কর্মেন্দ্রিয়

চৈত্রের বাগান আজ মৃতপ্রায় গানে বাজছে বোল হয়ে
চুনোপুঁটিও শেষ আহ্লাদী রাতের কাছে উপুড় করে দিচ্ছে তার সন্তরণ
কিছুকাল দাপাদাপির পর 
সে ভাসিয়ে বেড়াবে তার বেত্তার ডিঙি 

গুটিকয়েক এমন সরব ও নীরবের মাঝে পড়ে থেকে শলা 
একদিন ঠিক নাম লেখাবে গৃহপালিত দলে

চতুর্থ আশ্রমের দিকে তাকিয়ে
সিঁড়ির দেয়ালগুলোকে দিচ্ছি তাই মজবুতি

কোথাও খাল কাটার উদ্যোগ নেই 

খালহীনতা তবে এমন এক শিবির
গৈরিক শ্বাসে আরও কিছুদিন সহবাসের পর
একদিন ফিরতে হবে
আচমনীয় কর্মে 



  
নিমেষ হত্যার সর্বনাম পেলাম না

স্নেহশীলতার তর্জনী খুব বেশি লম্বা হয় না বলে
কাত হয়ে মুষড়ে পড়ে গর্জন

মনে হয় লক্ষকোটি অভিশাপ স্পর্শ করেছে ভ্রু

ব্রত ভাঙার পর 
ব্রততীর শাপগ্রস্তা এক নাভি

সেতুর উজানে যতই গুটিয়ে নিই আত্মা
স্তব্ধতা যেন ক্রমে ক্রমে 
অতৃপ্ত এক গুঞ্জন 

যে যার সুতোর যেন সৎকার করে ফিরেছি তালপাতার ঘরে
অথচ বেহদ্দ ছায়া পাশে পাশে

আমরা তো সহোদর ছিলাম না
কলতান গুঁজতে গুঁজতে ফুলের চাষী

কারোর এমন উপহাস থেকে, পঙ্গু বেহালার কনসার্ট থেকে
যে গল্প বাজারফেরি হয়ে যাচ্ছে 
দাঁড়িয়ে গেলো কি বালির পেটো? 

এখনো নিমেষ হত্যার যুতসই সর্বনাম পেলাম না




 
পথ

দরজার বাইরে ধোঁয়াশামাখা শীত
দরজার ভেতর গ্রামের সেই পুরনো মনসাচাতাল
তার সামনে বসলে দেখি আমার প্রতিবেশী
একটি পুকুর। গায়ে তার কালোজামা

সময়কে এমনভাবে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকতে দেখিনি কখনো
ঝিনুককে যেভাবে দেখেছি
বালুবিছানায় পড়ে থাকা তার মৃত শরীর 

নিরালা খুঁটে তাই গোলাপের শবকে লিখে রাখলাম কবিতায়
কালোজামার পকেটে লালিত সন্তান

মনপুরের দীর্ঘ সাবওয়ে দিয়ে
পাস করে যাচ্ছে দক্ষিণী হাওয়া

হাওয়া জানে ভালো
ইন্দ্রিয়ের সহ্যগুণে গড়ে ওঠা ঘরের পথ




  
করলাদৃশ্যের স্মরণে

দক্ষিণা দিতে শীত থেকে গ্রীষ্ম লিখে গিয়েছি
কবিপাতে শুধু করলার দৃশ্য
সমাজের জিভ সেই গসিপকেই করেছে ফাইনাল

লম্বা হাই তুলে চিনিকলের মালিক সেইহেতু বর্ণনা করেন বিবর্তন
যেমনটা কিনে আনছি চা-দোকানের বিবর্তিত সসপ্যান থেকে
চায়ের দাগ ধরে দোকানির বয়স কতটা পাকা হলো
সেটা আর নাই-বা বললাম 

প্রভাতের স্বর 
এমনভাবেই ছাপিয়ে গেল কি পরিশ্রমের যোজনায়? 

আমার তো অর্ধেকের বেশি ভ্রমের দিন কাটে
বাকিটা বসে থাকি ভ্রমণের আশায়

পায়ে যে মল পড়ে থাকি 
তাকে তবু বেড়ির কথা শোনাই এবং সময়কে 
শুধুমাত্র ঘরউপলব্ধি

অন্যকিছু আর কখনও তেমনভাবে
ফিরিয়ে আনতে চাইনি




  
হালুয়া ও একটি কথোপকথন

গাজরিয় সন্ধেকাল কামিয়ে আমরা সেদিন ভোজনবিলাসী হলেও 
স্মরণ খুলে দিয়েছিল ভালো থাকার সংলাপ

এভাবে দমদম থেকে সালকিয়া 
             ---নিমেষে ছোট হয়ে যেতে পারে লাইন
যদি আমাদের দেখা হয় কোনো সভাঘরে কিংবা 
একটিমাত্র রিসিভারে

তুলে নিয়েছিলাম তাই অতৃপ্ত না থাকার যন্ত্র
আর কড়ার নিচে অদম্য আঁচ
সময় ছাড়িয়ে খুঁজে নিতে পারে কড়াপাকে হালুয়ার সুখ 

গাজরের নিধন যে স্বর্গের পথ হতে পারে 
টের পাইনি আগে 
অথচ স্থির জলে কিভাবে যেন খেলে গেল আলোড়ন 

দু'জানকীর ফেলে রাখা শীতকাল
এখনই হয়ত সঠিক সময় 
মাড় প্রসঙ্গে বিবিধ শাড়ির রং চিনে রাখার 

উত্তরসূরিরা তা জানে
কেবল জানতাম না আমরা...





 
সংক্রমণের পাঁজি - ১১

হরিপ্রয়োগে সামাজিক স্বর একঘাটে থিতু 

বসে পড়েছি এখন অভিনয় খুলে রেখে
রোগের শহরে যে লিখিত
পিচ-পরিচয়ের ধাম... 

নিশিপদ্মের ওপর বসে ওঁ নিষ্ঠুরতা 
মুছে দিচ্ছে খরনদী ও উপনদীর আয়নিক বন্ধন

আমাদের ভাগের বিধাতাপুরুষ 
আসলে বদলে দিলেন জিয়নকাঠি
যেখানে মনোযোগের পরপারে বেড়ে উঠছে শোক 

প্রতিদিন তবু সিদ্ধির লোলে ঢেউ সাজছে
মুঠো খুলে রেখে... লক্ষ্মণরেখার নিষেধে

যদিও অনিশ্চিত এখন বায়বীয় দেহে 
সংক্রামিত...




  
সংক্রমণের পাঁজি -১৩

ঘুমের ভেতর ফুঁপিয়ে ওঠে মাছেদের সমাজ
বিমা খুলে দেখি 
নিষ্পাপ পাখনার স্বদেশী হবার ইচ্ছায় লাল স্ট্যাম্পিং
 
সেই থেকে সাঁতারু শব্দের পশারে 
চিরাচরিত অভাব্য থেকে গেছে চুনোপুঁটির শ্রাবণ

একান্নটা ত্রিশূল 
কুটিলতায় এসে বিঁধেছে...পরিযায়ী দেহে

আর, 
নৃশংস অভিযোজিত হয়ে 
রাজপদে মিশে 
বিলি করে ঝলসানো রুটিজ দিনাত্যয় 




রুমা ঢ্যাং অধিকারী




Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন