সম্পিতা সাহার কবিতা




উন্নয়ন

দীর্ঘ প্রসারিত আলোয় শুয়ে থাকে বিমুখী জীবন।

দু’একটা প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া

নির্বাসিত বাদক ভুলে গেছে কথপোকথনের সুর।


নদী শুকিয়ে যাওয়ার খবরে

শহরের মধ্যবর্তী রাস্তাজুড়ে মানুষের ভিড়…

বাড়তে বাড়তে তারা খুঁজে ফেলে বাদকের বাড়ি।

ঘুম ভাঙে। অতলশূন্যতায় জেগে ওঠে বাদক।


নিরাময়ের সুর বুনছে কেউ কেউ,

অথচ বাদক চিনতে পারে জখমবাক্য

ভারসাম্যহীন স্বরলিপি হেঁটে চলে যায় বিষাদঢেউয়ে।

ধূসরবাদামী রোদ নরম হয়ে আসে…


তামাম ভিড় তখন ভুলতে বসেছে উদ্দেশ্য।

বাদক নেমে যায় নদীর জলে,

ফোঁটা ফোঁটা জলে মিশিয়ে দেয় নিষিদ্ধ সুর…


মরুঢেউ... ছায়াপথ… 

বাদক ভেসে যাচ্ছে নদীর শেষজলে,


মানুষ বেঁচে থাকল বাদকের নির্জনতায়।







আত্মতৃপ্তি

পেয়ালার অন্তিম বিষ গলায় ঢেলে

শহর নিভে যায় অপেক্ষায়…

জেগে থাকে মানুষ ঈশ্বরের সাথে।

ভবিতব্য নিয়ে কথপোকথন সম্ভাব্য জীবনের সহজতম হার!


মানুষ তবু হাত জোড় করে।

ডাকে।

কাঁদে।

শিখে নেয়।

পেরিয়ে যায় মেরুসেতু...


ক্রমশ এই আয়ুরেখা ছুঁয়ে, চিনে নিচ্ছি পেরেকের জখম।


ঘনিয়ে উঠছে অপার সূক্ষ্মটান।


বুঝে নিলাম, যেটুকু গ্রাহ্য সেটুকুই যন্ত্রণা…







অস্তাচল

প্রলোভন কমিয়ে দাঁড়ালাম...


ফাল্গুনের দিনগুলো ক্রমশ দস্তানার ধুলোর মতো হয়ে উঠছে। ঝেড়ে ফেলার ভিতর কোনো মোহ নেই তাই আর ফিরিয়ে দিচ্ছি না। লেগে থাকুক। ঘড়ির সময় ফুরিয়ে যাবার আগে, আমরা আরো একবার চিনে নেবো রাস্তা। আরো একবার মানচিত্রের রংগুলো ঝালিয়ে নেবো স্নানের জলে...

ঘামের ভিতর জামার বোতামে সারাদিনের ক্লান্তি বিছিয়ে রাখো। বেলুন উড়ুক বেপরোয়া। গোলাপি রঙের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে একটা ট্রেন মিথ হয়ে উঠছে পৃথিবীর বাইরে। ঘুম ভাঙলে মানুষ যখন ভুলে যায় দিনরাতের হিসেব, ঠিক তখন একটা পাইনগাছের পাতা জন্মান্ধ এই চোখের পাশে রেখে যাবে ডাকিনীচিহ্ন…


আলোহীন দিনগুলোয়, মেঘের শব্দে, পাখিরা আর ফিরবে না শহরের ভিতর।


যাবতীয় ঘরবাড়ি পোড়ানোর পর, এই ডালপালা আঁকড়ে থেকে যাবো আরো কিছুদিন…

জন্মছারখার জীবনের কোনো বেতন হয় না জেনেও।








আনাচে-কানাচে

সমস্ত রাত জেগে আছি।

করিডোরে সামান্য আলোর মতো অপেক্ষা...

সারি সারি হুইলচেয়ারে ঝিমানো রাত।


খুব দৌড়াদৌড়ির পরে ভিতরের ক্লান্তিটা মরে যায়।

খিদেতেষ্টা তেমন কিছু থাকে না বিশেষ। চোখের পাশে একটা ঘূর্ণিঝড় উল বুনে যায় শুধু... আজকাল শহরে গাড়ি চলছে কম নাকি চিন্তার ভিতর থাকলে ভিড়ও সরল লাগে, বুঝি না ঠিক। কী হবে এত জটিল করে! একটা মাথাধরার ট্যাবলেট খাবো ভাবছিলাম। সিগনালে গাড়ির নামানো কাচ দিয়ে রুটি সেঁকার গন্ধ পেলাম! এই তো সামান্য ভুলে যাওয়া স্বাদজীবন... আড়বাঁশি...


একটা ঘরের মতো এই পৃথিবীটা। যেখানেই যাও, যতদূর পালাতে চাও... তুমি বেঁচে আছো মানে তোমার ফিরে আসা বাকি, কেউ দরজায় এসে দাঁড়াক বা না দাঁড়াক।


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন