ঘুম 





উৎসর্গ : 
কুঁড়ের বাদশাদের

ওয়েবজিন প্রকাশক :
আমিনুল ইসলাম @ ভুবনডাঙা ওয়েবম্যাগ






=
জাগরণ-রঙের-ঘুম

আমাকে সেকুলার-ঘুম বলল,
জলরঙের-ঘুম আর্তনাদ করলেই, সমস্ত মৃত
স্নায়ু জেগে ওঠে। তারপর হলুদ রঙের বৃষ্টির জন্য
ছায়াপথের কাছে প্রার্থনা করে।

আমি বিশ্বাস করিনি। কেন-না জামগাছের ছায়া,
বদমাস-ঘুম দুশ্চরিত্র-ঘুম আত্মহত্যাপ্রবণ-ঘুম
এবং মা-মরা-ঘুম সম্পর্কে যে তথ্য দিল, তাতে
অনেক স্বপ্নডুবির সম্ভাবনা।

আমি অন্ধকারের ইস্তাহার পড়েই জেনেছি,
ভাতঘুম আর রাতঘুমের মধ্যে যে গ্যাপ আছে,
সেই গ্যাপের মধ্যে অনেকগুলো নীরবতা
অভিমান রেওয়াজ করে।

এই অভিমানের গায়ে
জাগরণ-রঙের-ঘুম ডিটিপি করলে সমস্ত নৌকো
নদী-বন্দনা শুরু করে।






=

নিরক্ষর-ঘুম

সাক্ষর-ঘুম
নিরক্ষর-ঘুমকে সহজপাঠ আর বর্ণপরিচয়
পড়ার কথা বলল।

ওদের কথার মধ্যে
ঘুমের ওপর পিএইচ.ডি করা-ঘুম এসে হাজির।

সাক্ষর-ঘুম চুপ,
নিরক্ষর-ঘুম হাত নেড়ে বলতে লাগল,

গবেট কাঁটাচামচগুলো ডিনার টেবিল শাসন
করছে। তাহলে,

সাক্ষর হয়ে কী হবে?






=

হল্লাবাজ-ঘুম

আমাকে ঘুমপোকারা বলল,
ঘুমোবার সময় কারো সঙ্গে কথা বলবেন না,
স্কুটার চালাবার কথা ভাববেন না,
টুথপিক দিয়ে দাঁত খুঁটবেন না,

আমি সবই মেনে চলেছি,
তবু সাবানফেনার বর্গমূল কত বুঝতে পারছি না।

এতে যে ফুলদানির আয়ু কমে যাবে, আর
জ্বরের ইস্তাহার থেকে কফিহাউসের কথাবার্তা
হারিয়ে যাবে কাকে বোঝাব।

আমি ঘুমোচ্ছি। আমার ডটপেনটি-ও ঘুমোচ্ছে।
শুধু ঘুমপোকারা লক্ষ রাখছে,

আমি হল্লাবাজ-ঘুমগুলোকে বন্ধু-তালিকা থেকে
বাদ দিয়েছি কিনা...







=

ভ্যানগগ-ঘুম

রাত ১৩টার পর
ভ্যানগগ-ঘুম অসংখ্য লাল অন্তর্বাস চুরি করে
চিবোতে থাকে।
পিকাসো-ঘুম অনেক আগেই তাকে সতর্ক করে
দিয়েছে,

রং নিয়ে রংবাজি করবি না। তাহলে আকাশের
চোখে ফ্যাসিস্ট হয়ে যাবি।

এখন কেউ কারো ডায়ালগ শোনে না।
অতএব ভ্যানগগ-ঘুম শুনবে কেন?

কেউ বুঝতেই পারে না। জুঁইফুলের ওমলেট
থাকতে ভ্যানগগ-ঘুম অন্তর্বাস চিবিয়ে খায় কেন?
এর উত্তর কেউ জানে না।

একদিন শহিদমিনারের নীচে দাঁড়িয়ে স্বয়ং ব্রহ্মা
এই প্রশ্নের উত্তর দেবেন।

কিন্তু তার আগে আমরা লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি-র
ডায়েরি থেকে জেনে নিই,

কীভাবে মোনালিসা-ঘুম চোখে আনতে
হয়।






=

ভাতঘুমের ব্লাডরিপোর্ট

আজই ভাতঘুমের ব্লাডরিপোর্ট এল,

সুগার : হিমালয়
কোলেস্টরেল : ফারাক্কা বাঁধ
থাইরয়েড : জিটি রোড

ভাতঘুম খুব হাসিখুশি।
বলছে, ওষুধ চলছে। দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৫টা
পর্যন্ত হাঁটছি। মেপে রোদ খাচ্ছি।
একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।

আমি মনে মনে বলি, ও যেন সুস্থ হয়ে যায়
ঠাকুর।

এক-গুচ্ছ তোবড়ানো স্বপ্ন ছাড়া ওর
কে-ই-বা আছে।






=

স্লিভলেস-ঘুম

দখিনাবাতাস একটা অদ্ভুত
খবর জংধরা বিছানায় এনে ছড়িয়ে দিল:

এরপর ঘুমের জন্য-ও ট্যাক্স দিতে হবে।

১ ঘণ্টা থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম ফ্রি।
তারপর প্রতি ঘণ্টা ঘুমের জন্য ১০০ টাকা
অতিরিক্ত লাগবে।

দখিনা হাওয়ার ইচ্ছে ছিল, কুঁড়ের বাদশাদের
টাকার ভয় দেখিয়ে চনমনে করে তুলবে।

কিন্তু রেজাল্ট শূন্য। তার কথা কারো কানেই
পৌঁছল না।

সমস্ত কুঁড়েই,
চোখে স্লিভলেস-ঘুম জড়িয়ে শুয়ে আছে।








=

শ্রীকৃষ্ণ-ঘুম

আমি সকালবেলা
শ্রীকৃষ্ণ-ঘুম নামে একটা কবিতা
লিখলাম। বিকেলে দেখছি, কবিতাটি নিমোনিয়ায়
আক্রান্ত।

আমি বুঝতে পারছি না,
সাদা-কাগজের মধ্যে নাকি আমার কলমে
ঘৃণ্য জীবাণু ছিল।

আমি কবিতাটিকে সুস্থ করব বলে,
পেনিসিলিন নামে একটা কবিতা লিখলাম। সেই
কবিতাটি অসুস্থ কবিতাটির ওপর রাখলাম।

সকালবেলা দেখছি,
শ্রীকৃষ্ণ-ঘুম সুস্থ হয়ে উঠছে। এখন 
সে রাধা-ঘুম-কে দেখে জিব-উলটে
সিটি দিচ্ছে।








=

দুশ্চরিত্র-ঘুম

কিশোর ঘুম প্রাপ্তবয়স্ক হবার পরই
জাগরণ-কে ঘৃণা করে। আর এতেই অন্ধকারের
ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়।

তবু এই নষ্ট শব্দ দিয়ে একটা কম্পিউটার বানালে
সারা পৃথিবীটাই হাতের মুঠোয় চলে আসে।

প্রাপ্তবয়স্ক ঘুম বুঝতেই পারে না, সে-ও একদিন
দেয়ালের ছবি হয়ে যাবে।

আমি ১২২ রকম ঘুমের কথা জানি। তারমধ্য
সবচেয়ে বজ্জাত দুশ্চরিত্র-ঘুম।

এই ঘুম মাঝরাতে চোখকে ফাঁকি দিয়ে অন্য
বিছানায় চলে যায়।

এতে যে ওর সিফিলিস হয়ে যাবে বুঝতেই
পারে না।








=

আঁশবঁটি-ঘুম

হাতে স্টিয়ারিংধরা
ড্রাইভারের চোখে সব ঘুম-ই নিষিদ্ধ।

তবু জলপরি-ঘুম মেঘমায়া-ঘুম লালশালুক-ঘুম
রঙাবউদি-ঘুম আর দিদিমণি-ঘুম,

যখন ড্রাইভারের চোখে আসতে ব্যর্থ হয়,
ঠিক তখনই কৌশলে আঁশবঁটি-ঘুম তার
ঘোলাটে রেটিনা দখল করে নেয়।

তারই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় শহরের প্রতিটি
গলির মোড়ে,

সারাদিন-ই মনখারাপ-বৃষ্টি হয়।







১০
=

ঘুম-উপনিষদ

আমি ঘুম-উপনিষদ পড়ে বুঝেছি :

জুলিয়াস সিজারের ঘুম মারি আঁতোয়ানেতের
ঘুম-কে ঈর্ষা করে।

রবার্ট ক্লাইভের ঘুম কতটা বনেদি,
আলেকজান্ডারের ঘুম কতটা বুদ্ধিমান,
সম্রাট নিরোর ঘুম কতটা হিংসাপ্রবণ,
হিটলারের ঘুম কতটা বিষ্ফোরক
মিরজাফরের ঘুম কতটা আত্মকেন্দ্রিক, আর
জুডাসের ঘুম কতটা স্বার্থপর,

সে বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা পড়ে আমি
এ-টুকুই বুঝেছি,

এইসব ঐতিহাসিক ক্যারেক্টরের ঘুম কখনো
মানবিক হয়ে ওঠেনি।

তাই চিরদিনই নেপোলিয়নের ঘুম গৌতমবুদ্ধের
ঘুম থেকে ১ কোটি আলোকবর্ষ দূরে
দাঁড়িয়ে।



সুশীল হাটুই

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন