উৎপল দত্ত ব্র্যান্ডের মদ খাওয়া

 ❝হাসপাতালের বেডে শুয়ে কখনো উৎপল দত্ত ব্র্যান্ডের মদ খেয়েছেন!❞ কথাটা শুনে লোকটার দিকে একঝলক তাকালাম। দেখলাম বক্তা নেহাতই চা-দোকান-বিশেষজ্ঞ। ওপর-ওপর একটা মাস্টারি-ভাব। ওর সঙ্গে বসা লোকটি বললেন, "উৎপল দত্ত-ব্র্যান্ডের মদ!" বিশেষজ্ঞ এবার হ্যা-হ্যা করে হেসে বললো, না,না, সে ব্র্যান্ড নয়। ব্র্যান্ড মানে---ওঁর ব্র্যান্ড ! 
"আমরা তো মশায় ডাবের ভিতরে নিয়ে গিয়ে লুকিয়ে-চুরিয়ে হাসপাতালে মদ খেতাম! কিন্তু উৎপলবাবু! হুঁহুঁ বাবা, সে তো আর চাট্টিখানি-মানুষ নয়!" বলে সে উৎপল দত্ত-ব্র্যান্ডের মদ খাওয়ার গল্প শুরু করলো, বুঝলেন কিনা ভাই,একবার এসএসকেএম-এর উডবার্ন-ব্লকে উৎপল-দা ভর্তি হয়েছেন। ডাক্তারবাবু পরীক্ষা করতে এসেই তো ওঁর মুখ থেকে মদের গন্ধ পেলেন! বললেন, স্যার, আপনি ড্রিংক করলে আমি আপনার ট্রিটমেন্ট করতে পারবো না ।উৎপল-দা বললেন, "দেখি কী করা যায়!" তারপর ডাক্তারবাবু স্টেথো দিয়ে ওঁর বুক-পিঠ পরীক্ষা করলেন, জিভ দেখলেন। চলে গেলেন।
বিকালে এসে ডাক্তারবাবু দেখলেন সব নর্মাল। রুমে শোভাদিও ছিলেন। উৎপল-দা ঘুমোচ্ছিলেন। ডাক্তারবাবু শোভাদিকে বললেন, দেখুন, উনি অ্যালকোহল খেলে আমি ওঁর ট্রিটমেন্ট করতে পারব-না। এদিকে সিএম-স্যার বারবার ফোন করে ওঁর শারীরিক-অবস্থার খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। শোভা-দি মৃদু হাসলেন। কিন্তু ডাক্তারবাবু নেক্সট-দিন দুপুরের পরে গিয়ে দেখলেন, উৎপল-দা যথারীতি ড্রিংক করেছেন। ডাক্তারবাবু তো রাগতে গিয়ে শেষে হেসেই ফেললেন। তারপর দুজন নার্সকে দায়িত্ব দিলেন চব্বিশঘন্টা কড়া নজর রাখার জন্য। বললেন, "এই রুমে যেন কোনোভাবেই অ্যালকোহল না-ঢোকে!" এমনকী, ডাব আনাতেও তিনি নিষেধাজ্ঞা জারি করলেন। ব্যাস, সেই থেকে সব হাসপাতালগুলোতেই ডাবের ছবির উপর ক্রসচিহ্ন আঁকা হয়ে গেল! লোকটার কথা শুনে আমার হাসি পেল। লোকটা তারপর বললো, কিন্তু উৎপলদার মদ খাওয়া আটকানো গেলো না। শেষদিন পর্যন্ত ডাক্তারবাবু বলেছেন, "তাহলে, আপনি অ্যালকোহলটা ছাড়তে পারলেন না!" আর উৎপলদাও প্রথম দিনের মতোই, বলেছেন, দেখি কী করা যায়! 
শেষমেশ বাড়ি ফিরে এসে উৎপলদা-ই মদ-রহস্যটা ফাঁস করেছিলেন। বলেছিলেন, ওঁরা ডাব বন্ধ করলে কী হবে,বাড়ি থেকে রান্না-করা-মাংস তো নিয়ে যাওয়া বন্ধ করতে পারেনি! আমার ইন্সট্রাকশনই ছিল টিফিনক্যারিয়ারে মাংসের ঝোল না-দিয়ে,ওটাতেই ঝোলের মতন করে মদ নিয়ে যেতে। আমি নার্সের সামনে বসেই খেতাম।সে টেরও পেত না কিংবা, হয়তো একটু- একটু পেত। কারণ মাঝে-মাঝে তাদেরকে হাসতে দেখতাম। 






দেবব্রত রায় 


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন