরা। হঠাৎই জ্বলে উঠে হঠাৎই নিভছে ফসফরাস। একটা একটা করে মুছে যায় ঢেউ।

 

এ-সাগরে লেখা আছে আমার ঝিনুকবেলা, ওলো সই, ওগো সখী, চোর-চোর কুমিরডাঙার খেলা…





চুপ 

তাতানো লোহাকে জলে দিলে ভাপ ওঠে

তেমনই বাষ্প ওঠে পোড়া ধমনির থেকে

 

যে-ডালের থেকে ঝুলে আছে ধারালো ইস্পাত

সেখানে পেতেছি মাথা, হেঁটমুণ্ড চলে যায়

আমার অক্ষরসারি, যেন পিঁপড়ের চলাচল

 

এ-ঘর ও-ঘর থেকে রসদ গুছিয়ে চুপ

জমা করে গোপন ভাণ্ডারে, হেলদোলহীন





হাউজদ্যাট

আগুন লেগেছে ওই পাখির বাসায়, শর্টসারকিট

আগুনে আগুন—ফুলকি ফুলকি খেলা

মাছিতাড়া করি সব ইচ্ছে, ভাঙে কাচের পিরিচ

আমকুশি ফাটে, রক্ত গড়ায়

 

ইচ্ছে-স্ফটিক কুঁদে মূর্তি বানাই

তাকেই আকাশে ছুড়ে চিৎকার

হাউজদ্যাট!

 

পুষ্পপাত্রজোড়া মৃত পাখিদের ডানা



Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন