নীলম সামন্তের কবিতা





ফোঁটা ফোঁটা ইজেল

আলাদা করে আর কি বলব? তুমি নীল নদী দিয়ে হেটে যাও বলে আমি মৃদঙ্গ বাজিয়ে ছায়া তুলি। তার লেলিহান সম্মোহনে কতবার ভেবেছি ধুসর প্যাস্টেল বোলাব। অথচ মোমের গন্ধে কানে একটা একটা করে ঢুকে পড়ে মৌমাছির জাহান। বলেছিলে, তোমার প্রাক্তন প্রেমিকা রাষ্ট্রের কথা বলে। ইওলো অকার আর লেমন ইয়োলো কুচি কুচি করে ছড়িয়ে দিই। দেখি, আমার রাষ্ট্র ধানে ভরা;  আমার রাষ্ট্রে মৃদঙ্গের সাথে স্যাক্সোফোনের অভিসার ঘটে;   আর নির্মাণ করি শব্দের জঙ্ঘা। সুমধুর প্রতাপ যখন ঝিলমের বুকে কলকল করে, সে উনুন ধরায়। তার দিকে তাকিয়ে বৃন্তে ছোবল ও পেলিকান সংক্রান্ত মৌলিক ভাস্কর্য আঁকি। 





লণ্ডভণ্ড ঝরোখা

ভাঙা ভাঙা আপেলের বীজ নিয়ে বাউল পেরিয়ে যাচ্ছে মেষপালকের ঘর। মাথা ভর্তি ঝর্ণায় একতারা। সে জানে কোথায় পড়ে আছে খোসাবন্দী বাইবেল আর কোন চারণভূমিতে হাজার মেষের ভিড়ে আমরা একে অন্যের পালক ছাড়িয়ে ঘর্ষণ প্রক্রিয়ায় চাষ করছি মিশরের পিরামিড। ও কন্যা, তুমি তো মহল চেন, এতোকাল যেখানে চুল বিছিয়ে উন্মুক্ত স্তনে পাখিদের পুষে রেখে হরিতকী লণ্ডভণ্ড করেছ, তার সিংহদরজায় সমস্ত পরিযায়ী গা-ছমছম। তোমার আয়না-ঘর বুঝি নতুন তাঁত জানে? জানে খড় কাটা মেশিনের ধার? এসো হাতে অতল লিখি। তার ভেতর গুঁড়ো গুঁড়ো পারিজাত আর নুন মেশানো দুধ। বাউল এদিকে এলে আতপ ছড়িয়ে দিও, পৃথিবী গড়িয়ে যাবে হুড়োহুড়ি করে। 






চর্চার ঝুমঝুমি 

বাক্স ভর্তি মোহনা ঢেলে দিলাম তোমার ভ্রুকুঞ্চনে। এখন আমার পালক পালক রুহ নিয়ে চর্চা হতে পারে। চর্চা হতে পারে সেই সমস্ত কান্তার বাক্য নিয়ে যা উটের মতো জলভরা ও দোফসলি। কিন্তু উহ্য থেকে যাবে উলম্ব গলার হংস প্রবৃত্তি। এখান থেকে পঞ্চইন্দ্রিয় বিপথগামী হলে চালচিত্রের ইতিহাসে মোহনায় মাছ ধরা মানুষটি স্পষ্ট হয়। জনসমক্ষে তার কাঁধে কাস্ট জাল, সে খামার থেকে জলমুখী। তার পা হায়ারোগ্লিফিক্সের অনাবিষ্কৃত পাঠ। ঘর-বাড়িহীন এই চিত্রে সরু হয়ে গলে পড়ছে হেম, যাকে পড়ন্ত পিতল থালা বললে বোঝা যায় বেলা ফুরিয়ে আসছে৷ এসবে আমি নেই, না আছে কদম-ঠাসা নাভি। তবুও চর্চা শুরু হবে আমারই গোড়ালিতে থেঁতলে যাওয়া জিভের বেভুল লাল থেকে। 






বিসমিল্লাহি প্রিজম

অতঃপর মিশমিশে কালো ঘনিয়ে এলে প্রিজম সামনে রেখে রঙিন হয় পোখরাজ৷ নানান রঙ, রামধনুর থেকেও বেশি মখমল। আমি শুনেছি পোখরাজ মানসিক স্বাস্থ্যে বর্ষার ময়ূর এনে দেয়৷ শোনা কথায় কান যাই দেখুক না কেন আমি এই গরমের আলজিভে পা ঝুলিয়ে সোয়টার বুনি। এ'সব হতাশা কাটানোর উপায় ধরে নিলে যাবতীয় অস্বাভাবিকতায় জল ঢালতে আসে মাথার খুলি।  কারণ জানতে চেয়ে বিসমিল্লাহ বৈঠায় মধু ঢেলে দেয়। আচ্ছা, এই বৈঠা যদি তোমার সামনে রাখা হয় আলতো আলতো করে চাটবে, যেমনটা পাখি জিভ দিয়ে তেষ্টা গিলে নেয়? পারবে বুলেটের গরম গা থেকে হরিণকে বামদিকে ঠেলে দিতে? তবে তো আমিও হাতে কিঙ্কিণী ভরে, গম মেলা খামারের ভেতর দিয়ে, ছড়িয়ে দেব উপরি-ঝুপরি এক, দুই, তিন সংখ্যাগুরুর বাজেয়াপ্ত ল্যান্টার্ন। 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন