কামরুল বাহার আরিফ

 


ইচ্ছেরা যত অসহায়

-ডালের মাংস রান্না করলাম আজ দুপুরে

বেগুন বড়ি পটল দিয়ে দোলমা ছিল

ইচ্ছে করে রান্নাগুলো যত্ন করে তোমার সাথে একত্রে খাই

আর কত কি ইচ্ছে করে তা কী জানো?...

জড়িয়ে ধরে তোমার বুকে কাঁদতে বড় ইচ্ছে করে

এক ছোবলে এই তোমাকে কেড়ে নিয়ে- নিজের করতে ইচ্ছে করে

এক বিছানায় ঘুমাতে খুব ইচ্ছে করে

তোমার সামনে কাপড় ছেড়ে, কাপড় পরি- ভীষণ রকম ইচ্ছে করে!

তখন আবার লজ্জা চোখে

তোমার চোখের লোভটাকেও- দেখতে খুবই ইচ্ছে করে

 

তোমার চায়ে চুমুক দিতে ঠোঁটটা কেমন কেঁপে ওঠে

সকালবেলা এক গামছায় মুখ মুছতে ইচ্ছে করে

বৃষ্টি এলে তোমার সাথে ভিজতে বড় ইচ্ছে করে

যখন জানি- ইচ্ছেগুলো এ জীবনে পূরণ হওয়া অসম্ভব এক-

-তখন, ইচ্ছেগুলো টুকরো করে জলের বানে ভাসিয়ে দিতে

জীবনপাতা টেনে ছিঁড়ে আকাশ পানে উড়িয়ে দিতে

ইচ্ছে করে, ইচ্ছে করে, ইচ্ছে করে...

 

চুলার ’পরে ডালের মাংস, বেগুন বড়ি বাসি হচ্ছে।




 

খুব আবডালে

না। চোখে চোখে তাকিও না;

আড়াল করে, চোখ ঘুরিয়ে দেখো।

সড়ক পথের কাঠগোলাপের শুভ্র সাদায়

কিংবা তাদের সুঘ্রাণে দেখো

আমার চোখের গতিরেখা মনের ভেতর এঁকো।

 

এমনি করে সড়কবাতি অন্ধ ছিল

আকাশজুড়ে ভাসছিল এক পূর্ণিমা চাঁদ।

প্রেমিক যত কান পেতেছে

কাঠ করবির ডালে ডালে

হাওয়ার তালে জ্যোৎস্না দোলে

নন্দিনী নাও পালে পালে-

না। তাকিও না আড়াল করে

সড়ক পথে জ্যোৎস্না আসে খুব আবডালে

খুব আবডালে...

 



 

প্রেমান্ধ সারস

সারসের আদুরে ঠোঁটটা সূর্যের থেকে তাপ নিয়ে

আকাশ থেকে নেমে সাহারার উষ্ণতার পথ ধরে

সোজা হিম হিমালয়ের প্রশান্তির পথ পেরিয়ে

মাধবপুর লেকের অশান্ত ঘুর্ণিজলে ডুবসাঁতার শেষে-

জন্মস্থানের বিস্ময় শ্যামলিমার উর্বর মাটি মেখে

ছুঁয়ে দিলো সমুদ্রের নোনাজলের ফেনিল ফেনায়।

 

এখন প্রেমের সারস এক অন্ধ অজগর!

যে অমৃতের নেশায়

পেঁচিয়ে নিয়েছে-

গোটা পৃথিবীর গোলক পৃষ্ঠের জল ও মাটি।

 



 

চলমান তত্ত্বে

চোখ থেকে একটার পর একটা

কৃষ্ণচূড়া পেছনে চলে যাচ্ছে।

বক্রাকারে ফিরে যাচ্ছে

ধানকাটা বিষাদময় চৈত্রের মাঠ।

সহযাত্রীদের কিছু দর্শন তত্ত্ব

বাহনের চাকাকে দ্রুত সঞ্চালিত করছে।

প্রত্নপৃথিবীর বয়সের ভাঁজকে মসৃণ করতে

নদীরাও নিকটবর্তী হচ্ছে নন্দনতত্ত্বে

যেনো নদী মানেই রাধা বর্গীয় সুর ও স্বর

সেই নদীতে কষ্ণজীবন পেরিয়ে নিলে

ওপারের কৃষ্ণচূড়ার ডালে হেসে ওঠে ফুল।

ফুলের হাসিতে ভরে গেলে মন

দর্শনের তত্ত্বগুলো বাঁক নেয়

স্বর্গ-নরকের চিরদ্বন্দ্বের অলীক সর্বনাশে!

 

 



সাতপাঁক

কাল বিকেলের

উদাস লগ্নে

একটা লাল টিপ পরো,

 

গোধূলির ঠোঁটটা

টিপকে ঘিরে

সাতপাঁকে বেঁধে নিবে।

 

 

 


প্রেয়সীও বৃক্ষের মত

ঘনবৃক্ষের কয়েকটি পাতায়

কী আশ্চর্য সূর্য আলোয়

চোখটাকে ফেরাতে পারছিলাম না।

সেই আলোয় চোখ ডুবিয়ে প্রসারিত সবুজ

ছড়িয়ে পড়লে আচম্বিতে

তুমি সামনে এসে দাঁড়ালে

দেখি, তোমার ঘনকালো চুলের গভীরে

কয়েকটি সাদা চুল উঁকি দিলে

তুমিও বৃক্ষের মত প্রসারিত হয়ে গেলে!

তোমার কালোচুলের ঘনত্বে সূর্যটা আলো ফেললে

উঁকি দেয়া সাদা চুলে চোখ ডুবিয়ে

তোমার প্রসারিত মনে মিশে গিয়ে জানলাম

তুমিও বৃক্ষের মত চির প্রেয়সী এক

শুধু হেসেই চলো বাতাসের ছোঁয়ায়।


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন