সমীর তাঁতী 



বাসুদেব দাস  







কোম্পানির প্রতি আর্জি

দয়াময় দয়ার সাগর
হুজুর -মা-বাপ

তাবিজ খুলে রাখলাম
কাপড় খুললাম
বাঁশিতে তুলব না
রাগ

দায় দোষ ধরবেন না
অন্ধকার গড়াল
অন্ধকারেই বিশ্রাম
মাদলে হাত রাখছি না
মাফ করবেন

হুকুম দিন হুজুর
কালা-পানি
ফাটক
যেখানে যা আছে
চলে যাব
মুক্তি পাব

কে বলে আরও চাই
যা পেলাম
সেটা কি ধেমালি
জানোয়ারকে
লাই দেবেন না হুজুর
গালিগালাজ করুন
পথের ধুলোকে
মা-বাপ
ছেলে মেয়েকে দেখবেন
অক্ষর জ্ঞান হতে দেবেন না
বাগানেই থাকবে
নরক দর্শন করবে

কিরা কাটছি হুজুর
কলজের আগুন রাখলাম
রোদে ধুয়ে নিলাম
দেব নাকি জলে ঝাপ

ঘুচুক মনস্তাপ

হুজুর চোখ মেলে একবার দেখবেন
গোলামকে বাঁচাবেন






ঈশ্বর বন্দনা 

মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ- বাসুদেব দাস
প্রভু
আমাদের ক্ষুধার জন্য দায়দোষ ধর না
আমরা জন্মেছি আমাদের ক্ষুধায়
নুনের মতো চায়ে গলে যাবার জন্য

আমাদের কাছে একটা অন্ধকার গড়াল
আমরা তাতে থাকব শুয়োর মুরগির মতো 
আমাদের মৃত্যুতো বড় সহজ

আমাদের দিও পচা আটার ভূষি
আর দিও রঙাপানী
গরুর মতো যেন সইতে পারি 
আর কুকুরের মতো লেজ নামিয়ে রাখতে পারি

প্রভু
কোন কলহের হাড়িয়া খাব 
পথে পথে তোমার গরিমা গাওয়ার জন্য
চোখের জলের মতো আর কোনো নেশা আছে কি 

হে বিধাতা রশি দিয়ে বেঁধে রেখ ইচ্ছাকে
নরকের পথ আমি চিনতে পেরেছি
এই দয়াতে মহীয়ান কর আমাদের মৃত্যুকে





কথা ছিল

কথা ছিল সাধু সন্ন্যাসী হব ,ভব্য-গব্য হব,নাগরিক হব,
ধ্বজাধারী হব,দেশপ্রেমিক হব আরও অনেককিছু।
একসঙ্গে হওয়ার কথা ছিল। হওয়ার কথা ছিল
বলে জীবনের সঙ্গে ইয়াণ্ডাবু করেছিলাম। একদিকে ছিল
অন্ধকার আর অন্যদিকে আলোর মধ্যে অতীত ,অত্যাচার,
আত্ম-জীবনী। কেউ কারও বিরোধিতা করেনি।
ছিলনা বলে সই করেছিলাম ,হাসি-ঠা্টা করছিলাম,কেলেণ্ডার
এবং পঞ্জিকা পড়েছিলাম ,তালা খুলেছিলাম,তাল মিলিয়ে
চলেছিলাম। কথা না থাকলেও কোনো কথা ছিল না।
অন্ততঃ ঋণী হতাম,প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতাম ,
স্বপ্ন দেখতাম,.কখনও কাউকে কিছু বলতাম না।

কথা ছিল বলে নিজেই নিজেকে হত্যা করতে পারলাম না।





সূর্যস্তুতি 

আমি একজন সূর্যের উপাসক। সূর্যের প্রার্থনায়,নিদ্রা ভেঙ্গে জাগিয়ে তুলি রাতের মানুষকে
মুখোমুখি করে দাঁড় করাই সূর্যের সামনে 
সূর্যের সান্নিধ্যে সাহস জেগে উঠে বুকের ভেতরে

সাহসী মানুষের ভালোবাসায় আত্মহারা হয় মাটি 
মানুষের বীজ গ্রহণ করে জন্ম দেয় বিবিধ শস্য এবং খনিজ পদার্থ
প্রতিটি রাতে বৃদ্ধেরা আলোচনা করে 
শস্যের মমতায় কীভাবে সুখী হয় ক্ষুধাতর আত্মা
কীভাবে দিনগুলো হয়ে যায় কর্মব্যস্ত আর রাতের জন্য সঞ্চয় করে রাখে সুখময় গভীর নিদ্রা
প্রতিটি ভোরে পাখির কাকলিতে শুনি সাগর থেকে ভেসে আসা কবিতার আবৃত্তি
প্রতিটি গোধুলিকে করে তুলে অনন্য,সঙ্গীতমুখর
সঙ্গীতের মধ্যদিয়ে এগিয়ে যায় কৌশলী সময়,আমি এগিয়ে যাই উপাসনার জন্য
আমার হৃদয়ে শোভা পায় মানুষের মঙ্গল কামনা
আমার কণ্ঠ থেকে উচ্চারিত প্রতিটি শব্দ ঢেউ তুলে চলে যায় বাতাসের সঙ্গে
বারবার ফুলগুলি মনে পড়িয়ে দেয় সেই সহজ কথা
পৃথিবীর প্রতিটি শিশু এখন বৃদ্ধি পায় মাটির আদরে
পৃথিবীর প্রতিটি দিন এখন বৃদ্ধি পায় সুর্যের আদরে






একটি বাগানের নাম বিষাদ

একটি বাগানের নাম বিষাদ। তার ফুলগুলির
নামও বিষাদ। যখনই বাগানটি আকাশের দিকে মাথা তুলে
তাকায় আকাশও বিষণ্ন হয়ে পড়ে। আকাশ থেকে নামে
ধারাসার বৃষ্টি। ফুল এবং পাতাগুলো ভিজে যায়। পাতাগুলির
নামও বিষপ্নতা। জলে ভিজে শিকড়গুলি
ফুঁপিয়ে উঠে। সমপ্র বাগানটিকে এরকম
অপেক্ষা করে রয়েছে। মাটির দুঃখের কথা তোমাদের বলার জন্য ।








সমীর তাঁতী

১৯৫৫ সনে গোলাঘাট জেলার বিহরা চা বাগিচার মিকিরাচাঙে জন্ম হয়। অসম সরকারের পর্যটন বিভাগের অবসর প্রাপ্ত কর্মচারী। সমীর তাঁতী একইসঙ্গে কবি, অনুবাদক, গদ্য লেখক। যুদ্ধভূমির কবিতা, শোকাকুল উপত্যকা, সেউজীয়া উৎসব, এই আন্ধার এই পোহরর তন্ময়তা, কদম ফুলার রাতি, শুনিছানে সেই মাত ইত্যাদি তাঁর কাব্যগ্রন্থ । 


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন