ধান
লোকটি রোদ মাথায় মাঠে মাঠে ঘোরে
লোকটি ঘুরতে ঘুরতে কখনো আনমনে
মাঠের দিকে চেয়ে থাকে।
লোকটি দেখে অঝোরে বৃষ্টি
দেখে মাঠময় জল
লোকটির চোখে স্বপ্নগুলো শরীর পায়
লোকটি শুনতে পায় লাঙলের সঙ্গে জলের কথালাপ।
লোকটি দেখে হাওয়ায় খেলছে মাঠভর্তি ধান
লোকটির ধর্ম নিয়ে মাথাব্যথা নেই
লোকটির ঈশ্বর নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই
লোকটির ভাবনায় মাঠভর্তি ধান।
কখনো কখনো আকাশের দিকে তাকিয়ে
লোকটি দেখে আকাশময় শুধু ধান।
বেলা অনেকটা গড়ালে লোকটির জন্য ভাত আসে
লোকটি গাছের তলায় বসে ভাত খায়
লোকটির বৌ ভাতের পাশে
কোনোদিন নুন দিতে ভোলেনা।
চাওয়া
চলে যাওনি
কাছেই আছ নির্জনতা ছুঁয়ে
অন্ধকার নামলে ঠিক পথ চিনে ফিরবে জানি।
আলো নিয়ে কাছে এলে
কারুর জন্য ব্যাকুল হব না কলস্বরা
তোমার বহমানতার কাছে বৃক্ষজন্ম চাইব।
নদীকে ফেরাব না
পাহাড়কে থাকতে বলব
জঙ্গলকে বলব -- এসো
অভ্যর্থনার জন্য ফুল হাতে
আমরা অপেক্ষায় থাকব।
আলো অন্ধকার
এ আলো চাই না
এ আলোতে বড় বেশি অন্ধকার
বুকে জ্বালায় চিতাবহ্নি
এখানে দূরের আকাশও ঘোলাটে।
এমনতো আমি চাইনি।
অন্ধকারের আলো পেতে
গভীর অরণ্যে গেছি,
ভালবাসার এক সমৃদ্ধ আলো
বাতাস নাড়া দেয় মনের গভীরে,
শেকড়ে মাথা রেখে শুয়ে পড়ি।
কতযুগ আলোর আঁধারে ঘুমোতে পারিনি
বুকের ওপর পাতা ঝরে
একটি দু'টি।
ইচ্ছে হয় গাছেদের এই আলোতে
ঘুমিয়ে পড়ি যুগ যুগ ধরে।
গাছেদের অরণ্য ছেড়ে
আঁধারের আলো ছেড়ে
বিদ্ধ হতে চাই না আলোর অন্ধকারে।
ছোঁয়া
ছুঁতে বলো না
তোমাকে ছুঁলে নিভে যাবে ভালবাসা
ছুঁতে বলো না
তোমাকে ছুঁলে থেমে যাবে
পাতার সঙ্গে বাতাসের কথালাপ
তোমাকে ছুঁলে চোখ বুজবে
আসা যাওয়ার লজ্জাবতী
ছুঁতে বলো না
তোমাকে ছুঁলে হারিয়ে যাবে লিখতে চাওয়া শব্দগুলি
তাইতো আমার দূরে থাকা
তাইতো আমার বুকের ভেতর বিরহগীতি।
এই শরতে
আলো ছুটে এলেই
শিশিরের কথাগুলি লুকিয়ে পড়ে
ঘাসেদের গোপন ডেরায়।
কাশবনের সঙ্গে বাতাসের প্রেমে
ইন্ধন দেয় উষ্ণ ডানার রোদ্দুর
শুয়ে থাকে মনখারাপের বিষণ্ণ বালিয়াড়ি।
কি যেন হারিয়ে গেছে
অনেক হারানোর পরও উজ্জ্বল-মুখ কিশোর এক
হেঁটে ফিরে
পুরাণো পটচিত্র খুটে দু'টি শালিখ কুড়িয়ে আনে
সুখের মুহূর্তগুলি।
শঙ্খধ্বনির ভেতর ফুটে উঠছে ---
'বাজলো তোমার আলোর বেনু '
বেলাশেষের আগেই অদৃশ্য অন্ধকার ঢেকে দিচ্ছে
আনন্দ উছ্বাস।
উৎসব আসে
শুধু সেদিনের প্রসন্ন কিশোর নেই
গলা জড়িয়ে ঝুলে থাকে অসুখের সানাই
রাত্রিদিন জুড়ে তাড়া করে
মনখারাপের এক বিষণ্ণ কবিতা।
দেশভাগ
ছিল পোষ্যটিরও বুঝে যাওয়া: কোনোদিন ফিরবনা
ছিল হিজল সারির দুঃখ ছিল কিশোরীর মুখে আঁধার
ছিল বাসা ভেঙে যাওয়া পাখিটির করুণ দাঁড়ানো।
ক্রমশ সরে যাচ্ছিল সুপারি ছায়ার আলপনা
প্রতি ঢেউয়ে বিপর্যয়ের দীর্ঘশ্বাস বয়েছিল নদী।
মায়া ছিঁড়ে চলে আসা অচেনা ডাঙায়
প্রাণে বাঁচতে ছিন্নমূলীর অসহায় কাঁদা
বাসা হারিয়ে যেমন কেঁদেছিল পাখিটি
বুকের ভিতর কান্নার মতো বৃষ্টিপাত
নদীপারের বাতাস বিদ্ধ করে একটি শব্দে --
উদ্বাস্তু।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন