রাবণের হনুমান-চালিশা-পাঠ
এভাবে পৌষ জড়িয়ে শুয়ে
থাকার কোনো মানে হয় না। কিন্তু যাঁর ইনকাম
চড়ুইপাখির ঠোঁট, সে কীভাবে হিমবেলায়
জৈষ্ঠ পাবে?
হিম শব্দটিতে মনে পড়ে গেল,
বীজগণিতের একটি সূত্র হিম আর হেমের
পার্থক্য বুঝতে সারারাত কাটিয়ে দিল। তারপর
তার চোখ জবাফুলের হাট।
পৃথিবীতে ৩ রকমের দুঃখ আছে।
এই দুঃখগুলো দিনেরবেলা গোল, আর রাত্রিবেলা
চৌকো হয়ে যায়।
জ্বলতে জ্বলতে গ্যাসের ওভেনটা
বোবা। জ্যামিতির কোনো সূত্র দিয়ে তাকে
কথা বলানো যাবে?
যাঁরা বলে না, তাদের কথা থাক।
বাগানের মালি আসছে। সে ফুলের কাছে
ভক্তিযোগ শেখার পর,
রাবণের হনুমান-চালিশা-পাঠ শুনতে পায়।
খিদের জটিল অঙ্ক
জবাগাছটির জ্বর হবার পর,জানালাটির-ও জ্বর এসে গেল। এখন কি
তারা-গোনা সংবিধানিক হবে?
কালীর আরেক নাম তারা। তার মানে এই নয়,
সন্ধ্যাতারা মানে সন্ধ্যার কালী।
আমি ৭ দিন বেড়াল-ডাকের মিমিক্রি
করিনি। তাই আমার আলজিবটি
একাকিত্বে ভুগছে।
কে আমাকে পাহাড়-চূড়ায় দেখতে চায়,
আর কে খাদের নীচে সব জানি।
যাঁরা খাদের নীচে দেখতে চায়, তাঁরা কি
লজ্জাবস্ত্রের গোলাপি লজ্জার কথা জানে?
যেখানেই খিদের জটিল অঙ্ক নিয়ে কথা হয়,
আমি বলি,
খিদেকে মাংস-ভাত দিয়ে ভাগ করলে,
ভাগফল চোঁয়া-ঢেকুর।
ভাগশেষ ভাতঘুম।
ঘরে বোকা-বেড়াল রাখবি না
এই চিলেকোঠাতেই একটালাল-ট্যামাটো আর একটা রোগা-বেগুন
কদমফুলের গন্ধ নিয়ে লোফালুফি করছিল।
সেখানে হঠাৎ-ই পুঁইকিশোরী হাজির।
সে কি এই বয়সেই a + b -এর নামতা জানে?
দুজনেই থ।
পুঁই বলল, আমাকেও গন্ধ লোফার খেলায় নাও।
খেলা শুরু। আর এই সময় একটা
বোকা-বেড়াল হালকা হবে বলে সেখানে এসে
হাজির।
সাধে কী গাজর-ঋষি আর ফুলকপি-মুনি
বলেছেন,
ঘরে বেড়াল রাখলে-ও
কখনো বোকা-বেড়াল রাখবি না।
ওরা টম্যাটোর ব্রা রাঙাআলুর ঘরে রেখে,
গৃহযুদ্ধ বাঁধিয়ে দিতে পারে।
ন্যাপথলিন
জয়দেব নামে ন্যাপথলিনটিসুদেষ্ণার ব্লাউজে ঢুকে তাকে কদমফুলের
হেঁয়ালি শোনায়।
তার ভাই অমিতাভ কম যায় না,
সে হৈমন্তীর সালোয়ারে ঢুকে তাকে গলা
ছড়িয়ে শুনিয়ে যায় বর্ষামেঘের গান।
তার বাবা চরণদাস মিচকে শয়তান,
সে মাধবীমাসির শাড়িতে ঢুকে সারারাত খুব
মেঘদূত পড়ে।
এ-সবই করে তারা আলমারির ভিতর।
একটা রাগি পাজামা একদিন সব জানিয়ে
দিল।
সমস্ত পোশাক একমত, ওরা দুশ্চরিত্র
আলমারিতে ওদের রাখা যাবে না।
ওদের তাড়িয়েও দেওয়া হল।
এখন সব পোশাকের দোকানে জগন্নাথের
রথযাত্রা।
ক্রিয়াপদের ওপর গোয়েন্দাগিরি
আমার টুথপেষ্টের ভিতর যতগুলোপাখির গান আছে, আমি তারমধ্যে শুধু একটা
গান শুনতে পাই।
বাকিগুলো কেন পাই না, সে-বিষয়ে কি
টুথব্রাশের অভিমত গ্রাহ্য হবে?
আজ সকাল থেকেই দেখছি,
নীল ডাকবাক্সটির পাশে দু-তিনিটে বখাটে
ক্রিয়াপদ ঘোরাঘুরি করছে।
ওরা কি আমাকে পাঠানো জুঁইফুলের প্রেমপত্র
চুরি করতে এসেছে?
ওরা জানে না চুরি করা অপরাধ? ওরা যদি
চোর হয়ে যায়, তাহলে ওদের দেখেই,
বিশেষ্য বিশেষণ সর্বনাম আর যতিচিহ্নগুলি-ও
চোর হয়ে যাবে। তার ফলে সাহিত্যের গায়ে
স্বরবর্ণ আর ব্যঞ্জনবর্ণ ছুড়ে দেবে থুতু।
আকাশে উড়ে যাচ্ছে মেঘ। সমস্ত সমাস তাকে
বিদ্রুপ ছুড়ছে।
এতে মেঘদূত থেকে বেরিয়ে যক্ষ,
ওদের বিরহ ছুড়ে মারবে ওরা বুঝতেই
পারছে না।
শ্রীমতী ত্রিভুজ বলতে পারবেন
টেবিলটির থেকে চেয়ারটিরদূরত্ব ৩ ফুট। চেয়ারটি টেবিলটির আরো
কাছে গেলে, পলাশফুলের অভিমানের কারণ
জানা যেত।
টেবিলটি মেহগনি কাঠের। আর চেয়ারটি
আকাশমণির।
ওদের শারীরিক গঠনে বিশেষ মিল নেই।
শুধু একটাই মিল, দুজনেরই ৪টে পা।
টেবিলটি মেহিগনি কাঠের। তাই নিজেকে ব্রাহ্মণ
ভাবে। আর চেয়ারটিকে ভাবে ডোম।
এই ভাবনাগুলো কতটা ভিক্টোরীয় আজ সেকথা
অবান্তর।
২ জনেরই ৪টে পা। ওরা দৌড়তে পারলে কে
জিতবে?
এই প্রশ্নটি মাথায় আসতেই পারে। কিন্তু জ্যামিতি
না জানলে, প্রশ্ন আসার সম্ভাবনা কতটা,
তা শুধু,
শ্রীমতী ত্রিভুজ বলতে পারবেন।
বাইসনের স্বর্ণযুগ
আমি চোঁয়া-ঢেকুরের ওপর পিএইচ.ডি করাবদহজমকে,
চুলকুনিকে জাহান্নামে পাঠানো নখকে, অথবা
অভিমানী সাইকেলের ঘণ্টাধ্বনিকে
বোঝাতে পারব না,
লিপস্টিকগুলি হুপিংকাশিতে ভুগতে থাকলে
শীত আসে।
কলকেফুলের শনির দশা পড়লে চুমুখোর ঠোঁট
বীজগণিতের সূত্র ভুলে যায়।
এটা চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে খুব ক্ষতিকর।
কতটা ক্ষতিকর,
তা শুধু প্রজাপতি বিস্কুটের ওপর সানাই শুনতে
পাওয়া যুবতিরা জানে।
পেরেক-ওঠা-জুতো পায়ের সঙ্গে কর্কশ ভাষায়
কথা বলছে।
এতে বর্ষামেঘ ব্লাউজ খুলে বৃষ্টি দেবে না
কীভাবে বোঝাব?
যাঁরা জলফড়িঙের গান আর প্রজাপতির বিরহকে
একই সরলরেখায় রাখতে চাইছে,
তাঁরা বুঝতেই পারছে না, তাঁদের চারপাশে
বাইসনের স্বর্ণযুগ চলছে।
ত্রিভুজের গর্ভগৃহ
ত্রিভুজের গর্ভগৃহে ঢোকার পাসওয়ার্ড :সকালবেলা : green22@redapple
দুপুরবেলা : blue19@greenapple
সন্ধেবেলা : red16@blueapple
এই গর্ভগৃহ প্রতিদিন
সকালবেলা : বৃক্ষস্তব
দুপুরবেলা : রোদবন্দনা, আর
সন্ধেবেলা : তারাদের আগমনি গানে ভরে ওঠে।
আমি মাঝরাতে ত্রিভুজের গর্ভগৃহে ঢোকার
পাসওয়ার্ড জানি না।
এই পাসওয়ার্ড,
রোবট সংহিতা'য় নেই
এলিয়েন উপনিষদ-এ নেই, এমনকী
সাইবার গীতা-তেও নেই।
আমাকে বীজগণিতের জুলিয়েট বলল,
এই পাসওয়ার্ড সরলরেখা জানে।
আমি কীভাবে সরলরেখার দ্যাখা পাব?
সে-তো বরফের গজল শুনবে বলে চলে গেছে
আন্টার্কটিকায়।
বীজগণিত
বীজগণিত ভালোবাসি বলে,পাটিগণিতের তিনটে বখাটে অঙ্ক আমাকে
থ্রেট দিল। ওদের থ্রেট হালকাভাবে নেওয়া যাবে না।
বুঝতে পারছি, যেকোনো দিন, ওরা আমাকে
জ্যামিতির সমীকরণ ছুঁড়ে মারবে। তারপরই দ্যাখা
যাবে, আমার হাত দুটো লম্ব, পা দুটো ত্রিভুজ,
মাথাটা বৃত্ত, আর বুকটা আয়তক্ষেত্র হয়ে রাস্তায়
পড়ে আছে। তা হোক। তবু আমি a2 + b2
ফর্মুলা জড়িয়েই ঘুমোব। নইলে কিছুতেই
বর্ষা আসবে না।
ছেঁড়া-পাজামার বিষাদ
মেহেদিগাছের মনখারাপ দেখেই বুঝেছি,ঘোড়াগুলি বদরাগী হয়ে উঠবে, কিশোরী
আপেলের ক্যাপ্টেন-ও আমাকে সেই কথাই বলল।
সাদা-কাগজের অঙ্ক খাওয়া দেখে নেলকাটারটি
চুপ। নখকে বিরক্ত করার তার কোনো ইচ্ছে নেই।
আজ ছেঁড়া-পাজামার বিষাদকে বেহালা বললাম,
আর ফুলতোলা পাঞ্জাবিকে সরোদ। এতে ধূপদানির
ধর্মচর্চার পরিবর্তন হল না। আমি ফুটপাথের হইহল্লার
মাঝেই শুনেছি, লাল-রঙের টুপি পরলে, নীল-রঙের
মেলবক্স কুয়াশায় ভরে ওঠে। এখনো আয়ানায়
পারফিউম ছড়ালে রুমাল বেরিয়ে আসে।
তবে এই রুমাল দিয়ে ইঁদুর বানালে, সব বেড়াল
নাস্তিক হয়ে যাবে...
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন