অযান্ত্রিক
ট্রাক্টরের মুখ দিয়ে
ধান ঝরে পড়ে
গম ঝরে পড়ে
আলু ঝরে পড়ে
অথচ
আমরা দেখতে পাই না
আত্মার মোহে পড়ে
রাতকানার মতো হাতড়ে
কোনওকিছুর
শুধুমাত্র আত্মাই খুঁজে বেড়াই
যার ফলে
আত্মা শরীরকে আড়াল করে রাখে
যা দেখা যায়
তাকে না দেখে
আত্মা খুঁজতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে
ট্রাক্টরকে যন্ত্র বলে গালি দেই
পেরেক
মানুষের আনন্দের শেষ নেই
আনন্দের সব রাস্তাই
রোমে গিয়ে হাজির হয়
তার মধ্যে
একটি আনন্দ হল
দেওয়াল অথবা শক্ত কাঠের শরীরে
পেরেক পোঁতা
এই পেরেক পোঁতার জন্যই একমাত্র
কোনও হাতুড়ির প্রয়োজন হয় না
এই পেরেক পোঁতার পর
মর্ত্য পেরিয়ে
স্বর্গ ছাপিয়ে
আনন্দ মানুষকে
অন্য পৃথিবীতে পৌঁছে দেয়
যেখানে শূন্যবাদ বিরাজ করে
সাফল্য
যে বাসেই চড়েছি
তার কতবার চাকা খুলে গেছে
কতবার
তেল ভরতে
পেট্রোল পাম্পে ঢুকেছে
আর
অসংখ্যবার যান্ত্রিক গোলযোগ হয়েছে
এসবের ছাদে উঠে
রাস্তায় ঝাঁপ দিয়ে
আবার হেঁটেছি
পায়ে কাঁটা ফুটে গেছে
এই কাঁটা থেকেই তো
এতসব গাছপালার জন্ম হল
এই যে শিউলি গাছ
যার শরীর থেকে ফুল ঝরে পড়ে
রাস্তা ঢেকে দিয়েছে
সেগুলো কি সাফল্য নয়?
বলো
সাফল্য আর কী হতে পারে?
ঢেঁকিছাঁটা চাল
একবার
একটি নদী খুঁজতে বেরিয়ে
সেই নদীতেই তলিয়ে গেলাম
আমার
মৃতদেহ ভেসে উঠল
কয়েকশো মাইল দূরের একটি সমুদ্রে
জোয়ারের জলে
আবার ফিরে এলাম জন্মভূমিতে
আবার জন্ম নিলাম
আমার মুখ দিয়ে ঝরে পড়ল ঢেঁকিছাঁটা চাল
এই
ঢেঁকিছাঁটা চালই তো আমার আত্মজীবনী
তারপর
আর কখনও
আমি নদী খুঁজতে যাইনি
এখন নদীই
আমাকে এসে ধরা দিচ্ছে
ঠায় দাঁড়িয়ে থাকছে
আমার দরজায়
ছায়া
আমি
একটি মহীরুহের স্পর্শ পেতে চেয়েছিলাম
তার
স্নেহ-ভালোবাসাও পেতে চেয়েছিলাম
সেইমতো
গাছের পাদদেশে গিয়ে দাঁড়ালাম
গাছ আমাকে
প্রথমেই গিলে নিল
তারপর উগড়ে দিয়ে
ছায়া দান করল
গাছের ছায়া নিয়েই
প্রথমে দ্বন্দ্ব শুরু হল
ছায়া কি গাছের একার
প্রশ্ন করাতেই
গণ্ডগোলের শুরু
তুমুল ঝগড়াও হল একদিন
গাছ
আমাকে তাড়িয়েও দিল
হঠাৎ একদিন
গাছ ভেঙে পড়াতেই
বুঝলাম ছায়া কই?
ছায়া কোথায়?
আমার ছায়াটাই তো আমার সঙ্গে চলে বেড়াচ্ছে?
বুঝতে পারলাম
গাছ যে ছায়া দান করেছিল আমাকে
তার মধ্যে আমার ছায়াটাও ছিল
তার পর থেকে
আমিও আর
একা একা ছায়া হতে চাইনি কখনও
ভাবনা
ভেবেছিলাম
আমার জন্ম হবে
ভেবেছিলাম
আমার মৃত্যুও হবে
কিন্তু
কখনও ভাবিনি
আমি আবার ফিরে আসব
কারণ আমি বিশ্বাস করি না
ভাবনাগুলোর কোথায় ভুল আছে
ভাবতে ভাবতে
কত নগর-বন্দর
কত নদী-নালা।
কত বনজঙ্গল-ঝোপঝাড়
আরও কত কী
পেরিয়ে পেলাম
চলে যাবার সময়
ফেলে রেখে গেলাম
আমার অসমাপ্ত ভাবনা
ফেলে রেখে গেলাম
আমার ছেঁড়া কাপড়চোপড় গেঞ্জিজাঙিয়া
আর ফেলে রেখে গেলাম
জীর্ণ বইপত্র কাগজকলম
আর
ভাঙা দোয়াত এবং গড়িয়ে পড়া শুকনো কালি
ম্যাজিক বোন
কিছু মানুষের কাছে
পৌঁছাতে চেয়েছিলাম
আর হাতের কাছে যারা
তাদের জড়িয়ে ধরতে চেয়েছিলাম
তার জন্যই তো মোট বয়েছিলাম
কৃষিখেতে নেমে
ধান রুয়েছিলাম
তারপর
খাল পেরিয়ে
নদী পেরিয়ে
বাস ধরেছিলাম
তারপর এই আশ্চর্য নগর
তারপর তার বুকের ভেতর
অত্যাশ্চর্য এই কলিজা
এই মোহময় হৃৎপিণ্ড
যাকেই ছুঁতে গেছি
পি সি সরকারের ম্যাজিক হয়ে গেছে
আজ আমি
একটা ম্যাজিক বোন হয়ে
হাতে হাতে ঘুরি
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন