নীলম সামন্ত









শূন্যে ফেরিওয়ালাবৃত্তে বেলুন

পর্ব-৬

দেখতে দেখতে পুজো চলে এলো। প্রবাস জীবন প্রায় তেরো বছর, তেরো বছরই বাংলার পুজো, আমার গ্রামের পুজো দেখিনি। তবে প্রবাসী পুজো দেখেছি। সেও এক অনাবিল আনন্দ। কোন এক ফাঁকা মাঠে তাঁবুর মতো বিশাল প্যান্ডেল খাটিয়ে তার ভেতর স্টেজ বানিয়ে বসিয়ে দেওয়া হয় এক চালার মা দুর্গা। নানান খাবারের স্টল, বাঙালি জামা কাপড় গড়িয়া হাটের মত জাং জুয়েলারি ইত্যাদির ছোট ছোট স্টলেও ভরে উঠত। বাইরে থেকে বোঝা যেত না৷ তবে ওই বিশালাকার প্যান্ডেলের ভেতর বাঙালিয়ানার কোন খামতি নেই। ওই এতটুকু দেশ সিঙ্গাপুর সেখানেই প্রায় চারটে পূজো হত। এখন আরও বেড়েছে৷ আমরা মোটামুটি চেনা সমস্ত বাঙালি পরিবার একসাথে যেতাম খাওয়া দাওয়া হইচই সবমিলিয়ে বেশ পুজো পুজোই গন্ধ। 

ফার্স্ট ফেজ সিঙ্গাপুর হলেও দ্বিতীয় ফেজ আমেরিকা। ক্যালিফোর্নিয়ার আউট স্কাটে থাকার কারণে হাতের কাছে পুজো বলতে কিছুই নেই তাও বন্ধুবান্ধবদের সহযোগিতায় একটু দূরে গিয়ে ঠাকুর দেখে এসেছিলাম। এখানেও ঠাকুরের কোনো বিশেষ আড়ম্বর নেই। ওই দেশ থেকে জাহাজে করে আসা দুর্গা ও তার পরিবারবর্গ। তবে আমেরিকায় যেটা বেশিরভাগ দেখেছি দেশ থেকে মানে আমাদের কলকাতা থেকে মুম্বাই থেকে নানান আর্টিস্ট নিয়ে যায় আর পুজোর চার দিন সংস্কৃতিক সন্ধ্যায় মেতে উঠে সবাই। 

তৃতীয় ফেজে মুম্বাই অর্থাৎ নিজের দেশ। বহুবার ভেবেছি এখান থেকে তো বাড়ি অনেক কাছে তাই পুজো হলে বা পূজোর সময় বাড়ি চলে যাওয়াই শ্রেয়। তা তো হয় না কারণ ওই সময়তেই সন্তানের স্কুলের অনুষ্ঠন বা কোন না কোন কারণে আটকে যায়। তা আটকালেও মুম্বাইয়ের মত শহরে আড়ম্বরের কোন শেষ নেই।  সেই বা কম কি।  এখানে প্রায় সারারাত জেগে আমরা ঠাকুর দেখতে যেতাম। বাঙালিদের পাশাপাশি নানান প্রবভিন্সের লোকেরাও আসত। প্রতিটা প্যান্ডেলে মঞ্চ থাকত আর নানান ধরনের বাংলার গান গাইতেন, আর শিল্প বাঁচিয়ে  রাখেন।  

এবছর গোয়াতে৷ কোথায় কি ঠাকুর হয় আমরা জানি না পুজো আসছে পুজো চলেও যাবে৷ 

দীর্ঘ প্রবাসে বাস হওয়ার কারণে এই পুজোর আনন্দ আমার যেন প্রবাসেই ভালো লাগে। একগাদা ভিড় গুতোগুতি করে ঠাকুর দেখার আর সিনেমা আর্টিস্ট  দেখার চাইতে নরম এ সি র হাওয়ায় বসে নির্ভেজাল আড্ডাই যেন দুর্গা পুজো। সেখানে ঢাকির বাগদি নেই জোরে জোরে মন্ত্র পড়া।  আছে শুধু কিছু হাসি মুখ।  

কলকাতা শহরের প্যান্ডল ঠাকুর দেখা আজকাল স্ট্যাটাস মেইন্টেইন এর গল্প নেই৷ কিন্তু গ্রামে বড় হবার সুবাদে পুজোর আলাদা আলাদা গন্ধ আছে। সেই গন্ধেই মেতে ছিল শৈশব। পুজো মানে এই সমস্ত কিছু মনে পড়ে কিন্তু দেশে গিয়ে গ্রামের পুজো আর দেখা হয় না।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন