নীলিম কুমার-এর পাঁচটি অসমীয়া কবিতার  বাংলা অনুবাদ করেছেন বাসুদেব দাস 




খবরের কাগজের নগরটি

এই শহরের সবচেয়ে
বুড়ো মানুষটি
প্রতিদিন বারান্দায় বসে অপেক্ষা করে থাকে খবরের কাগজটির জন্য

তার খবরের কাগজটি না পড়া পর্যন্ত যেন এই শহরে
সকালগুলি আসতেই পারে না।

খবরের কাগজটি  না পড়া পর্যন্ত
তাঁর গলা সকালের
এক কাপ চা ও গিলে না।

তাঁর পত্নী চায়ের কাপ নিয়ে
ঠিক তখনই উপস্থিত হয়
যখন তাঁর চোখ পড়তে শুরু করে
প্রথম পৃষ্ঠার শিরোনামগুলি

চায়ের কাপের সঙ্গে তিনি খবরের কাগজটি পড়ে শেষ করে

তারপরে তিনি
স্নান করতে যান
এবং
খবরের কাগজের সমস্ত অক্ষরগুলি ধুয়ে ফেলেন

তিনি খাওয়া চায়ের কাপটা ধুয়ে ফেলেন তাঁর
পত্নী।






প্রেমের ব্রেকফাস্ট

প্রেমের ইঙ্গিতগুলিই ছিল তোমার সেদিনের ব্রেকফাস্ট
অথচ তুমি ভেবেছিলে– ফুলকো ফুলকো লুচি আর
মিহি মিহি আলু ভাজা দিয়ে তুমি পেটভর্তি করেছ।
স্মৃতির বোতল খুলে পুরোনো গানের স্বাদ পাওয়া
এক টুকরো আচারও তুমি চেয়ে এনেছিলে।আর
জিহ্বাকে দিয়েছিলে চকচকে দুপাটি দাঁত দিয়ে
কামড়ে কামড়ে খাবার জন্য!
অথচ জিহ্বা জানত না আচার টুকরো ছিল 
একটা গানে বাজতে থাকা হারমোনিয়ামের সুর …

ব্রেকফাস্টের স্বাদের ঘূলিটা থেকে 
তুমি যতই বেরোতে চাইছিলে, ততই তোমাকে
কিছু একটা টেনে নিচ্ছিল। তোমাকে টানার জন্য
তোমার ভেতরে যে তুমিই ছিলে, সে কথা 
কেউ তোমাকে বলল না

ব্রেকফাস্ট করে তুমি সেদিন ঠিক করেছিলে–
ব্রেকফাস্টই হবে তোমার প্রধান আহারের সময়।
আর অবজ্ঞা করার জন্য আরম্ভ করেছিলে
দুপুরের আহার

তাই আজকাল প্রেমগুলি দুপুর পর্যন্ত থাকেই না
ব্রেকফাস্টেই শেষ।







লাল জামা

এখনও সম্রাটের মতোই তিনি আসেন

তাঁর লাল জামাটা
একটা পাথরের খোড়লে ছেড়ে রেখে আসেন

তিনি এলে এখন আর
কেউ সেতার বাজায় না
গাছগুলি বিছিয়ে দেয় না চাঁদোয়া
কেউ কোথাও পেতে রাখেনা সবুজ কার্পেট
বাটিতে কেউ ঢেলে দেয় না
রক্তের মদিরা

পাথরগুলির মধ্য দিয়ে তাঁর ক্লান্ত ঘোড়াটা
নেমে আসে রঙ্গিন হয়ে

বিষণ্ণ আকাশের নিচে তিনি যখন দাঁড়ান
তার রাজন্যবর্গ  তাকে চিনতে পারেন না
কারণ
তিনি লাল জামাটা পরে আসেননি।







প্রদীপ

জ্বলছিস হয়তো তুই 
পোড়ানোর জন্য আমার  বুকের  অন্ধকার?
তোর অর্ধেক জীবন গেল

একটুও অন্ধকার দূর হল না
জ্বলে জ্বলে এখন দেখছি
তুই শেষ হবি
নিজে  দেখছি ডুবে যাবি অন্ধকারে

কেবল ঈশ্বরই তোর খোঁজে আসবে
তিনি তো খুঁজে পাবেন না
এত অন্ধকারে তোর আত্মা
তোর খোঁজে পুনরায়
তোকেই জ্বালাবে ঈশ্বরও
ওহে অবোধ প্রদীপ
অন্ধকারও   দুঃখী
তোকে দেখে
কীভাবে বলি শুভ দীপাবলী???








পচন

পচে পচে আধার মতো থাকতেই
আমি কোনোমতে আবর্জনার মাঝখান থেকে
আমাকে বের করে আনলাম,
এবং ধুয়ে মুছে উঠে দাঁড়ালাম।
এখন কি কাপড় পরব—
তা নিয়ে দ্বিধায় পড়লাম।

মরচে  ধরা স্মৃতির বাক্স খুলে  আমি
খুঁজে বের করলাম কী কাপড় পরেছিলাম
একজন  মানুষের সঙ্গে ফোটো তোলার সময়!
তখনই দেখলাম আমার একটি আঙুল
আবার পচতে  শুরু করেছে।
বুঝতে পারলাম—স্মৃতি থেকেই আরম্ভ হয় পচন।
স্মৃতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য
যা পাই  তাই করে গেলাম।
সামনে হোটেল একটা ঢুকে গেলাম
লোকেরা যা খাচ্ছে।তাই খেলাম।।
পয়সা দিতে না পেরে মার খেলাম।মার খেয়ে
বড়ো আনন্দ পেলাম।। শরীরটা সতেজ হয়ে উঠল
আমার শরীর থেকে পচা পচা ভাবটা সরে গেল।
আমার হাতে থেকে গেল একটু ক্লান্ত স্মৃতি
আমার নখগুলির মধ্যে  আত্মহত্যা করার জন্য সুযোগ ছিল না স্মৃতিগুলির।
নখ এবং চুলগুলি  বাড়তে থাকার পর থেকেই  
আমরা জানতে পারলাম যে আমাদের ভেতরে
অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলি বেঁচে থাকে।
দুঃখগুলি নিজেকে অপ্রয়োজনীয় বলে ভেবে ভেবে
স্মৃতির কাছে গিয়েছে



অনুবাদ : বাসুদেব দাস 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন