লোহা 

টাঙি, বল্লম, খোঁচ 
ছুরি অথবা কাঁচি 
যাদের আমি একদিন 
হাতে তুলে নিতে চেয়েছিলাম 

আজ পায়ের কাছে নামিয়ে রেখেছি 

তাদের 
চিরকালের মতো 
চলে যেতে বলি 

প্রথমে তারা 
একতাল লোহা হয়ে যায় 

তারপর 
লোহা থেকে মানুষের কায়া নেয় 

আমি তাদের রক্তমাংসের মানুষ করে তুলি 






হাতিঘোড়া 

হাতিঘোড়া দেখলেই 
দেবতা ভেবে প্রণাম করবেন না 

মাটিতে 
আছাড় মেরে দেখে নেবেন 
মাটির না ধাতুনির্মিত 

একমাত্র 
রক্তমাংসের হাতিঘোড়াই 
আমাদের উপাস্য দেবতা 

মন্দির-মসজিদ নয় 
রাস্তার ধারে দাঁড় করিয়ে 
প্রণাম করব 

আর
সালামও করা যেতে পারে 





ডানা  

নৌকা করে 
একটা 
নদী পেরতে চাইছিলাম 

আর ঠিক 
তখনই জল ফুলে উঠল 

তখনই ঝড় শুরু হল 

তখনই পশ্চিমি ঝঞ্ঝা 

আশ্চর্য 
সামনে 
একসঙ্গে এতগুলো প্রতিকূলতা 

সবচেয়ে আশ্চর্যের 
প্রতিটি প্রতিকূলতার 

মানুষের মতো হাত-পা আছে 

একান্ত বাধ্য হয়েই 
নিজের দু'পাশে 
দুটো ডানা জুড়ে নিলাম 





ফুটো 

এমন নয় যে 
আপনার সঙ্গে মেশা যাবে না 

আমি 
তেমনটা মনে করি না 

কারণ 
আপনার হাত-পা আছে 
একমাথা কালো চুল আছে 
নাক-চোখ তাও আছে 

সর্বোপরি 
আপনার 
মানুষের অবয়ব আছে 

আমি তাই 
আপনাকে ডাস্টবিনে 
ফেলে দিতে পারি না 

যারা আপনার সারা গায়ে 
পয়সার ছাপ দিতে চায় 
আমি তাদের গায়েও পয়সার ছাপ দিয়ে 
আয়নার সামনে দাঁড় করাতে চাই 

তারা 
তাদের ফুটোগুলোও 
একবার দেখে নিক 

এই পৃথিবীতে 
ফুটোহীন মানুষ পেলাম না 

একটাও 






আত্মা 

আমার যাকিছু ছিল 

হয়তো 
কিছু গাছপালা 

হয়তো 
কিছু গোরু এবং মোষ 

আর 
হয়তো 
ফকির মাঝিরা 

তারা সবাই 
ইহলোক ছেড়ে চলে গেছে 

কিন্তু 
এখানে ওখানে 
তাদের কঙ্কাল পড়ে আছে 

আমি তাদের সঙ্গে আত্মা জুড়ে দিই 

তারা সবাই 
আবার বেঁচে ওঠে 

আত্মারা না থেকেও 
অদ্ভুদ ভাবে থেকে গেছে 

মানুষের মুখে মুখে 






ছাই 

ছাই ঘাঁটতে ঘাঁটতে মনে হয় 
সবকিছুর এটাই পরিণতি 

মনে হয় 
সবুজ বলে কিছু হয় না 

আর 
সতেজতা বলেও কিছু নেই 

অভিজ্ঞতাই শেষে 
সব ভুল ভাঙিয়ে দেয় 

রাস্তার চারপাশে ছড়িয়ে থাকা টুকরোগুলো 
জোড়া লাগালেই 
আবার গোটা হয়ে যায় 

দেখলাম 
জীবনের ক্ষেত্রেও তা-ই 

গাছগুলোও অখণ্ড 







আততায়ী 

হাতে ছুরি বা পিস্তল নেই 

তার মানে 
সে আততায়ী নয় 
তেমনটা নয় 

যে সমতল পাথর শুয়ে আছে 
তার ভেতরেই কদাকার মূর্তিগুলো লুকিয়ে থাকে 

যেমন জল 
তার মধ্যেও তা-ই 

সমতল পাথর অথবা 
জলের অন্ধকারের ভেতরেই 
আততায়ী ঘুরে বেড়ায় 

হাতে বন্দুক-পিস্তল-ছুরি থাকা না-থাকাটা 
জরুরি কিছু নয় 






অপরাধ 

দূর থেকে মনে হলো 
ভীমের গদার মতো 
একটা মুগুর দিয়েই মারা হচ্ছে 

মনে হলো 
অপরাধীকে থেঁতলে 
গুঁড়ো করেই ছাড়বে 

হঠাৎ 
হাততালিতে ফেটে পড়ল চতুর্দিক 

গাধাদের কথা ছেড়ে দিলাম 
একটা ঘোড়াও আনন্দে 
হো হো করে হেসে উঠল 

কাছে গিয়ে দেখলাম 
মৃদু হাওয়াতেও 
গদার মতো মুগুরটা নড়ে উঠছে 

হালকা শোলার ক্ষেত্রেও 
যেমনটি হয়ে থাকে 

চোখ ধোওয়া জলে 
অপরাধ ভেসে যায় 






কিলবিল  

আমি কখনওই 
হাতের মুঠোয় থাকতে চাইনি 

আপনাদের 
আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে 
আমি কেন ছারপোকা হইনি 

হয়তো মনে হবে 
কেন আমি 
বিছে অথবা ভিমরুল হইনি 

আর কেন আমি 
নিজে থেকেই
কখনও সাপ হতে চাইনি 

কারণ 
সবগুলোর ভেতরেই আত্মহত্যা এবং 
আয়ু কমে যাওয়ার দিকে যাত্রা ছিল 

হয়তো নিজের লাশ নিজেকেই দেখতে হতো 

তাই আমি 
কাপুরুষ সেজে 
তোমার বগলদাবা থেকে 
কিলবিল করে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলাম 

আর 
তুমিও ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলে 

আমার সব যুদ্ধাস্ত্র 
হাওয়ার আড়ালে লুকনো আছে



নিয়াজুল হক

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন