শূন্যে ছুঁয়ে

কারণ আমিই একটি শব্দস্তবককে প্রোথিত করেছিলাম তোমার গর্ভে
প্রসবকালে তার উৎপীড়ন ছাড়ালো  অত্যাচারের সব মাত্রা 
ভেসে গেছিলে তুমি, ডুবে গেলাম আমিও উৎকন্ঠায়। ভেবেছিলাম সব শেষ। মুছে যাওয়ার আগে তোমাকে কি আর পাবো কখনো, অন্তত একবার  তোমার ঔ হাঁপিয়ে ওঠার দীর্ঘতম শ্বাসটি  নির্গমনকালে নদীর পাড়ের মত ছড়িয়ে যাবে চোখের মেঘ, স্থির হবে 
,স্হিরতর  ক্রমশঃ। আশঙ্কায় চুষবো নিজের আঙুল, বাঁ হাতেরও।ঠিক তখনি দেবদূত জেগে ওঠবে  একটি  শাদা কাপড়ে মুড়ে পবিত্রতার প্রতি আমার লজ্জা ঢেকে দেবে আমার বোনেরা। অথচ সেই পবিত্র চিহ্ন দেখেই আবাসিকদের এরেনায় বসবাসের ছাড়পত্র পাবো।খোদ  আমার  একটু আগের উৎকন্ঠিত ব্যক্তিটি হেসে উঠবে প্রসন্ন দ্বিধায়। মিষ্টি খাওয়ান দাদা।  হেসে হেসে বলাবলি করে কি সব যার দুপয়সা মূল্য নেই অথচ এসবই চড়া দামে কিনে নেয় প্রতিদিনের সন্ধ্যা হরকরা , বাসি দুপুরের বালিশ ,আরো কৌতুহলী রাতের পে প্যাকেজ।মূল্যহীন সবকিছুর মূল্য আজ বেড়ে গেছে বাজারে ,গুরুত্ব বেড়েছে কিছু না করা এসব আনুষ্ঠানিক চর্চার।
ইতিমধ্যে নামকরণ টাও  হয়ে গেছে আমার। খুব দ্রুতই বাড়ছি আমি। মাত্র কয়েক ঘন্টায় সুইয়ের খোচায়  একটি ঘনিষ্ঠ যন্ত্রণার সাথে প্রথমবারের মতো পরিচিত হলাম। জানলাম যন্ত্রণা ভোগের হাত থেকে যে অপার্থিব মুক্তি ঘটেছিল নিজের শেকড় বিচ্ছিন্ন করে আলো দেখলাম কত সুন্দর এক ব্যক্তিগত সূর্যের মত,দেবদূতের মত সাদা পোশাকের ডাক্তার নার্স,ঈশ্বরের প্রামাণ্য ও ক্ষমতাকে তুড়ি মেরে দিনে দিনে সৃষ্টি  ,ধ্বংসের অনিমেষ কারিগর,কেন জানি কান্না পেলো খুব,খুব কাঁদলাম।এতগুলো মানুষ কোলে নিয়ে সেসবে কোন আমল দিলো না ,উল্টে হল্লা আনন্দে মেতে উঠলো যেন উৎসব,কি নৃশংস! প্রথম সেই আলোতে  চোখ বুঁজে এলো।বুঝলাম এই ফিসফিস কথার অবাধক্ষেত্র নাক থুড়ি মাথা  গলায় না কারো বুকভাঙা শোকে, উল্টে তা বিগটাইম মোমেন্ট অফ সেলিব্রেশন,হুররে প্রহর। আমার কান্নাগুলো এভাবে এক অনুভূতিহীন পৃথিবীর  অভ্যর্থনা পায় প্রথমবারের মত, ভ্রুক্ষেপহীন, অনড় শিলার সাথে  সংঘর্ষে অগোছালো, দামাল জলের স্রোতের যেমনটা।বড় হয়ে গেলাম, এই ক্ষুদ্র আয়োজনেই  ।শুধু যার থেকে মুক্তি ভিক্ষা করে গেছি প্রতিনিয়ত  ,আমার  নয় মাসের কষ্টদায়ক আশ্রয়, দুজনেই আলাদা হতে চেয়েছিলাম, তার অবধারিত পরিণামে সে এখন বিস্রস্ত, বিধ্বস্ত জীর্ণ ইমারত নিয়ে অসার সংগ্রামের মত পরে আছে হসপিটালের বেডে আর  শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাওয়া দৃষ্টি নিয়ে ঢেলে দিচ্ছে ভালোবাসার বারাত।  নিবিড় শত্রুতা ও ছিন্নমূল হতে চাওয়ার  প্রয়াসে  এমন বিপরীত স্রোত, শুধু আমরা দুজনেই সেলিব্রেট করিনি। তবু এমন ভালোবাসা থেকে যায় সেসব সম্পর্কের মাঝে দিনরাত যারা মুক্তির তীব্র আকুতিতে মরে। মুক্তি মিলে, বিষণ্ণ করে দেয়, শোকের চোরা স্রোত সংযম হারায়, বাঁচা, মরা, আর একটু ব্যাক্তিগত  স্থান সংকুলান ও অর্থহীন ঈর্ষার যাপন উৎসব কেটে ভেজে একাকার হয়ে যায়, সার্বিক এই অনাসৃষ্টি যাকে নষ্টা বলে চিনি অথচ তার পৃষ্ঠপটে আকার নেয় এক পরমতম  সত্য যার ভাষাহীন, শব্দবর্জিত শূন্যতম  দেহ শুধু এক স্রোতের মত কিছু ফিসফিস কথা লিখে চলে জলের শ্লেটে, মূহুর্ত নিজের মনে করে তাকে পকেটে ভরে নেয়, ঘোড়া ছুটিয়ে  কালের প্রবাহে সে ছুটে চলে নির্নিমেষ, বিবিধ কথকতার  যজ্ঞ আয়োজনে।









তাপসী লাহা

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন