সুবাইতা প্রিয়তি



সোপানে আহত প্রাণ

উপরতলায় কথা আর গান, এইখানে শুধু ম্লান মুখ চাওয়াচাওয়ি
এই দুই দর্শনে কেবল প্যাঁচানো কোনো সিঁড়ির ব্যবধান 
মজলিশ উত্থান তোমাদেরই, আর তার জঞ্জালও তোমাদের বৈ কী
সিঁড়ির গোঁড়ায়ই তোমাদের কেউ; ছাতবাগানে যার মৃতদেহ 
নিরালম্ব, সেও তোমাদের ঢেউ কোলে করা বজরা বাসিন্দা 
        তারা নিয়ে স্বপ্ন দেখার বেলা যখন পড়ে এসেছে শুনেছি, অনুগতদের মতোন সরিয়ে রেখেছি সেতার 
প্রশ্ন তুলিনি আড়ম্বরে; সিঁড়ি নিজে হয়ে গেছে গাঙচিল।
সাদা ভূতের মতোন অতৃপ্ত প্রাণ,
পিঁপড়ার মতো,কাছিমের আয়ুর মতো
- এ নিয়েই সিঁড়ির ফসিলসহ রয়ে গেছি; হয়ে গেছি
 পৃথিবীর লোক।
এই যে মরতে অপারগ এতো ক্ষতিগ্রস্ত দেহ নিয়েও-এ আর কী!
জীবনের প্রতি সুতীব্র যৌন আকর্ষণ; এতো যে অহং-
 কখনো আক্রান্ত হয়না এই শ্লেষ দ্বারা ।
আর খরা-ঝরা শেষ হলে শুরু হয় অন্য আরেক দর্শন
- ভিন্ন এক চেতনাশূন্যতা,
নেই, নেই, নেই, সেখানে একেবারেই নেই কিচ্ছু,
 যেই পথটা ধরে লোকে চিন্তা করে,
যেন আঁধারই মা, একাধারে মমতা ও ঈশ্বর; আগলে রাখছে 
হঠকারী রৌদ্র নিভিয়ে ।
 
সিঁড়িতে জন্ম হয়,
পূনর্জন্ম হয়,শুধু আমরাই-যারা
সাধারণের মধ্যেও অসাধারণ রকমের অতি সাধারণ 
- প্রাকৃতিক মৃত্যু দিয়ে হারিয়ে যাই,
(যা বিলুপ্তির মতো করুণ, শীতল)
সিঁড়ি ভেঙে ভেঙে, নতুন ধাপ পেরিয়ে পেরিয়ে,
অথর্ব অথবা ভীষণ চতুরের মতো
সব হিসাব মিলে গেছে' ধরণের দীপ্তি মুখে জ্বালিয়ে 
অথবা শেষদিকে গাঢ় বিশ্বাসী হয়ে।





আরো পরের কথা

দেখোনি আমারই বিষণ্ণতায় 
  ঘরে ঘরে কেমন শীত আসে,
দেখোনি হাজার নিশ্চয়তা থাকা সত্ত্বেও
 পুরানো প্রেমিক বলে বিদায়,
 শুধু এই বিষাদের ভূইফোঁড়ে বালুচাপা দেবে বলে
 ঢেউ কেঁপে কেঁপে উঠে আসে জনসম্মুখে, সমুদ্র থেকে।
শিশুর গোলাপি মুখ রোদে ঝলসায়;
আমার কষ্ট ভাগাভাগি করবে বলে বহু মাতা বারবার প্রসবিতা
তুমি বোঝোনি যে আমারই দুর্দশায় আত্মাহুতি দেয় কুকুরী?
গঞ্জিকাসেবকও স্বর্গের অন্ধকার দেখে হতচকিত,
প্রতি রুদ্ধ নিঃশ্বাসে আমার জগতের দোদুল্যমানতা বেড়ে যায় 
 নদী শুকায় আর ওধারে ভিস্যুভিয়াস উগরায় 
আমার শূন্যতাকে বুকে করে পৃথিবী নির্জন, শূন্য-
কেন দেখোনি তুমি?

তুমি জাননি প্রতি অসমাপ্ত যৌনতা কতোখানি ক্ষত রেখে যায়? 
আমার মলিনতা নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে, 
পূর্ণিমা ফেলে রেখে- যে যৌবনাক্রান্ত রোগী!
অসহিষ্ণু বাক্য মাথায় ঠুকতে থাকে দাপট 
শুধু আমার অবমাননাকে মনে করে,
আমি যতবার হেরে গেছি, তারচেয়েও বেশিবার
 সূর্য ডুবেছে শুধু পরাজিত মুখে নেকাব হয়ে।
বৈঠকে ঠকে যাওয়া এক রুগ্ন মুর্তি, 
তাপীয় শ্বাস ফেলে চা জুড়িয়ে গেছে
           - আমার নগ্নতা মনে করে।
তবু আমার নিজস্ব ক্ষয়িষ্ণুতা, বুকে অনাদিকাল ধরে আছে 
যে, টলাতে পারেনি অন্য কেউ।





নিহত নির্দোষ!

দিন একটা বুলেট হয়ে গেছে কবে জানি
গরম বালুতে বাদাম ফুটছে সেটা জানি
মুখ্য অর্থ ধরবো না গৌণটাকে
আমি সোনা কালপ্রিট না, তাই এতো ভয়ে।

কবরসমান ছিদ্রটা বুকে কতো যত্নে আছে,
যদি সঠিক এঁটে যায় বুলেট, একদম অন্তর্ঘাতের কাছে
মূল্যহীন হয়ে যায় যদি আঘাতের দাগ,
শোণিতের স্রোতে!

আমার আয়াসে সংগৃহীত কলঙ্ক, বুলেটের 
কৃতকর্মে মুহূর্তেই যাবে মুছে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন