আগমনী ফুকন শইকীয়ার কবিতা
অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ— বাসুদেব দাসকুড়ি জুন
কুড়িজুন এলেই তোমাকে মনে পড়ে বিষ্ণু রাভা
বাকি দিনগুলিতে তুমি কোথায় থাক আমরা জানিনা
হয়তো আমরাই তোমাকে শুইয়ে রাখি
হয়তো গভীর বিশ্বাসে তুমিও শুয়ে থাক
তোমার বুকের জ্বলন্ত অগ্নিতে
আমরা জানি
তুমি মাঠ ভালোবাসতে
তুমি বাতাস ভালোবাসতে
তুমি মাটি ভালোবাসতে
তথাপিও তুমি কিন্তু রোদ ভালোবাস
একজন বৃষ্টির প্রেমিক ছিলে
কুড়ি জুন মনে পড়িয়ে দেয় তোমার গীতের অর্থ
কুড়ি জুন মনে পড়িয়ে দেয় তোমার প্রেম
কুড়ি জুন মনে পড়িয়ে দেয় তোমার ত্যাগ
তথাপিও আমরা তোমাকে বুঝতে পেরেছি কি, বিষ্ণুরাভা !
বিষ্ণুরাভা, এখানে এখন চারপাশে সাইরেনের শব্দ
সাইরেনের শব্দ আমাদের ঘুম চুরি করেছে
সাইরেনের শব্দ আমাদের শান্তি ভেঙ্গেছে
সাইরেনের শব্দ প্রদূষণ বাড়িয়েছে
সাইরেনের শব্দে এখানে এখন অন্ধকার নেমেছে
অন্ধকারে আমরা আমাদের স্বপ্নগুলি হারিয়েছি
বায়ু, জল, বাতাস হারিয়েছি
ফুল হারিয়েছি
প্রজাপতি হারিয়েছি
আর হারিয়েছি নিজেকে
বিষ্ণুরাভা,
পুনরায় একবার এসো
তাহলে এবার
কুড়ি জুনে আসবে।
এবার কুড়ি জুনকে আমরা বাঁচিয়ে রাখব
আমরা বেঁচে থাকব
আমরা বেঁচে থাকব।
• বিষ্ণু রাভা একজন কবি ,সাহিত্যিক,নাট্যকার এবং সংস্কৃতিবিদ।
উপাধি
ঈশ্বরের জন্ম হওয়ার আগেই
ছিল কি অন্য একজন ঈশ্বর?
ছিল কি
ছিল না!
যদি ছিল
ঈশ্বরবিহীন পৃথিবীটা কেমন ছিল ?
প্রশ্নগুলো বিরক্ত করে থাকার সময়
একদিন ঈশ্বরের জন্ম কাহিনি শুনলাম
অপরূপ বর্ণনায় সৃষ্টি হওয়া কাব্যগ্রন্থে
ঈশ্বর একজন নায়ক
একজন উপাস্য দেবতা
ঈশ্বরের সন্ধানে মানুষের
জ্ঞান বৃদ্ধি পেল
আর ধীরে ধীরে তাকে একটি দাঁড়িপাল্লায় তুলে
দেওয়া হল
আর এভাবেই একদিন চক্রব্যূহে ঢুকে পড়ল
ঈশ্বর
ঈশ্বরের নামই
জন্ম হল উপাধির
জন্ম হয়েই উপাধি
ভাগ করল রং
ভাগ করল জীব-জন্তু
ভাগ করল ফল-মূল
আর এভাবেই ধীরে ধীরে
কামারশালায়
শান দিয়ে গড়া হল
‘ উপাধি’ নামের
একটি শক্তিশালী তরোয়ালের …
অরণ্য হতে চাওয়া নদীটি
…ক্রমশ ছায়াগুলি হারিয়েছিল
অরণ্য থেকে
নিঃসঙ্গ হয়েছিল নদীটা
একটা পদ্য আউড়ে নিয়ে নদীটা
মরুভূমিতে
রোদের বীজ ছড়িয়েছিল
ছোটো সূর্য
দীর্ঘ আশা
অরণ্য হতে চেয়ে
নদীটি লিখেছিল
মাটিতে
মানুষের পদ্য
কিন্তু ওপারে দাঁড়িয়ে
জল-স্বপ্নের পদ্য কে শোনে !
বৃষ্টি কি তৈরি করে
বৃষ্টির কুটির !
একদিন এভাবেই অন্ধকার হয়
আর ভিড়ে হারিয়ে অরণ্য …
শ্মশানের ফুল বহন করে
নদীটি
এখন মাটির অরণ্যে
অজানা আশঙ্কায়
সাড়াশব্দ হীন
ভাদ্রমাসের শহরটা
শব্দের আদালত
আমরা মেনে চলি বা না চলি
শব্দেরও একটি আদালত আছে
একজন বিচারক সেখানেও থাকে
আমরা দেখি বা না দেখি
শাস্তি সেখানেও থাকে
কেবলমাত্র বক্তার উপলব্ধি হওয়া পর্যন্ত
দাদা বলেছিল,
শোনা কথায় তিনটি প্রমাণ চাইবে,
অন্যথা বিবেককে বিদায় দাও’
নিজের চোখ, কান, মুখই
আদালতের শ্রেষ্ঠতম বিচারক
বিশ্বাস করার জন্য–
প্রমাণ নম্বর (এক) কানটা আমার ছিল না
প্রমাণ নম্বর (দুই) চোখ জোড়া অন্যের ছিল
প্রমাণ নম্বর (তিন) বক্তা নীরোগ ছিল না
যেন তেন উড়তে থাকা শব্দগুলি
মানুষের মতো ঘুরে বেড়ায়
ওরা বুকে বিঁধে
ওরা জিভায় বিঁধে
আর পায়ের তালুতে বিন্ধা এই শব্দগুলিই
আদালতের (মনের) গুপ্ত পরিচয়
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন