অনুবাদ:অতনু রায়

(৪টে অনুবাদ কবিতা)






ভিয়েতনাম

(ভিশওয়াবা শিম্বোর্সকা (পোল্যান্ড) )
 

"ও মেয়ে, নাম কী তোমার?"  --"জানি না।" 

"বয়স কত?বাড়ি কোথায়?"--"জানি না। "

"তুমি  গর্ত করছিলে কেন?" --"জানি না। "

" তুমি কতদিন ধরে লুকিয়ে আছ?" --"জানি না। "

"তুমি আমার আঙুল কামড়ে দিয়েছ কেন?"—
"জানি না। "
 
"তুমি কী জান যে তুমি আমায় 
ব্যথা দিয়েছ?"-- "জানি না। "

 "তুমি কোন দিকে? "-- "জানি না।"

 "যুদ্ধ চলছে, তোমাকে 
তো একদিক বেছে নিতেই হবে।" --"জানি না।” 

"তোমার গ্ৰামটার কী এখনও কোনো অস্তিত্ব 
আছে? "-- "জানি না।" 

"ওরা কী তোমার সন্তান?"
--"হ্যাঁ।"


[ ভিশওয়াবা শিম্বোর্সকা(Wisława 
Szymborska, (১৯২৩-২০১২) পোল্যান্ডের একজন 
বিখ্যাত কবি, প্রাবন্ধিক এবং অনুবাদক। তাঁকে 
'কবিতার মোজার্ট' বলা হয়।উনি ১৯৯৬ সালে 
নোবেল পুরস্কার পান। এই বছর ওঁর জন্মশতবর্ষ 
চলছে। ] 






আগুন ও বরফ 

(Fire and Ice)

রবার্ট ফ্রস্ট



কেউ বলে পৃথিবীকে শেষ করবে আগুন
কেউ বা বলে বরফ। 
আমি তো কামের আগুনের স্বাদ নিয়েছি, 
তাই আমি প্রথম দলে। 



কিন্তু আমি যদি দুবার ধ্বংস হতে পারি! 
আমি ঘৃণার স্বাদও তো পেয়েছি, তাই  বলব—
ধ্বংস হবার জন্য বরফও দারুণ, 
আর যথেষ্ট। 







যে পথ নেওয়া হয়নি

(The Road not Taken) 
রবার্ট ফ্রস্ট


হেমন্তের পাতা-ঝরা হলুদ বনপথে, 
দুটো মেঠো রাস্তা দু'দিকে চলে গেছিল। 
দুঃখ পেলেও, আমি তো একা পথিক--
কী করে দুটো পথে যাব!
অনেক ক্ষণ ধরে আমি একটা পথ বরাবর দেখার 
চেষ্টা করলাম, 
কিন্তু একটু পরেই সেটা নীচু একটা বাঁক নিয়ে 
ঝোপের আড়ালে অদৃশ্য হয়ে গেল! 


এবার আমি অন্য নির্জন পথটা দেখলাম, 
এটাও প্রায় সমান হাতছানিময়, 
কিন্তু একটু বাড়তি দাবী নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল--
পাতায় ঢাকা, কম পদপিষ্ট হওয়া, 
পায়ের চলাচলে জীর্ণ নয়।


তবু আমি এই পথটাই নিলাম, 
প্রথম রাস্তাটা অন্যদিনের জন্য তুলে রাখলাম। 
যদিও অনিশ্চিত এক পথের পথিক আমি, 
আর ফিরব কিনা জানি না।


অনেককাল পরে, দীর্ঘশ্বাস ফেলে, 
হয়তো বলব--
বনের পথে দুটো রাস্তা দু'দিকে চলে গেছিলো, 
আর আমিই কম-চলা পথটা বেছে নিয়েছিলাম, 
কিন্তু এটাই পার্থক্য গড়ে দিয়েছিল।


[কবি পরিচিতি:রবার্ট ফ্রস্ট(১৯১৪-১৯৭২) 
ইংরেজি সাহিত্যের একজন অত্যন্ত বিখ্যাত কবি। 
উনি বাস্তবধর্মী এবং কথা-বলার ঢঙে,অত্যন্ত 
সাদামাটাভাবে কবিতা লিখতেন। ওঁর মোট 
চারবার পুলিৎজার পুরস্কার পাওয়ার
রেকর্ডকে এখনও পর্যন্ত কেউ ভাঙতে পারেননি। 
ভারতীয়রা অন্তত ওঁর দুটো লেখার সাথে খুবই 
পরিচিত—'Stopping by Woods on a Snowy 
Evening' এবং 'The Road Not Taken' । ]





 

নন্দনা

রবিন ক্লেইন
                                
                                                
নখ কামড়িয়ো না, নন্দনা! 
কুঁজো হয়ে বোসোনা, নন্দনা! , 
না, ঝুঁকে একদম নয়,সোজা হয়ে বসো নন্দনা! 

          ( এক পান্না-সবুজ প্রশান্ত সাগরের জলে
            এক মৎস্যকন্যা হয়ে, আমি সাঁতার কেটে
           বেড়াতে থাকি...বেড়াতেই থাকি...।)    

তোমার স্কুলের কাজ শেষ করেছ তো, নন্দনা? 
ঘরগুলো পরিষ্কার করেছ তো? 
আর তোমার জুতো জোড়া, পালিশ করেছ তো? 

         (অনাথ বালিকার মতো নির্বিবাদী লক্ষ্যহীন
         আমি পথ হাঁটছি।.... 
         অথবা কোনো এক কিশোরীর মতো
         নরম ধুলোর আস্তরণে
         নিঃশব্দে খালি-পা দিয়ে
         আঁক কেটে কেটে, 
         এক হিরন্ময় নৈশব্দ্য বা  
         মধুর এক স্বাধীনতার মধ্যে,          
         আমি চলছি তো,চলছি ....।) 

বেশি চকোলেট খেলে চর্মরোগ হয়, 
চকলেট খেয়ো না,নন্দনা! 
তোমার ব্রণ হয়েছিল,মনে রেখ! 
আমি যখন কথা বলি, 
তখন আমার দিকে তাকিয়ে কথা বল, নন্দনা! 
   
        (আমি এক দুশ্চিন্তামুক্ত রূপান্জেল ➊ 
                       সুউচ্চ মিনারে বন্দী--                                          
         নিশ্চিন্তে, নীরবে।তার মতো উজ্জ্বল
         আমার লম্বা চুল--
         কিন্তু যা বেয়ে উপরে উঠে এসে, 
         আমার একাকীত্ব ভাঙার জন্যও
          আমি কোনো অতিথির দিকে    
          তা মেলে দেব না। )                                 
          

দিবাস্বপ্ন দেখা বন্ধ করো, নন্দনা! 
সর্বদা এমন অন্য চিন্তার মাঝে, 
হারিয়ে থেকো না তুমি,নন্দনা! 
অন্যরা ভাববে--আমি বোধহয় তোমার পিছনে
কেবল ঘ্যান ঘ্যান করি, বুঝলে নন্দনা? 




বিঃদ্রঃ
➊[ রূপান্জেল:এক বিখ্যাত জার্মান রূপকথার চরিত্র।ওই নামের এক বাচ্চা মেয়েকে, এক ডাইনি,এক সুউচ্চ টাওয়ারে বন্দী করে রেখেছিল। সে সেখানে সারাদিন ধরে একা একা থাকত। তার ছিল এক খুব লম্বা সোনালী চুল--যা বেয়ে ওই ডাইনি ওই টাওয়ারে উঠে আসত। ওই চুল বেয়ে একবার এক রাজপুত্রও ওই টাওয়ারে উঠে আসে। পরিণত বয়সে তারা, বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হয় এবং চিরকাল সুখেশান্তিতে জীবন অতিবাহিত করতে শুরু করে।] 



[কবি পরিচিতি: অস্ট্রেলিয়ার মহিলা কবি রবিন ক্লেইন(১৯৩৬) -এর 'Amanda' অবলম্বনে,এই কবিতাটা রচিত। এখনে কেবল  'Amanda'র জায়গায় 'নন্দনা' লেখা হয়েছে।এই কবি সারা জীবনে মানবসম্পদ সাহিত্য পুরস্কার সহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন।শুধুমাত্র সাহিত্য থেকে রোজগারের জোরেই,উনি অস্ট্রেলিয়ার ধনীতম মানুষ হিসেবে নিজেকে পরিগণিত করতে পেরেছেন।] 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন