জলের দিকে তাকাও  

আমার চোখের জলের কাছে শেষ হয়েছে সমুদ্রের গল্প
আমার হাঁটুর শামূকের কাছে হেরে গেছে পর্বত শৃঙ্গ 

আমি এখন আকাশে ঢুকবো
যুদ্ধ বিধ্বস্ত তারাদের সাথে কথা বলবো 
আমি তারাদের জন্য জল নিয়ে যাবো 

ওরা সূর্যকে উঠতে দেয়নি 
তাই রাত দীর্ঘ হয়েছে 
ওরা সূর্যের ওপরে সাইন লাগিয়ে দিয়েছে 
আমি এই  মহাঅন্ধকার থেকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি
দখল করা সূর্যের জমিতে ওরা সাজিয়েছে কিভাবে কামান আর মিসাইল 

এখন মহাবিশ্ব সাদা 

এগারোটা গ্রহ মানব কঙ্কাল 

চাঁদ 
তার মুখ প্রায় সবটাই থ্যাতলানো 
দূর  থেকে দেখলে মনে হবে শহরের নববধূর বাসর যাপনে যাওয়ার একটু আগে খুন হয়ে গেছে 

এখন আমার কাছে এমন কোনো উপমা নেই যে দেখাবো বিশ্বব্রহ্মাণ্ড
দেখাবো সেই মহাবিস্ফোরণ 

আমার আত্মা চুরি করে নিয়েছে কালো মানুষ আর ফাঁপা মানুষের দল
আমার পৃথিবী এগারোটা গ্রহের সঙ্গে ধাক্কা খেতে পড়ে যাচ্ছে 
আমার দেশ ভাগ হয়ে গেছে 
আমার কাছে কোনো মহাপুরুষ নেই 
ঈশ্বরের কোনো ধারনাও নেই  যে প্রার্থনা করবো

এখন  
তুমি আমাকে খুঁজে পাবে আমার জলের দিকে তাকাও

আমি গল্পের এক জীবন 
যে গল্পটা লিখতে লিখতে লেখক মরে গেছে 








একটি সার্বভৌম মহাবিশ্ব 

প্রতিটি নক্ষত্র সার্বভৌম 
তাও
তুমি কি দেখতে পাচ্ছো না সূর্যের ওপরে ঝকঝক করছে একটা সাইন 
যেটা একটা অস্ত্রের কারখানার সমতুল্য 

আমি হলফ করে বলছি এটা আমার স্বদেশের সূর্য 
ওরা ব্যবহার করছে ওদের স্বার্থে 

আমাদের স্বাধীনতা এখন মিউজিয়ামে

আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম এখন নবম এবং দশম শ্রেণীর ছাত্রদের পড়ানো হয় আমদানি করা কল্পনা মিশিয়ে 
প্রথমে আমি সেই কল্পনাকে হত্যা করতে চাই

আর আমি লিখতে চাই একটি নিটোল কবিতা 
কারণ আমি আমার কবিতাকে আমার রক্ত পান করাই

আমার মা যে মাটির  
সেই মাটির আবেগ প্রতিমা হবে আমার কবিতা 
আমার কবিতার রং হবে মানুষের গায়ের রঙের মতো 

শৈশব থেকে খুঁজছি আমার মুখ
মনে হয় যেন আমার মুখ আর ধড় ভাগ হয়ে গেছে 
আমার জীবনের আলোচনা ওরা মুলতবি রেখেছে 

আমি অভিযোগ করছি আমার স্বাধীনতা আমার মুখ চুরি করে নিয়ে গেছে 
আমাকে প্রমাণ করতে হয় আমি সংখ্যালঘু মুখ
অভিযুক্ত হই সন্ত্রাসী বলে 
যদি কখনও আমরা রুটি আর জল নিয়ে ইশ্বরের উদ্দেশ্যে যাই 
তখন হয়ে উঠি নামজাদা লেখকদের গল্পে ভালো হতে চাওয়া অপরাধপ্রবণ চরিত্র মাত্র 
আমাদের বেঁচে থাকা নিয়ে যত কথা সব হয়ে উঠে এক একটা মরা গল্প 
আমরা গল্পের মরা চরিত্ররা যেন বেলুনের মতো খালি পায়ে হেঁটে বেড়াই  শূন্যে 

অতএব আমি আমাদের ইতিহাসকে প্রত্যাখ্যান করছি 
আমাদের ইতিহাস মুদির দোকান 
যেটুকু দরকার কিনে নিয়ে আসি
কিন্তু জীবন অনন্ত অসীম 

আমি নীল হলুদ সাদা কোনো রং মানি না 
আমি বিশ্বাস করি মানুষের গায়ের রং 
আমি বিশ্বাস করি তুমুল মেঘ 

যা নেই তাই তো সবচেয়ে শক্তিশালী 
ঈশ্বর নেই তাই তো তিনি সবচেয়ে বেশি  আছেন 
নাস্তিকের মধ্যে 
আমার মুখ নেই তাই আমার অজস্র অজানা মুখ আছে 

শোনো 
আমি একটি কবিতা লিখবো বর্ণহীন 
তারা মিছিল করবে রাজপথে 
আমার কবিতা হয়ে উঠবে একটি সার্বভৌম মহাবিশ্ব 

3 মন্তব্যসমূহ

  1. ভুবনডাঙা ভরে উঠেছে দুটো ভালো কবিতায় । আবার পড়লাম । জানলাম "যা নেই তাই তো সবচেয়ে শক্তিশালী"।

    উত্তরমুছুন
  2. অপূর্ব ভাব ও ভাবনা । সত্যের আয়নায় কোন কৌশল নেই ,আছে পরিস্কার পরিছিন্ন রূপ ।ময়না ময়নাই হয় । বাঘের মাসি না বলে বিড়ালিনী বলতে অসুবিধা কথায় ?আপনার এই নগ্ন সত্যের ইতিহাসে আর কেউ না থাকলেও আমি আছি ।খুব ভাল লেগেছে ।।
    নমস্কার ।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন