আলুভাতে

আলুভাতে নিয়ে আমার অভিযোগ
নেই। নুন লঙ্কা আর পেঁয়াজকুচি মেখে সে
খুব বিষ্ফোরক হয়ে উঠেছে।

ভাতের দানা বিষয়ে আমি হতাশ। ওদের
জরায়ুতে অজস্র কাঁকর। আর গা
থেকে বেরিয়ে আসছে, স্নান না করা যুবকের
বগলের বদবু। হলদে দানাগুলোও খুব
থলথলে।

মুগের ডাল তরল রূপসি, আমার থালায়
আসবে না। বেগুনভাজা কালো গিটারিস্ট,
আমার জিবে গান শোনাবে কেন? আলুপোস্ত
দেবী লক্ষ্মী, এসব আমার জন্য নয়।

আজ খেতে বসে অবাক হয়ে দেখছি,
ভাতের দানাগুলো লজ্জায় স্থির। এক
পা-ও নড়তে পারছে না। মরমি আলুভাতে
তাদের হাত ধরে পাকস্থলীতে র্পৌঁছে দিচ্ছে...






www.goodboy.com


ক্রিমিনালদের ওয়েবসাইটের নাম,
www.goodboy.com সেই হিসাবে সৎ মানুষের
ওয়েবসাইটের নাম, www.badboy.com হওয়া
উচিত। কিন্তু বাস্তবে দ্যাখা যাচ্ছে, সৎ মানুষের
কোনো ওয়েবসাইট-ই নেই। আমি ক্রিমিনাল শব্দের
বিপরীতে সৎ মানুষ লিখলাম।
অর্থাৎ ৩৬০ স্কোয়ারফুট ভুল লিখলাম।
ক্রিমিনালের সংজ্ঞা জয়দেবের গীতগোবিন্দে
পাওয়া যাবে না, সবাই জানে।
কিন্তু জানে না, একজন ক্রিমিনাল পার্লামেন্টে
গেলে, সভ্যতার মেরুদণ্ডে হিমযুগ নেমে
আসবে।







ঢ্যাঁড়শ

তুমি সারাজীবন,
ঢ্যাঁড়শ দেখে আহ্লাদে ১৮ খানা হয়ে গেলে।

ঢ্যাঁড়শের
নিঝুম সন্ধ্যায় বানালে,
এই পথ যদি না শেষ হয় বানালে,
ও কোকিলা তোরে শুধাই রে বানালে,

আর তাতেই আমাদের রান্নাঘরে একটা সবজি
বিপ্লব শুরু হয়ে গেল।

সেই বিপ্লবের আগুন ছড়িয়ে পড়ল আমাদের
ডিনারটেবিলে।

আমরা কি কখনো ভেবেছি,
আমাদের নোলায় ভীমসেন জোশীর গান আর
রবিশংকরের সেতার বেজে উঠবে?

তুমি জানতেই পারছ না,
আমাদের তলপেটে ঘুরে বেড়াচ্ছে সপ্তডিঙা
মধুকর। ডিঙার মাথায় নীল ময়ূর।
আজ তোমার বানানো,
ঢ্যাঁড়শের কে প্রথম কাছে এসেছি, খেয়ে
সত্যি কথাটাই বলছি,

তুমি বুঝতেই পারছ না,
আমরা তোমার অজান্তেই তোমার আঙুলগুলো
খেয়ে চলেছি...







সালোয়ার পরা শব্দগুলো

১২ নং সিঁড়িতে ক্লান্তি শুরু।
অনেক কষ্টে ১৮ নং সিঁড়িতে এসে বসে পড়লাম।

তখন নীচ থেকে চিৎকার আসছে,

কথামৃত পাঠ শুরু হয়ে গেছে,
জোনাকিরা এখুনি বাড়ি ফিরে যাবে,
কফি একটু পরেই বরফ হয়ে যাবে,

শব্দগুলো ১২ নং সিড়িতে এসে বসে পড়ল।

আমি ওদের কোলে তুলতে গিয়ে,
পিছিয়ে গেলাম।

প্রতিটা শব্দই সালোয়ার পরে আছে।









কাটলেট-সুন্দরী ও রূপকথার রাজকুমার

আমি কাটলেট সুন্দরীদের ফিশফিশ
করে বললাম, ওগো বিদুষী কাটলেট
তোমরা আমার মুখগহ্বরে এসো।

ওদের এমন দেমাক আমার কথা শুনলই না।
হাসিমুখে স্কুটারে উঠে পড়ল।

আমি ওদের তাচ্ছিল্যের কারণ অনুসন্ধান শুরু
করলাম,

আমি কি তালপাতার সেপাই?
আমার দাঁতে কি ক্যাভিটিস আছে?
আমি কি মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া উজবুক?
আমি কি ল্যাং মারার ওস্তাদ?
শেষে বুঝতে পারলাম,
আমার দোষ শুধু একটাই আমার বুকপকেটে
কোনো তারা নেই।

কাটলেট-সুন্দরীরা রূপকথার রাজকুমারের সঙ্গে
স্কুটারে চলে যাচ্ছে,

আমি চিৎকার করে বললাম,
যা শালিরা আজই তোদের মৃত্যু হবে।









মরে যাই এ কী লজ্জা

আমি সমস্ত গাছকেই বলে দিয়েছি,
তোরা হিব্রু, স্প্যানিশ রুশ চিনা অথবা
ফারাসি ভাষায় কথা বলবি না।
তোরা শুধু বাংলা ভাষায় কথা বলে যা...

আমি কেন গাছগুলোকে একথা
বললাম, সে বিষয়ে ইংরেজি মাধ্যমে পড়া ওক
অথবা অলিভগাছের কোনো কৌতূহল নেই।

আজ সকাল থেকেই দেখছি,
আমি যে পেয়ারাগাছটির নাম লবঙ্গলতা রেখেছি,
সেই গাছটি 'ও আমার দেশের মাটি'-র বদলে,
জিংগেল বেল গেয়ে চলেছে।

এখন আমি স্পষ্টই বুঝতে পারছি,
আমাদের প্রতিবেশী দিব্যা সোহিনী কাঞ্চনমালা
আর্যা আর জাহ্নবী নামের গাছগুলি,

একদিন সত্যভামা নামে কামরাঙাগাছটির
বাংলা শুনে বিদ্রুপ করবে।







প্রেমে ফেল রাক্ষস

আমি যেসব রাক্ষস দেখেছি,
তারা সবাই গলাবাজিতে এম.এ.।

আজ কৌতূহলী হয়ে একজন রাক্ষসের মার্কশীট
দেখলাম:

কাম ক্রোধ লোভ মোহ মদ মাৎশ্চর্য সব বিষয়েই
১০০। এমনকি চতুর্থ-বিষয় চুকলিতেও ১০০।

আমি প্রেমে ফেল কোনো রাক্ষস দেখিনি। ওরা

a2 + b2 ফর্মূলা দিয়ে নৌকো বানাতে পারে,
চতুর্ভুজ দিয়ে হলিডেহোম বানাতে পারে,
বৃত্ত দিয়ে সমুদ্র বানাতে পারে,
রিমঝিমধ্বনি দিয়ে হেলিকপ্টার বানাতে পারে।

প্রেমে ফেল করার পর আহত প্রেমিক নীরব
হয়ে যায়।

সব ব্যর্থ প্রেমিকের নীরবতা দিয়ে যদি
সিঁড়ি বানানো হয়,

সেই সিঁড়ি ছায়াপথ পেরিয়ে যাবে।









সন্ধ্যাতারার সন্ধ্যাহ্নিকের মন্ত্র

কথা হচ্ছিল,
পাজামার চিতসাঁতার নিয়ে
পাপোশের সন্নিপাতিক জ্বর নিয়ে
পোড়া রুটির ১০ রকমের অহংকার নিয়ে।

তখন সকলেই চুপ। কিন্তু যখনই মাছরাঙার
রূপচর্চা নিয়ে কথা শুরু হল, ঠিক তখনই,

টম্যাটোর লিপস্টিক আর রামঝিঙের ফেসক্রিম
চেঁচাতে লাগল। আর এতেই,

বুদ্ধদেবের জন্য পিৎজা আর ম্যাঙ্গোমাজা নিয়ে
যাওয়া সুজাতা, পথ হারিয়ে ফেলল।

উড়ন্ত নীলকণ্ঠপাখির ঠোঁট থেকে, সন্ধ্যাতারার
সন্ধ্যাহ্নিকের মন্ত্র সমুদ্রে পড়ে গেল।

এখন যদি,ওই মন্ত্রগুলোকে সমুদ্র থেকে তুলে
আনার জন্য, কোনো ডলফিনকে নিয়োগপত্র
দেওয়া হয়,

তাহলে কি, এই নিয়োগ অসাংবিধানিক বলে
হেরিং মাছরা অনশনে বসবে?








ঘামাচি মারা পাপ

নে গায়ের ঘামাচিগুলো মেরে দে...

বুঝতে পারছি...
শান্তির খোঁজে...  ওরা সাদা কাগজে এসে
বসেছে...

হাভাতে-তুতো-ভাই...
তোমাদের বলছি... আমি সফেদচারী...
ফেবিকল ঝরাতে পারব না...
কোনো ইলিশার ত্বকে... ঝিনুক বাজাতে পারব না...

বললাম...
ক্ষমা দাও মা-লক্ষ্মী...
ঘামাচি মারা পাপ...

ঘামাচি মারলে...

কাঁটা-চামচের অভিশাপে...
ঠোঁটে হার্নিয়া হয়...

ফুলদানির অভিশাপে...
চোখে ম্যালেরিয়া হয়...

জানালার অভিশাপে...
পেচ্ছাব সবুজ হয়ে যায়...





১০

কানাবেগুনকে পদ্মপলাশলোচন করার যাদুবিদ্যা

বাঁধাকপি নিয়ে আমি কোনো কবিতা লিখিনি।

কেন লিখিনি? তা কি শুধু বাঁধা শব্দটিতে আমার
আপত্তি আছে বলে?

বাঁধাকপি কীসে বাঁধা আছে?
কাম ক্রোধ লোভ মোহ মদ মাৎশ্চর্য নাকি
টম্যাটো-নর্তকীর ঘুঙুরের শব্দে?

সাদা ফুলকপিরা আমার বন্ধু-প্রস্তাব ফিরিয়ে দিল।
সবই বাঁধাকপিকে তাচ্ছিল্য করার
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।

বুঝতে পারছি না, যদি এই কারণে কৃষকরা
আন্দোলন করে, আমি কীভাবে তাঁদের শেখাব,
কানাবেগুনকে পদ্মপলাশলোচন করার যাদুবিদ্যা।




সুশীল হাটুই

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন