শিউলি সিরাজ




(১)
অতীতকাঁটা

ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকি যেখানে ইচ্ছেদের ছুটি 
স্বপ্নেরা কবরে, সভ্যতা ছুটছে অসভ্যের ট্রেনে।
দাঁড়িয়ে রই গতজন্ম ও পরজন্মের মাঝখানে
বিশ্বাস থমকে থাকে যেখানে।
ভাঁটফুলের প্রাচীন গন্ধ ভুলে
ব্যভিচারী পুরুষের গন্তব্য পথের বারো দিকে
বাহা"র আগে শালফুল খোঁপায় গুঁজে 
যে কলঙ্ক সিঁথিতে নেয় রমণী 
সে কালিতে লিখি আদিকবিতা।।
শুনেছি, প্রজাপতি অকাতরে বিলায় রঙ 
সভ্য কবি"র উর্বর কবিতা চষে বেড়ায় মাঝরাতে
সহবাসের উদোম জমিন।
মুখ ফিরিয়ে কোথায় দাঁড়াই?
বেঘোরে বয়ে বেড়াই এক জাতিস্মর জীবন। 





(২)
মেলোড্রামা

শপথ করে ভুলে থাকার নাম অভিনয় ; সেটাও রপ্ত হয়ে যায়। খুঁট খুলে বের করে আনি শেষ দু" আনা।কৈফিয়ত তলব - নীরবতা আশ্রয়। 

অসময়ে লুটপাট হতে হতে কানে বাজে, " জিন্দেগী এক পিয়াস বান কার রেহে গেয়ি" কোথাও তাল কাটে - আবার ফিরে আসে প্রিয় 
" কাহারবা" দহনের সুখ নিয়ে বেজে যায় সরোদ

বিস্মৃত ইশতেহারে লিখে দেই পুরাতন পাপ।আর গল্পকথার পরতে পরতে মিশে যায় সে এক অদ্ভুত মেলোড্রামা। 





(৩)
গ্রহণকাল

শহরের দেয়ালগুলো ঝাপসা
আমি তাকে ডাকি আলোতে অথবা অন্ধকারে 
তার চোয়াল শক্ত মুঠো আলগা
মুঠো আলগা করে সে দেখায় থেতলানো পা।
লাল চোখে তার শত রাতের জমা ঘুম
বুকে হুল ফোটানো স্মৃতির হিসেব
সুখী নাগরিক হতে চাওয়ার চরম অনীহা নিয়ে সে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়,  " সুখ পেয়েছিস? "
আমি সস্তা গল্পের কারিগর। 
সস্তা মূর্খ কবির মতো লিখি
সস্তা স্বপ্ন দেখতে দেখতে আমার চোখে জঞ্জাল 
অসভ্য প্রেমপত্রে ভরে ওঠে খেরোখাতা 
বাহবা কুড়াই,  কুড়াই সনদ।
ক্রমশ ঘন হয় শিশির 
কালো ছায়ায় ঢেকে যায় চাঁদ
তার অট্টহাসি ছড়িয়ে পড়ে দোর দালানে
আমি তার চোখের আগুন দেখে মিইয়ে যেতে থাকি.....





(৪)
বাঞ্চ অফ ফ্লাওয়ার 

পত্রশোক---কোনো এক পাতাঝরা দিনের শেষে বিসর্জনের হাহাকার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা জারুলের বুকে বিদ্রুপের ছুরি তাক করেছিল সদ্যোজাত পাথরকুচি। 
দ্বিধালয়---- চৌকাঠ পেরোলেই অন্য ভুবন। দিগন্তের দশ দুয়ারী হাতছানি। তবুও কানাগলির চেনাপথে সকালসন্ধে ঘুরপাক খায় মন।
শূন্যশাঁখ------যে দুরন্ত নাবিক মাস্তুলে বেঁধেছিল সবুজ ওড়না তার ফেরার পথ চেয়ে এ বন্দরে এখনো বেজে চলেছে একমুঠো নুড়ির পাথরসঙ্গীত।







(৫)
বেগুনি বৃত্ত

আসন্ন সন্ধ্যা লিখে রাখছি তোমার নামে
তুমি ঠোঁট থেকে খুলে নিচ্ছো কালো লাগাম
বুড়ো সহিসের বিচক্ষণ চোখে 
মুহুর্তে খেলে যায় আড়াইচাল
আমি গুটিয়ে যাই... 
স্বপ্ন পুড়িয়ে তুমি বাজাও পাতার বাঁশি।
রোজ তোমার দোকানে বিকোয় 
নরম হাসনাহেনা
ষোড়শী ওড়ায় ইরানি ঘাগড়া
আদিম পতনের পর 
মিশে যায় " সারাবান তাহুরা"
যৌথ শিল্পের আড়ালে মুখ লুকায় দরদ
আর আমি একমনে বাজিয়ে যাই 
পাতার বাঁশি। 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন