শুকনো-ডাঙার প্রজাপতি 

কাঁড়ি কাঁড়ি মানুষের মধ্যে তুমি আনাড়ির হাতঘড়ি হও, 
                                              অথবা জলদস্যুর রুদ্রাক্ষ 
মাঝমাঠে পাতাহীন বাবলাগাছের ছায়ায় বসে বিশ্রাম নিতে থাকা 
ছেঁড়াখোড়া  কৃষকের কাছে হাঁটু মুড়ে বসে এই প্রার্থনা করো 
                                রাতকানা মানুষের হাফ-সাঁতারগুলো যেন ভালো থাকে  

আমরা গরম ভাতের ভিতর সাঁতার কাটি
যার যার নিজের নিজের হাঁড়ির গরম ভাত
আমরা পরমাত্মারূপিনী আন্নাকালীর ভিতর সাঁতার কাটি 
যার যার নিজের নিজের আন্নাকালী 
গরম-ভাত হোক অথবা আন্নাকালী , সবাই তো
একই মনপবনের নাওয়ে ভেসে আসা রক্তকরবী

ওদিকে কতক্ষণ ধরে শাউড়ি ভদকে চলছে 
কোন বউকে বলব ভালো ভাত চাপিয়ে হাগতে গেল
কিন্তু বউয়ের কী দোষ নতুন জামাইয়ের জন্য লুচি ভাজতে গিয়ে
সে না হয় লুকিয়ে লুকিয়ে নিজের দু-গণ্ডা লুচি সাবাড় করেছে
ঘরে নতুন জামাই এসেছে পাতিহাঁসের ভাগ্যাকাশে আজ 
দুর্যোগের ঘনঘটা, এত হইচই হুল্লোড়ে অবশেষে 
তাকে বলিপ্রদত্ত হতে হয়, কী আর করা যাবে, একবার
রান্নাঘরে উঁকি মেরে, চ্যালাকাঠের আগুন থেকে বিড়ি ধরিয়ে 
                                  হেজে যাওয়া বীজতলার দিকে হাঁটা দিই  

রক্তকরবী রক্তগোলাপ অথবা রক্তগাঁদা, তারা যদি যদি 
কারো সঙ্গে ডেটিং করতে আসে তবে তাদের বুঝিয়ে বলো
                        মাগি ও মিনসে এই দুটো শব্দই কিন্তু 
                                  সমস্ত জলপ্রপাতের উৎস
যদিও রোজদিন পরিবেশবিদ্যার সিলেবাসও বদলে যায় 









জন্ম থেকে জন্মান্তর   

দুপুর-জন্মে আমাকে যেখানে পোড়ানো হয়েছিল 
নূপুর-জন্মের চাল-কলাই ভাজা খেয়ে
একদিন সেখানে ছুটে যাই  

আমি-পোড়া গন্ধ শুঁকি 

দেখি, একটা মাটির হাঁড়ির ভাঙা খোলায় রাখা আছে 
আমার আধ-পোড়া নাভির জলকল্লোল  

গীতবিতান হাতে নিয়ে আমি বোমা বাঁধি, এবং 
খড়-পালুইয়ে খসে পড়া তালপাতাকে বৌমা বলে ডাকি 

স্বাতী-নক্ষত্রের নীচে থাকতে থাকতে 
ক্রমশ বুড়িয়ে যাচ্ছে যে মানুষেরা তারা অবশ্য 
                                                        অন্য  কথা বলে 

তাদের কানের লতি তো আর পিরামিড আঁকতে শেখেনি   

যদিও তাদের সব ফষ্টি-নষ্টি ও ফসলের উৎসবে 
                                আজো  রয়ে গেছে 
                               আমার মশাল-জন্মের কক্ষপথ  









বুকের বোতাম খুলে 

মনসাথান ভৈরবথান পিরবাবার-থান 
গোরুবাথান মহিষবাথান 
বনবিতান বাণীবিতান মনবিতান  
কলতান ঐকতান তানপুরা 
সব দরজায় ধূসর ব্যাঙের মতো কড়া নাড়ছি 
গায়ে মেখে নিয়েছি মেয়েদের ব্রতকথা ও পুজোপাব্বন 
পিঁচুটি-পড়া চোখে যে  স্বপ্ন দেখি 
তা কতটা সফল হবে জানি না 
মুথাঘসেদের সঙ্গে করমর্দন সেরে নিই  
রাধামাধব রাধামাধব 
চৌকাঠ পেরোলেই নৌকাদিন 
আতাগিরি হাতাগিরি ছাতাগিরি 
মগ্নচৈতন্য ভগ্নচৈতন্য নগ্নচৈতন্য 
কচু-বরবটির গার্হস্থ্যের মধ্যে লাফ দিয়ে দেখো
                                         তা-ধিন তা-ধিন 
গোলাপি রঙের ছাতা মাথায় হাঁটছে নদী 
বুকের বোতাম খুলে বুড়ো আঙুলের টিপছাপ 
                           হয়ত আরো বহুদূর হেঁটে যাবে 
তুমি কি তার হাত ধরে হাঁটবে 








কাঁচা-মাংসের জ্যোৎস্নায়

ডোম-পুরোহিতের মন্ত্র-বলার দিকে ছুটে যাওয়া 
                                              ট্রেনের পোর্ট-ফোলিওতে 
                                           আমি যে চালতাপাতাদের সৃষ্টি করি 
ঘর-পালানো হাবলু-ফতিমার বিয়ের মেনুকার্ডে 
                                               সেই চালতাপাতারাই  আবার আমাকে 
                                                                              সৃষ্টি করে 

পান-বরোজের আলোছায়ায় আমি যেভাবে 
বৃষ্টির কাছে নিজেকে তুলে ধরি এবং 
আলতাপেড়ে শাড়ির ভাঁজ খুলে চালতাপাতারা 
যেভাবে ঘোড়দৌড়ের দিকে নিজেকে প্রসারিত করে 
                                 তা থেকেও জন্ম নেয় অনেক মিথ ও মিথোজীবিতা 

নিম্বাস-মেঘেরা বৃষ্টির বার্তা পাঠয় 
আধপাকা দেওয়ানি ও ফৌজদারির ভিতরঘরে জমে ওঠে 
                                                              আরো অনেক ভ্রূপল্লবের খেলা 

এ-সবের মাঝে নৌবিদ্রোহের কথা মনে পড়লে আমার আবার 
                                        একজন রোগা পাতলা শহিদ হতে ইচ্ছে করে 

গার্লফ্রেন্ডের হাতে রাঁধা বাটি-চচ্চড়ি খেয়ে
পান্না খুলে যাচ্ছে, হিরে খুলে যাচ্ছে, চুনি খুলে যাচ্ছে 
হই হই করে খুলে যাচ্ছে নৌকা ও নাবিকের পাল্লা 
নতুন আলোর মদে ভেসে যাচ্ছে 
                         কত মা-মরা বাপ-মরা ও ভাতারখাকি 

জলরঙে আঁকা ভালোবাসার পাশে বসে 
গোবরকুড়োনিরা খানিক জিরিয়ে নিচ্ছে 

কাঁচা-মাংসের জ্যোৎস্নায় কয়েকটা হরিণীও থমকে দাঁড়িয়েছে






মুরারি সিংহ 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন