আর্তি ও স্থিরচিত্র
অমলিন চোখ আর চলেনা দুপুরের তাপে। অনন্ত জ্বলজ্বল করে অভ্রমাখা ধোঁয়া ধোঁয়া বাসনায়, কেষ্টা অধিকারী ফেরি করতে থাকে বাতাস — তার সাথে আলাপের ইচ্ছেটা পেরিয়ে যাচ্ছে ঈশান কোণের টালির চাল; চোখ গেল পাখির ডাকে কোন প্রিয় মুখ নেই, তালগাছে বাঁধা বাবুইপাখির বাসাটি স্থিরচিত্র — ঝিঁঝিঁর ডাকে এই তীব্রতাও
যতবার দেখি অজানাই লাগে। আকাশের নিচে গাছের হলুদ পাতার দিকে চলে যায় তপনদা ও তিলোত্তমা বৌদি — শাড়ির ছাপে অবিকল দাসের চকের খেত, ভূধর মদন মানিকের বদলে যাওয়া শরীরে কঙ্কালের মিমিক্রি – শ্যামাঘাসের আর্তিতে বাঁক নেয় ঠকঠকে শুকনো বক্ররেখা
গুমরে উঠে পৃথিবীর শ্বাস
বিচূর্ণ আকারের কাছে
পাতার আঘাত বুকে লাগতেই দামন শরীরের মৃত মাস উড়ে গেল, তারপর উড়তে থাকা কথার সাথে হারিয়ে যেতে থাকল লাল পলাশের রেণু, নাড়ির গতি চেপে রাখতে আর কোনো বর্ণ দেখছি না, শুকনো ঘাসের বিচূর্ণ আকারের কাছে আবারও বাতাস খেলা করছে, প্রতি মুহুর্ত অভাবের তাড়নায় শিমুল ঝরে পড়ে, তারপর সুর তোলা বাঁশির ঠিকানা খুঁজতে থাকে দিতি
তোমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে দেখার অবসর নেই কারও, এ তোমার কেমন অভিযান ; অসম্ভব পাগলামো করে যে রাত্রি তারই শিশিরমাখা ঘাসে দামনের আজ বড্ড অসুখ, চেতাকোনের দিকে এগিয়ে যাওয়া ফাটলগুলি বেঁচে থাকার সমস্ত কৌশল জেনেও করতলে তুলে নেয় বিমলা মাসির দোকান পসরার জর্দা
সারাদিন রোদ পরশের পর তোমাকে কতদিন ডাকা হয়ে ওঠেনি তৃষ্ণা, তুমি কি বিষন্নতার নামেই থাকো, দিতি
তুলসীপাতার গন্ধ
বাকেঁর ঝোপ থেকে বেরিয়ে আসছে তুলসীপাতার গন্ধ; সংলগ্ন কোমল রোদে কচুপাতা স্থির, ক্রমাগত ফ্যাকাসে ভবিষ্যতে হারিয়ে যেতে যেতে পুকুরের জলে নড়ছে দু'একখণ্ড মেঘ – কেউ জানতেও পারল না কয়েক শতাব্দি জুড়ে ভালোবাসি বলে সেও আঁচলে মুখ ঢাকতে ঢাকতে অন্ধকার হয়ে যায়; ডানা ঝাপটে ঝাপটে খুঁজে বেড়ায় লুকিয়ে রাখা অর্জুন গাছের ছায়া
আমার যা কিছু প্রকৃত ফুল এবং অন্তহীন পাখির কুজন দীর্ঘকাল ধরে মাটির ক্ষতের দিকে নির্জন
নাক বরাবর ময়লা মাখা বলিরেখারা খালধারের অস্তিত্ব নিয়ে পুনরায় জলজ হতে চায়
জলের ঈশান কোণে
জলের ঈশান কোণে বাতাস লাগতেই তরঙ্গ আছড়ে পড়ে আলিঙ্গনহীন বাঁধের ধারে,অস্থিরতা বাড়তে বাড়তে বুকের ভেতর জমতে থাকে বিশুষ্ক আর দিকচিহ্নহীন ক্ষয়গুলি, সেদিকে তাকানোর কেউ নেই – মেঘে মেঘে বেগুনিরঙা আচ্ছাদন — তারই একদিকে আকাশ ভেঙে দিচ্ছে নীল আকাঙ্খা
অন্য দিকে সুরভিত অন্ধকারে সাঁতার কাটে সুমতির ক্ষীণ তনুর জলজ প্রান্তর : পরিচিতা ঘনায়মান ক্ষুধার কোমল আর কড়ি – আমি তো ত্রিভুবনে নৈঃশব্দ্য ব্যাতিত প্রার্থনালয় চাইনি কখনোই
অবোধ আলোক পাখিরা ঘুরছে, অথচ বাতাস আর ধুলোয় দেখি জেলের ধূর্ত ফাঁদগুলি ছাঁকতে থাকে মুলতঃ মৃত্যু
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন