শূন্যে ফেরিওয়ালা বৃত্তে বেলুন 

পর্ব–১১


নীলম সামন্ত 

সময় যত এগিয়ে যায় বয়সের সাথে-সাথে অভিজ্ঞতাও বাড়ে। একেক দিন একেক রকমের অভিজ্ঞতা। বিগত এগারো মাস ধরে কততেই লিখেছি। অথচ জীবনের কোন কিছুই যেন লেখা হয়ে ওঠেনি। এই লেখাগুলোর কি পরিণতি আমি জানিনা তবে অনেক কিছু লিখে রাখা এবং জমিয়ে রাখার মধ্যে একটা আত্মতৃপ্তি কাজ করে৷ পদে পদে কত হোঁচট আসে সেগুলোকে সামলে আবার সামনে হাঁটতে থাকি। নতুন কিছু শিখি। এই হয়তো জীবন। 

গোয়া থেকে যে রাস্তায় পুনে এলাম, সেই রাস্তা ধরেই ঠিক এক বছর আগে গোয়া গিয়েছিলাম। রাস্তায় যখন আসছিলাম সেই দিনের কথা মনে পড়ছিল ভীষণ ভাবে। এবার বেশ কিছুক্ষণ আমিও গাড়ি চালালাম। এ-এক অন্যরকম আনন্দের অভিজ্ঞতা। শুরুতে বেশ কিছুটা পথ ফাঁকাই ছিল। দিব্যি চালিয়ে নিলাম। যথারীতি গাড়ির পিছন ফিটিং গাছপালা পাখি মেয়ে, মেয়ের বাবা। সংসার উঠিয়ে চলেছি সংসার পাততে৷ বিকেলের দিকে যখন আবার স্টিয়ারিং হাতে নিলাম তখন রাস্তায় অনেক গাড়ি। প্রত্যেকেই হাইস্পিড। দেখে মনে হয় যেন কেউ থামতে শেখেনি। সকলের দৌড়ানো প্রয়োজন। কে কত আগে তার নির্ধারিত জায়ায়গায় পৌঁছে যেতে পারে। এখানে গতি কমে যাওয়া মানেই পিছিয়ে পড়া। একজনের পেছনে দুজনের পেছনে ধীরে ধীরে সবার পেছনে। আমার দুই পাশে বড় বড় লরি সমেত নানান ধরনের গাড়িঘোড়া। প্রথমবার এরকম চালাচ্ছি, একটু তো ভয় করেই ছিল। কিন্তু থেমে গেলে চলবে না। হেরে গেলেও চলবে না। তাই চরৈবেতি। 

সেই রাস্তার পর থেকে এখন আবার মারাঠা রাজ্যে৷ থানেতে যখন ছিলাম তখন নানান রাজ্যের লোকজন ছিল বলে মারাঠিদের রীতিরেওয়াজ খুব একটা জাঁকিয়ে বসেনি। কিন্তু এখানে গল্প আলাদা। রাস্তায় অসম্ভব জ্যাম। মানুষের এলোপাথাড়ি ড্রাইভিং৷ কেউ কাউকে মানতে নারাজ৷ গোয়াতে অটো-ভাড়া এতো বেশি ছিল সেই অনুপাতে পুনের অটোতে বসে গায়ে লাগেনি ঠিকই তবে খুব কম ভাড়া সেকথা বলব না৷ দশ কিলোমিটার যেতে প্রায় দু'শ কুড়ি টাকা পড়ে যায়৷ কলকাতায় চল্লিশ টাকায় চিড়িয়ারমোড় থেকে বরাহনগর মেট্রো স্টেশন চলে আসি। 

এখানেও গ্রীষ্ম কাল। তবে দেশে যেভাবে গরম চেপে বসেছে। সেরম নয়। দুপুরের দিকে কিছু ঘন্টা ফ্যান চালালেই অনেক। নতুন ঘর ধীরে ধীরে সাজিয়ে গুছিয়ে নিলেও টব গুলোতে একটি গাছও লাগাতে পারিনি৷ বাড়ি থেকে আনার ইচ্ছে আছে৷ আসলে আমাদের পাঁশকুড়োর নার্সারিতে নানান ধরনের গাছ আছে৷ আর দামও বেশ কম। আমি যেহেতু ট্রেনে যাতায়াত করি তাই একটা ব্যাগে করে সহজেই নিয়ে চলে আসতে পারি৷ এদিকে গাছের বড্ড দাম। সামান্য টগর গাছের চারাই পড়ে ষাট সত্তর টাকা৷ এবার আসার সময় হারমোনিয়ামটাও আনতে হবে৷ নিজে যে কত যুগ গান করি না৷ তাছাড়া মেয়ে স্কুলে গান গায়, সবাই প্রশংসাও করে বলে বাড়ির বড়দের ইচ্ছে ও গান শিখুক। 

ওর গান শেখার কথা উঠলে আমার ভারী নিজের ছোটবেলা মনে পড়ে৷ বাবা-মা খুব যে অবস্থাপন্ন ছিলেন তা নয়। প্রথম হারমোনিয়াম কিনে দিয়েছিলেন ক্লাস ফাইভে৷ তার আগে মায়ের হারমোনিয়াম ব্যবহার করতাম যার অর্ধেক রিড কাজ করত না৷ ক্লাস ফাইভ থেকে কলকাতার এক ওস্তাদের কাছে গান শিখতে শুরু করেছিলাম। শাস্ত্রীয় সঙ্গীত৷ উনিই ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন একজনের পুরনো হারমোনিয়াম কিন্তু স্কেল চেঞ্জার। সেটার অবস্থাও বেশ ভালো৷ অনেক ইমোশন জড়িয়ে আমার পুরনো হারমোনিয়ামের সাথে। কিন্তু মা সেটা আমায় না দিয়ে নতুন একটা কিনে দিলেন। আমার আবেগটা ছাই চাপা দিয়ে হাসি মুখে নিয়ে নিলাম। 

প্রথম যখন স্টেজে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত গাইতে উঠেছিলাম বাড়ি থেকে দাদার সাইকেলে করে নিয়ে গিয়েছিলাম ওই হারমোনিয়াম।  তারপর যেখানে যখন গেছি রিক্সা ভাড়া করে নিয়ে যেতাম৷ বাড়ি গেলে ওই হারমোনিয়াম খুলি। দেখি৷ দীর্ঘদিন অনভ্যাসের কারণে আজকাল রবীন্দ্রসঙ্গীতই ভালো করে গাইতে পারি না৷ তবে প্রতি বছর আমার স্কুলের দিদিমনির আয়োজিত রবিঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে গান করি৷ মেয়েও করে। এবার ভেবেছি আমারই লেখা মুক্তপদ্যের সাথে রবিঠাকুরের গান কোলাজ করে একক সময় নেব। দেখা যাক কতটা কি করতে পারি৷ 

শুরুতেই ভাবছিলাম আজ কী লিখব৷ আশ্চর্য! দু-একটা কথা বলতে বলতে কত কী বলে ফেললাম। তাই না?


(চলবে...)

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন