সৌরভ শইকীয়া-এর কবিতা
অসমিয়া থেকে বাংলা : বাসুদেব দাস






রোনাল্ডিনহো

একজন নারীর মতোই ব্যবহার করে।
সুন্দরী একজন রজস্বলা রমণীর মতোই সে
ফুটবলটাকে নিয়ে খেলা খেলে।
গ্লাসে বিয়ার ঢালতে ঢালতে,ওহো না
ডিস্কো থেকে জাজওয়েভ শুনতে শুনতে,ওহো না
ব্রাজিলের সাওপাওলোর থেকে এই হীরা খচিত রত্নটি সঙ্গে নিয়ে
হুস করে সে উড়ে যায় ইউরোপে
আর ফুটবলটি ভাবে — হানিমুন
সে চুমু খায় শব্দ করে করে 
প্রবল জোয়ারে আলিঙ্গন করে
উপচে দেয় সে গলের ঠিকানা লিখে, রোণা… রোণা

ইস !
শাসন করার পরিবর্তে মন ভুলানোর যত্ন করে
কেননা সে জানে
এই দু পা থেকেই নিক্ষেপিত হবে সেই ত্রাস সঞ্চারী মিসাইল
যেখানে বলটা আঁকাবাঁকা মেঘে তৈরি করবে অপর পক্ষকে
তাই,
ফুসলানোর চেষ্টা করে 
অন্য মন ভুলানো সামগ্রীর মতো একের পর এক অন্য পদ দিয়ে

কারণ বলটা তো জানে না
সে যে তাকে নারীর মতোই ব্যবহার করে…







আকাশই শেষ সীমা

উৎসর্গঃ ফ্রান্স বিশ্বকাপ ফুটবল ‘ ৯৮


দুষ্ট সঙ্গীরা বলেছিল
অন্য একজন  মেপেছিল ছোটো নেচে উঠা পৃথিবী

ভূগোলের অদেখা দ্রাঘিমা স্পর্শ করা সুন্দর একটি গোলাকার বল
ঘামে ধোয়া ঘাসের পা…
তাই খেলতে এসেছ নাকি
এখানে আরম্ভ হয়েছে সবুজ জ্বর।

সবুজ গুলি তোমরা ফুটবলেই মাখালে   
রাতে জেগে জেগে টেনেছ এভাবে টেলিভিশনের কাছে
আজ ভাতই খাব না মৌনতা দরজা বন্ধ করে শুয়ে থাকবে
মৌনতা আমাকে গালি দেয় তোমার খেলা দেখলে
আকাশ আমার সীমা আঁকে তোমার ভূতে পেলে 
আর আমার তো স্বভাবই এরকম,কেননা তুমি উপহার দাও 
দেখতে সুন্দর ফুটবল

সত্যি,তুমি মানেই আনন্দের উল্কাপাত
ভিজতে ভিজতে শহরটা হয়েছে কাগজের নৌকা
উত্তেজনার মিষ্টি বিজলি রেখায়  বসে জাদু দেখছি তোমার
জীবন্ত ফাঁকি দিচ্ছ তুমি
প্রতিপক্ষের নদীতে নতুন সুঁতি খুঁজছ
আক্রমণ উঠানামা করছে, মেঘ জমা হয়ে গেছে গোলবারে
তথাপি তুমি সফল হওনি
কিছু লোক চিৎকার করছে, অন্যেরা …
রণজয়ের শিহরণে ওই যে সন্ধ্যা নেমে আসছে 
কেউ নেই খেলার মাঠে
নির্জনতায় কেটে কেটে একজন লিখছে
কুয়াশার গোল খেয়ে সে মৃত্যুবরণ করছে
দেখ দেখ
সূর্যের সঙ্গে সঙ্গে ঢলে পড়ছে। 






তারকা

গায়ের রং, চুলের স্টাইল  এবং সরল হাসি
হুবহু যেন সেই কিংবদন্তি  নাহর গাছটার মতোই।
পার্থক্য বলতে কেবল একটাই—
চোখের নিমেষে ঝলসে উঠা
হাসির বিদ্যুৎ ঝলক

বিষন্ন কঠিন
খেয়ালী গাছগুলির অভিব্যক্তিতে এক ধরনের রহস্যময়
দার্শনিকতা থাকে।
যেখানে সেখানে যার তার সঙ্গে মিলেমিশে জল হয়ে যায় না সহজে
স্বাভিমান বলেও বলা যেতে পারে।
অহংকার তো থাকবেই নাহরগাছের নীল অন্ধকারের 
থাকাটা দরকারি নয় কি?
সিংহের গুহায় কে গর্জন করে
ঠান্ডা মগজের খুনি কে?

ব্রাজিলের মৃদু চারা নাহরগাছের কথা বলছি।
অসম্ভব।
ষোলোতে পা দিয়েছে মাত্র। ক্ষুধার্ত
কোমরে একটা গিটার 
হইচই লেগে গেছে দস্তুরমতো বার্সিলোনা- রিয়েলে।

আকাশ বলা কথাঃ
তরুণ তারকারা আসলে
হীরা নতুবা সোনার দামি গহনার মতোই। 
টানাহ্যাঁচড়া কর না
দৌড়ে যেতে দাও
খেলতে দাও ওদেরকে
প্রচন্ড হোক
ওরা প্রচন্ড হোক। 
রুপোলি রেখা
সৌরভ শইকীয়া
মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ বাসুদেব দাস

বর্ষণ হলে বন্যা হয়ে যেতে পারে।
গর্ভবতী
প্রতিখণ্ড ঘন , কালো মেঘের মধ্যে
ঈশ্বর আঁকা একটা রূপোলি রেখা থাকে।
সেভাবে
এই ব্রাজিল দলেও একটি নয়,
বেশ কয়েকটি রূপোলি রেখা আছে।

মনে রাখবে,
আকাশের মতো বর্ষারও একটিই নবযৌবনা
পিপাসার্ত পৃথিবী

বিশ্বকাপ যেন একটা রিভলবার
নলটা লাগিয়ে রাখা আছে
স্ট্রাইকারের মাথায়
চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেই নরকের পাসপোর্ট

আক্রমণই শ্রেষ্ঠ প্রতিরোধ।
আক্রমণ কর
হৃদয়ে আক্রমণ কর।






তারকা ২

অনুগ্রহ করে
চুম্বন আর বোতল ছুঁড়ে দেবেন না

সেলফি তোলা থেকে
বিরত থাকুন।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন