শূন্যে ফেরিওয়ালা বৃত্তে বেলুন 

পর্ব– ৯


সুদূর জলপাইগুড়ি থেকে আজ একটি পত্রিকায় এলো। খুব আনন্দের সঙ্গে ফেসবুকে আপডেট করলাম, 'পত্রিকা এল পূর্ব থেকে পশ্চিমে এ যেন ক্রস কান্ট্রি ট্রিপ'। এই ক্রস কান্ট্রি ট্রিপ কথাটা আমি শিখেছিলাম আমেরিকাতে থাকতে। আমি থাকতাম ক্যালিফোর্নিয়াতে ওখানে গাড়ি চালানো শেখার পর সবাই বলতো নিউইয়র্ক যাবে। যে প্রান্তে ক্যালিফোর্নিয়া একদম বিপরীতে নিউইয়র্ক। অর্থাৎ এপার থেকে ওপার। যারা বেশ কিছু বছর আমেরিকায় থেকে গেছে তাদের কাছে নিজের গাড়ি নিয়ে এই ক্রস কান্ট্রি ট্রিপটা খুবই মজাদার। তলপিতলপা বেধে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। পথে যতগুলো রাজ্য পড়ে সব দেখতে দেখতে চলে যাওয়া যায়৷ তবে সময় লাগে অনেক বেশি৷ খুব স্বাভাবিক, কারণ আমেরিকার মতো মহাদেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তের দূরত্বই যে প্রায় ২৯০১ মাইলেরও বেশি৷ শুনেছিলাম গাড়িতে টানা গেলে প্রায় ৪৫ ঘন্টা লাগে৷ ও দেশে গাড়ি আমাদের দেশ অপেক্ষা অনেক বেশি ছোটে। ফ্রী ওয়েসগুলোতে অনেকগুলো লেন। কেউ কাউকে ওভারটেক করে না। বড় বড় ডাম্পারের আলাদা লেন। রাস্তাঘাটের নিয়ম কেউই খুব একটা লঙ্ঘন করে না৷ ফাইন যে অনেক৷ 

এতো সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপারের গল্প। আমার দেশে কি হয়? গোয়াতে যখন নতুন এসেছিলাম আমার এক পাড়াতুতো দাদা বলেছিল সন্ধের পর গাড়ি নিয়ে বেরোলে যেন নিজের দায়িত্ব বেরোই। রাস্তায় আমি বাদে সকলেই মাতাল। আবার আমার গাড়ি যদি কেউ ধাক্কা দেয় তবে তা আমারই দোষ আমাকে পুলিশে সাইন ভরতে হবে। শুনে তো অনেকটাই অবাক হয়েছিলাম ভাবছিলাম কোথায় এসে পড়লাম। ভারতবর্ষের রাস্তায় যে খুব একটা নিয়ম নেই সে কথা মুম্বাইতে যখন ড্রাইভিং স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম তখনই জেনেছিলাম। আমার ট্রেনার রাম বলেছিলেন যখন গাড়ি চালাবে স্টিয়ারিং এর সাথে সাথে ডানদিক বা'দিক পেছনে সামনে চোখের সাথে মস্তিষ্ক সব দিকেই খোলা রাখতে হবে। কারণ বাইকারদের কোন ভরসা নেই। ওরা নিয়মের মাথার উপর দিয়ে চলে। যেকোনো দিক থেকে ওভারটেক করবে, হঠাৎ করে সামনেও চলে আসতে পারে। অতএব নিজের প্রাণ নিজের হাতে। 

ফিনান্সিয়াল ক্যাপিটাল হিসেবে মুম্বাই অনেক উন্নত সেখানকার ট্রাফিক রুলস অক্ষরে অক্ষরে না মানলেও অনেকটাই মানুষজন মেনে চলে। কিন্তু গোয়া! সত্যিই অদ্ভুত এক রাজ্য। একদিকে যতটাই ভালোলাগা কাজ করে আরেক দিকে অবাক হওয়ার যেন সীমা পরিসীমা নেই। পশ্চিম হিসেবে এখানে সূর্য অনেক দেরিতে অস্ত যায়। এখানে শীতকাল আসে না। সারা বছরই খটখটে রোদ আর মাঝের চার মাস মেঘফাটা বর্ষা। এই দিনগুলোতে রোদের তাপ যত বেশি বাতাসে জলীয়বাষ্প ততই কম। ঘাম হয় না, পা ফেটে যায়, গা পুড়ে যায়। এমন দিনে বোতল বোতল ময়শ্চারাইজারও শেষ হয়ে যায়। তবুও কেন জানিনা পশ্চিমই যেন ভালো লাগে। হয়তো দীর্ঘদিনের বাস। এদেশের কোন কালচারই তো আমাদের বাঙালিয়ানার ধারে পাশে যায় না। তাও যে খুব খারাপ থাকি তা মনে হয় না। তবে কবিতা টানে। দেশে মানে পশ্চিমবাংলায় থাকলে কবিতার টানে এদিক ওদিক যেতাম, তার তো আলাদাই একটা আনন্দ। তা থেকে বঞ্চিত হই দিনের পর দিন বছরের পর বছর। তবুও চেষ্টা করি যাবার, বা ছুটির দিনগুলোতে, ওখানে থাকার দিনগুলোতে কবিতার জন্য ছুটে যাই। যেমন এবার বইমেলায় গেলাম সে এক অদ্ভুত আনন্দের  অভিজ্ঞতা। এ নিয়ে পরে লিখব একদিন৷



চলবে...

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন