অভিবাসী সারস

মৌলিক কবিতা : অতনু রায় 

বক নয়, বক নয়...
মাথা টান করে উড়ে চলা
উদ্বাস্তু সারস।

উদ্বাস্তু হতে হতে
পরশুদিনই হয়তো হয়ে যাবে
স্মৃতি ও নিশ্চিহ্ন--
ওই পড়ে থাকা শ্বেত করবীর মতো...

ঝাঁকে ঝাঁকে--
আমাদের এ-পৃথিবীর সব এপারে, ওপারে ও পরপারে!.....







ইয়াসলো *  ক্ষুধা শিবির

ভিশওয়াবা শিম্বোর্সকা
অনুবাদ :  অতনু রায়

লেখো। লিখে ফেলো। সাধারণ কালিতে
সাধারণ কাগজে: 'তারা কোনও খাবার পায়নি,
তারা সবাই ক্ষিদেয় মারা গেছে।' "সবাই, কতজন?
এই ছড়ানো প্রান্তর!কত ঘাস তাদের
প্রত্যেকের জন্য?" লেখো: 'আমি জানিনা'।
ইতিহাস জোড় সংখ্যায় এর কঙ্কাল গুনে চলে।
এক হাজার এক, এক হাজার হয়,
যেন এক কোনদিন ছিলই না!--
পৃথিবীর আলো না দেখা এক অলীক ভ্রুণ... খালি দোলনা...
খোলা বর্ণপরিচয়--এসব কার জন্য?
বাতাস হাসছে, কাঁদছে, বেড়ে উঠছে,
শূন্যতা সিঁড়ি বেয়ে বাগানের দিকে ছুটে যাচ্ছে,কিছুই নিজের জায়গায় স্থির নেই।

সেই প্রান্তরে আমরা দাঁড়িয়ে আছি যা মাংসে পরিণত হয়েছে।
সেই প্রান্তর যা মিথ্যা সাক্ষীর মতো নিশ্চুপ হয়ে আছে।
রৌদ্রস্নাত উজ্জ্বল। সবুজ। পাশেই ছিল অরণ্য যেখানে
চিবোনোর জন্য কাঠ আর গাছের নীচে দেখার জন্য, রেশনের মতো বরদ্দ টলটলে জল ছিল,
যতক্ষণ-না কেউ তাকাতে তাকাতে অন্ধ হয়ে যেত।
মাথার উপরে ছিল খাওয়া-যেত এমন পাখি, যার জীবনদায়ী ডানার ছায়া তুলির মতো তাদের ক্ষুধাতুর ঠোঁটে প্রলেপ দিয়ে উড়ে যেত।
তাদের চোয়াল হাঁ-করা... দাঁতে দাঁত ঠকঠক করা...।
রাত্রিতে বাঁকা কাস্তের মতো চাঁদ রুটির জন্য গম কেটে  আনত।
কালো কালো ছায়ার মধ্যে থেকে শূন্য পেয়ালা নিয়ে হাত ভেসে আসত।
কাঁটাতারের রসে একজন লোক মোচড় নিতো।
পৃথিবীর মাটি মুখে নিয়ে তারা গান গাইত--
" মধুর যুদ্ধ কেমন মর্মে এসে ঘা দেয়।"
লেখ:'কেমন নিস্তব্ধ।'
"হ্যাঁ।"



[* 'ইয়াসলো' পোল্যান্ডের একটি শহর।]

[এই কবিতাটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের কথা মনে করায়। এটা যেন এক কবি ও এক সাংবাদিকের মধ্যে, বা এক প্রত্যক্ষদর্শী ও এক ঐতিহাসিকের মধ্যেকার কথোপকথন।]










কবি পরিচয় :

ভিশওয়াবা শিম্বোর্সকা [(Wisława 
Szymborska, (১৯২৩-২০১২)] পোল্যান্ডের একজন বিখ্যাত কবি, প্রাবন্ধিক এবং অনুবাদক। তাঁকে 'কবিতার মোজার্ট' বলা 
হয়।উনি ১৯৯১ সালে গ্যয়েটে পুরস্কার এবং ১৯৯৬ সালে নোবেল পুরস্কার পান। এই বছর ওঁর  জন্মশতবর্ষ চলছে। ]

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন