অলংকরণ : আদিত্য প্রত্যূষ




নীলিম কুমার





(মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ– বাসুদেব দাস)


মণিপুর 

(১)
অরণ্য থেকে বেরিয়ে এল
একজন ঈশ্বর
নগর থেকে বেরিয়ে এল
অন্য একজন ঈশ্বর

কুকি আর মেইতে
ঈশ্বরের পোষাক,
দুজনেই পরে নিল

একে অপরকে জিজ্ঞেস করল
আজ আমাদের কার্যসূচি কী?
একজন বলল – বর্বরতা
অন্যজন বলল– বাঃ প্রিয় খেলা।

দুজনেই একে অপরের
কাঁধে কাঁধ রেখে বলল-
তাহলে খেলি এসো বর্বরতা…






(২)
একদল উন্মত্ত মহিলা
ছেঁচড়ে নিয়ে এল দুজন মহিলা
এবং একটি ঘরে ঢুকিয়ে দিল
মহিলারা পুরুষদের ডাকল
এসো। এই দুজনকে ধর্ষণ কর 
এদের ধর্ষণ করতে পারলেই তোরা পুরুষ

এক এক করে দেড়শো মানুষ ঢুকল
ঘরটিতে,
আকাশটা কাঁপতে থাকল…
রক্তে মাখামাখি হয়ে
ঘরটি থেকে বেরিয়ে এল
মহিলা দুজন






(৩)
শিশুটাকে বুকে নিয়ে
পালিয়ে যাওয়া মহিলাটি
তাকে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া মানুষটাকে বলল–
আমার কাপড় খুলিস না
আমাকে ধর্ষণ করিস না
আমার গুপ্তাঙ্গে আগুন আছে
পুড়ে মরবি…






(৪)
মানুষগুলি
বাড়িগুলিতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে
জিনিস গুলোতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে
শিশুর খেলনাগুলি আগুনে ছুঁড়ে ফেলছে
মা-বাবার স্বপ্ন গুলি আগুনে পুড়ছে
যাকে যেখানে পাচ্ছে ছুঁড়ে দিচ্ছে আগুনে
যেন শুকনো আবর্জনা!

আধপোড়া  একদল  মানুষকে দেখে
অন্য একদল  মানুষ হাসছে
তাদের অট্টহাসিতে
কেঁপে কেঁপে উঠছে আগুন

আগুন বাছ বিচার কিছুই জানে না
মানুষ ,স্বপ্ন ,খেলনা
কাগজ, কবিতা ফোটো, স্মৃতি যা পায়
তাকেই পোড়ায়

কিন্তু দু টুকরো অঙ্গার কথা বলছে
যে আগুনও কাঁদে মণিপুরে






(৫)
উলঙ্গ করে মহিলা দুটিকে
রাস্তার মাঝখান দিয়ে যেতে দেওয়া হল
আর পেছন পেছন এল
পুরুষের উন্মত্ত শোভাযাত্রাটি
শোভাযাত্রাটির মুখে বর্ষিত হল
ঈশ্বরের জয়ধ্বনি

তারপরে ধর্ষণ করা হল
নারী দুজনকে।
ধর্ষণ করার আগে
প্রতিজন ধর্ষণকারী নাম নিল ঈশ্বরের
আর জাতির

পৃথিবীর চারপাশে ঘুরে বেড়ানো একঝাঁক বাতাস
সেই ধর্ষিতা উলঙ্গ নারী দুজনকে
শুঁকে শুঁকে দেখল–
নারীর গন্ধ আছে কিনা!
আর বিড়বিড় করতে থাকল নিজের ভেতরে
মণিপুরের নারী মনিপুরের নারী…

তারপরে ভিজে উঠা বাতাসের ঝাঁক
রাষ্ট্রসঙ্ঘের অফিসের দিকে চলে গেল
শুঁকে শুঁকে দেখতে রাষ্ট্রসঙ্ঘকে
শুঁকে শুঁকে দেখতে রাষ্ট্রসঙ্ঘকে!








বাসুদেব দাস

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন