বিষণ্ণতা এবং সমুদ্র

১।

নাহ সেভাবে কিছু ভেবে ওঠার আগে একবার অন্ততপক্ষে নদী হওয়া যাক। তারপর বাউল বাতাস যখন নীরবে মনের ভেতর ঘুরে ফিরবেআর আমি জানালায় বৃষ্টির দিন গুনে রাখব। আমার সহস্র তারা ভরা আকাশ মৃদুমন্দ হাসির চোটে কেঁপে কেঁপে উঠবে বেহিসেবি। আসলেজানো তো এই শীতলতা তোমাকে মানায় না। যেভাবে কলেজ স্ট্রীট চত্বর পুরোনো হয় না। তুমিও হাটতে হাটতে পেরিয়ে যাও টানেল। এক বিঘত সোঁদা মাটির গন্ধে আমিও বুঁদ। পায়ে ঠেকে সমুদ্রের ঢেউ। ক্রমশ আমি স্বপ্নে হারিয়ে যেতে যেতে আবারো গুমনামী হতে থাকি। বরাবরের মতো নিটোল… সুখ ফিরে পেতে ডুব দিই রাত পেরিয়ে একটা ভোরের দিকে। লাস্ট ট্রেন আসার ঢের বাকি থাকে। আমার আঙ্গুলে ফুটে ওঠে তোমার সুপ্ত ভালো লাগা। তারপর ভাসতে থাকি ইথারে। বহ্নিলতা জ্বালিয়ে শহর তখন আরো আরো দূরে জেরুজালেম থেকে মিসিসিপি। আমার সেই না লেখা চিঠির লাইনে লাইফ জ্যাকেট পড়ে হাজির হয় ডক্টর জেকিল। তারপর হাইড এন্ড সিক খেলায় জিতে যাও তুমি। এভাবে তন্বী সময় কেটে যায়। সমুদ্র তখন কবিতা লেখে আনমনে। কী-প্যাড জুড়ে পরে থাকে গতকাল ও আজ। আমিও রাত ভোর হতে হতে বীজ পুতে দিই। এভাবেই জন্ম নেবে আগামী একটা গল্পের। নাদান মন বলছে বালিঘড়ি উল্টে দিলেশুধু পড়ে থাকে মুহুর্ত




২। 

হয়ত এতক্ষনে শেষ হল ম্যারাথন ঘুম। আবেগ যেভাবে ভাব করে নেয় বিছানায়তুমিও নিবিড় আলাপে সিঁড়ি বেয়ে ওঠো। এরপর ক্যাসানোভা প্রেম পাঁচিল টপকে পালিয়ে যায় রাত তিনটেয়। আমি ভাবি ছায়ার সঙ্গে আর কি কি মিশে যেতে পারে। হুমআমি এবং আমার মুহুর্ত। তুমি এবং অপেক্ষা। কখনো ছুঁয়ে দেখি ঝুল বারান্দা। বারান্দায় চিলতে রোদ। শাড়ির ভাঁজে প্রাক্তন। তবু ভাবিস্বপ্নের ওপারে এক বাই দুইয়ের জীবন এখন নীলচে বিকেলে ঠায় দাঁড়িয়ে




একটা পাতি বাংলায় দেখা স্বপ্নের ভেতর কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পরআবার পথ চলতে শুরু করলাম। চোখ বোজা অবস্থায় এক সবুজ গলি দীর্ঘসময় ধরে কিছু না পাওয়ার আশায় বসে থাকে। আমি তাকে পেড়িয়ে যাই। গলব্লাডার থেকে চিবুক। তারপর এপিগ্লটিস থেকে নাভি। অসংখ্য পিঁপড়ের ভিড়। এতক্ষনে দুপুর নেমে এসেছে সিঁড়ির ধাপে। শিউড়ে ওঠা ঠোঁটে গত দুদিনের পুরোনো লিপবাম। আমিও অবুঝতাকিয়ে থাকি একটা গলে যাওয়া শিহরণের দিকে। আমার হাত ভরে ওঠে স্লোগানে। কিছু স্বপ্নের পাশাপাশি হাটতে শুরু করি। দেশলাই বাক্সে ভরে রাখি নির্বাক কিছু আলাপ। আমার দেওয়ার মতো কিছু নেইরাত বাড়লেই যেভাবে চাঁদ ঢলে পড়ে গায়েআমি লিখে দিই এক দাগি আসামীর প্রলাপ। কি ভেবে সামনে দাঁড়িয়ে যাওয়া খুদকুঁড়ো শালিকের গান শুনি। আচ্ছাশালিক কি গাইতে পারে। এই যেমন আমি গাইছি... বেসুরো সন্ধ্যের গান। নাহয় ভোল বদলে যাবে শহরেরনাহয় পথ মেপে নেবে সমুদ্র। তারপরও সাদা জামার ভেতর শুঁয়োপোকা প্রজাপতি হবে অনায়াসে। আমি বরং তুমি হয়ে যাইএটাই ভালো হবে। সবকিছুই গলে যাকমাখনের মতো। বিষণ্ণ ছাতার অপর পিঠে বৃষ্টি আতকে উঠুক। আর ‘তুমি’ উচ্ছন্নে যাক। ‘আমিও সিঁড়ির ধাপ থেকে কুড়িয়ে নিই বিকেল। ইদানিং সবকিছুই শূন্য ধরে নিয়েছি। খালি পেয়ালায় পুরো পৃথিবী ভরে একবার ভাবিআসলে সবটাই বিলিতি আঙুরে মেশা




৪।

তবু যাচ্ছি ফিরে। ফিরে যাওয়ার ভেতর আলটপকা একলা থাকা। একটা শহর জানে সেই সব কথাগুলো।আর ভিড়ে মিশে থাকা জরাজীর্ন শরীর ঘুরে আসে রাত হলেই। তবু যাচ্ছিফিরে যাচ্ছি ভিড় ঠেলে…গলে যাওয়া সুতোর মতো। গায়ে জমে থাকা গল্প ছড়িয়ে দিতে দিতে। সেই ছেলেটাকেযে টানেলের মুখে রোদে দাঁড়িয়ে মানি ব্যাগ বিক্রি করে চেচিয়ে চেঁচিয়ে। আর সেই লোকটার গায়েযে ক্রমাগত হাত পেতে সুখ ভিক্ষে চায় সবার কাছে। মাথার ওপর দিয়ে যখন ট্রেন বেড়িয়ে যায়আমি হুশ ফিরে পাই। পথ গুলিয়ে গল্পগুলো মাঝরাতে ফিরে আসে। আর আমি সাদা রঙে কালো বিন্দুর মতো বৃষ্টি পড়তে দেখি। জানালায় রেখে দিই শিহরণ। বস্তুত স্নানঘরে রেখে আসা ভেজা মন মাখামাখি হতে থাকে গাঢ় নীলের সাথে। এভাবে একদিন রান্নাঘরসিলিং আর ফ্যানে জমে যাবে স্মৃতি। বিন্দু বিন্দু আদর ফ্রিজে রেখেসিলভার জুবলিতে মিশে যাবে আমাদের সংসার। ফিরে যাওয়ার আগে আইস কিউব সময় ভোর হবে। ব্রেকফাস্টের পর সমুদ্র নামক বাস্তবে মিশে যাব আর আবারো একলা হব পার্ক্সস্ট্রিটের ভিড়ে। 




৫।

এখানে শহরগুলো গলে গিয়ে অদৃশ্য এবং পৃথিবী ধুলোঠাসা। কেবল বসে বসে ভাবছিএকটা গোটা আলসে দিন। কেবল কবিতা জানে কীভাবে নিজেকে খাপ খাওয়াতে হয় মেলানকোলি সুরে।টিফিন বক্সের গল্পে আলোকপাত করার পরওআমার চৌকাঠে বেহিসেবি ছেলেবেলা দরজা খুলে দাঁড়িয়ে। মুসাফির সন্ধে যেখানেই নিয়ে যাক না কেনকালো স্ট্র্যাপে ত্রিকোনমিতি সূত্র আলগোছে আটকে। আমিও মুহুর্তের মধ্যে কেন্দ্র থেকে পরিধীতে ছড়িয়ে দিই বিট নুন। রিখটার স্কেলে তখনও সাত দশমিক পাঁচ। তবে সব গল্পের শেষ লেখা থাক আনুবিসের খাতায়।




বৈশাখী নার্গিস 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন