শূন্যে ফেরিওয়ালা বৃত্তে বেলুন 

পর্ব-১০

ভালোবাসা শব্দটির কতগুলো রূপ আর কতগুলো অধ্যায় তা জানতে জানতেই জীবন ফুরিয়ে যাচ্ছে৷ আজ বহু বছর দেশ ছাড়া, আবেগ কিভাবে ধূলিস্যাৎ করে দিয়ে নতুনের সাথে গা ভাসিয়ে বেঁচে নিতে হয় রোজ শিখেছি৷ এই জীবনে পারি না বা পারব না বা সম্ভব নয় কথাগুলোর কোন স্থান নেই৷ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গা নিমেষে কখন চলে যেতে হয় নিজেও বুঝি জানি না৷ আমরা যাযাবরেরা কোনদিন বৃক্ষ হতে পারি না৷ আমাদের জীবন ভরভরন্ত ফুটবল খেলার মাঠের একমাত্র শিরোমণি ফুটবল। এই জীবনে ভালোবাসাগুলোও সব যেন পরিযায়ী পাখি। যে যার নিজের মতো আসে৷ ভালোবাসার অধ্যায় রচনা করে আবার একবুক অভিমান নিয়ে ফিরে যায়৷ যেন কিছুই কোনদিন পায়নি, যেন পাবার মতো কিছুই কোনদিন ছিল না৷  

জীবন যাই দেখাক না কেন দেখে যেতেই হয়। সে পছন্দ হোক কিংবা না হোক। এই যেমন পশ্চিমবঙ্গের লোকেরা এখন বলছে নাকি বিরাট গরম পড়েছে৷ এ তাদের পছন্দ না৷ কিন্তু ভুগছে৷ আমাকে আর দুদিনের মাথায় পুণে চলে যেতে হবে৷ কেন না গোয়ার পাঠ শেষ৷ এই সিরিজটা যেদিন প্রথম লিখেছিলাম সেদিন মুম্বাইয়ের দীর্ঘ জীবন চুকিয়ে গোয়া এসেছিলাম৷ আজ আবারও অন্য জায়গায়৷ 

এপ্রিল মাস অনেককিছু দেখায়। জীবনের নতুন মোড় এই এপ্রিল মাসেই আসে৷ আমি জন্মেছিলাম এগারোই এপ্রিল৷ তারপর থেকে কত ঘটনা৷ আমার কত বন্ধুবান্ধব জন্মেছে। জীবনের অনেক মূল্যবান জিনিস হারিয়েছি এপ্রিলেই, আবার পেয়েওছি। আমার দাদু মারা গেছিলেন এমন সময়, সেজ মামা, শ্বশুরমশাই। শুধু যে মানুষ মরে যায় তা না৷ সম্পর্কও মরে যায়৷ জীবনের প্রথম প্রেম ফুরিয়ে গেছিল এপ্রিলে, যে ছেলেটার আমি প্রিয় বান্ধবী ছিলাম সেও হারিয়ে গেছে এপ্রিলেই৷ এতো কিছু বছর বছর ঘটে, আজ এপ্রিলের শেষের দিকে এসে বুক কাঁপে। প্রিয়মানুষগুলির সাথে কথা-কাটাকাটি হলে কিংবা প্রিয় বন্ধুর সাথে রাগারাগি হলে বুক কাঁপে। হাত-পা অবশ হয়ে আসে। কারণ এপ্রিল আমায় কোনদিন রেয়াত করেনি। 

আজ দুপুরে হঠাৎ করেই নোজ ব্লিডিং হয়েছে। অথচ আমি লো প্রেসারের মানুষ। কখন কিসে প্রেসার হাই হয়ে যায় চাপা উত্তেজনা জানে সেসব৷ মেয়ের হাত ধরে জিজ্ঞেস করেছিলাম, "আমায় ছেড়ে চলে যাবি মা?" শুনে মেয়ের চোখে জল আসে, বলে কেন? বললুম,  আমি যে এতো রেগে যাই, তোকে খারাপ কথা বলি। ও বলল, তুমি তো আমায় ভালোওবাসো৷ আমি সেটাই ভেবে নিই তোমার রাগের সময়। সন্তান এক অদ্ভুত সৃষ্টি ঈশ্বরের। বড়মানুষে যা বোঝে না শিশু-সন্তান তা বুঝে নেয়৷ আমি ওকে দেখে ভালোবাসতে শিখি নতুন করে৷ জ্যোতিষী বলেছিলেন আমার মেয়ে নাকি জ্ঞানী প্রকৃতি হবে৷ ওর অনুভূতি আমায় ভাবায়৷ ওকে বললাম গোয়া ছেড়ে যাবার কথা। বলল, এখানে অনেক মহিষ, রাস্তায় হাঁটা যায় না এতো পটি। এর থেকে অন্য কোথাও ভালো৷ 

অপছন্দ নিয়ে বেশি দিন থাকতে নেই। আবারও মনে হল। অ্যাডজাস্টমেন্ট অতিরিক্ত হলে মানুষের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে। এর থেকে প্রকৃতির সাথে বিলীন হয়ে যাওয়া সম্ভবপর ধারাপাত। 

গোয়ার মানুষগুলো আমার কাছে বিস্ময়ের আরেক অধ্যায়৷ এদের জীবনের উদ্দেশ্যই হল মানুষকে সাহায্য করা৷ এত আপন কে যে কবে শেষ করেছিল আমার মনে পড়ে না৷ আগামীকাল মেয়ের স্কুলের এক দিদিমনির বাড়ি নেমন্তন্ন৷ কী সুত্রে বাঁধা, কোন জন্মের এমন সম্পর্ক যে জানে৷ এখানে এই এক বছরে কোন ইমোশনাল অ্যাটাচমেন্ট তৈরি হয়নি৷ তাও যেন ছেড়ে যাবার সময় মনটা হু হু করে উঠছে৷ শেষ মুহুর্তের নানান ফরমালিটি সমেত এই চরম ব্যস্ততায় Heaven in Earth নামক পর্তুগীজদের তৈরি করা গোয়া রাজ্যটি বুকের মধ্যে হীরের মতো জ্বলজ্বল করছে৷

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন