পথ
পৃথিবীর কক্ষপথ নিয়ে যাদের বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই
তারা দূরে মরুভূমি থাকতে পারে জেনেও
সমুদ্র মন্থনে যাবে বলে
জলের পথে পা বাড়ায়।
ঝিনুকেরা বালির গায়ে এসে
একটুখানি হেসেখেলে
ফের ঢেউয়ের গায়ে ভেসে বেড়ায়।
পথ ভুল আমারও হয়।
ডানে যাব ভাবতে গেলেই
কী করে যেন আমি বাঁয়ে চলে যাই!
একটা ছোট্ট খরগোশ, তার
সাদা লোমের আগায় আগায় ভয়
আর চোখের কোণায় কোণায়
বুদ্ধি লুকিয়ে রাখে।
খরগোশের মতো আমার তেমন একটা
বুদ্ধি নেই।
তাই শুদ্ধি হবারও কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
তাই ডানদিকে যাব ভাবলেও
আমি ভুল করে হামেশাই বামদিকে পা বাড়াই।
আমার এই দিকভ্রমের ক্ষেত্রে
শীতের কুয়াশার কোনও হাত নেই
হাত নেই ঈশানকোণে জমে থাকা মেঘেদের
হাত নেই কোনও জ্যোতির্বিদ এমনকি
হাত নেই কোনও রাজনীতিবিদেরও।
খটখটে দুপুররোদেও দিক ভুল করে আমি
বেপথে যাব বলেই যেন
ঝরে পড়া হলদে পাতার মতো
দিকশূন্যপুরের দিকে পা বাড়াই।
ঝিনুকের মতো সমুদ্রের জল গায়ে মেখে
রৌদ্রস্নান করবার সাধ জাগে, আমারও।
কিন্তু ওই ঝিনুকের মতো আমি কখনোই
সমুদ্রের কাছ অব্দি পৌঁছুতে পারি না।
সমুদ্রের কথা ভেবে রওয়ানা দিলেও
আমি ভুল করে শেষমেষ সেই
ধূ ধূ মরুভূমির পথেই পা বাড়াই।
যেখানে ভারবাহী উটেরা
দিনের পর দিন হেঁটে চলে
হেঁটে চলতেই থাকে
জলহীন…
জনমানবহীন…
এক অনিশ্চিত পথের শেষ প্রান্তে।
আমি মৃত্যুকে ভয় পাই না
আমি মৃত্যুকে ভয় পাই না।
বরং মৃত্যু আমাকে ভয় পেয়ে পিছিয়ে যাবে কখনো,
এমন ভাবনা মস্তিষ্কের কোষে কোষে ভরে রেখেছি আমি।
কে তুমি? আমাকে মৃত্যুপথ দেখাও
মৃত্যু আর আমার মাঝে
বিশাল এক প্রাচীর তুলেছি আমি।
কে বলে আমি নির্মাণে পারদর্শী নই?
আমাকে পরামর্শ দেবার কমিটি গঠনের
কোনো দায়িত্বই আমি দিইনি কাউকে।
তবু ওরা আমাকে মৃত মানুষের শবযাত্রায়
শামিল হবার জন্য মিনতি করে।
আঙুল দিয়ে মৃত্যু দেখায় পরিচিত জনের।
যে মৃত্যুচিন্তাকে আমি প্রশ্রয় দিইনি কোনোদিন
তবু সেই মৃত্যুই প্রতিরাতে
তার সর্পিল নকশায়
আলিঙ্গন করতে চায় আমাকে।
মরতে চাই না আমি।
মরতে চাইনি কখনো।
তবু মৃত্যু আসে প্রতি রাতে আমার ঘরে,
আমার বিছানায়।
নিরালায় সে আলিঙ্গন করতে চায় আমাকে।
আমি যত তাকে ঠেলে দূরে সরানোর চেষ্টা করি
সে ততটাই জাপটে ধরে রাখতে চায় আমাকে।
যে মৃত্যুকে আমি প্রশ্রয় দিইনি কোনোদিন
সেই মৃত্যুচিন্তাই আমার পায়ের নখ থেকে
মাথার চুল অবধি
আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরতে চায় আমাকে
আমৃত্যু শুধুই— মৃত্যুভয় দেখাবে বলে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন