পিয়াংকী 




পিঁপড়ে 


পুকুরের ঠিক মাঝখানে বাঁশের খুঁটি 
পানকৌড়ি আর বকের সমান আনাগোনা 
একটি কবিতা হলে অন্যটি গদ্য
কেউ দুর্বোধ্য কেউ সাবলীল 

মাঝপথে এসে পড়ে এক বালক 
সে সাঁতার কাটে, এপারওপার বাঁধে ভয়হীন শৈশব 
হাঁপিয়ে গেলে শ্বাস নেয় খুঁটিতে 
অথচ সে কবিতা নয় গদ্যরেখাও নেই ওর খালিগায়ে
ঝুলবারান্দায় বসে আমি অবসর পোহাই আর দেখি প্রত্যেকের চামড়ার ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে দাম্ভিক পিঁপড়ে 







সঠিক জাহাজ 

কখন যে আনমনে লিখেছিলাম সেই ঠিকসন্ধ্যার কথা, জানি না। মনে নেই সবটুকু। আকর্ষণ কমে এসেছে বললে প্রেমিক দেখিয়ে দেয় মধ্যবর্তীটুকু , ঝাঁপিয়ে পড়ে বুকের অন্ধকারে। দুর্বলতা বুঝি বলেই কথা বাড়াই না  আর, ঈশ্বরকণায় লেগে আছে এই যে প্রাচীন উল্লাস, শিলালিপির গায়ে সেই তো আসল জলবিম্ব। প্রেম তো লুটিয়ে দেওয়া বোঝে,লুঠতরাজ নয়। প্রেম নির্ভরতা দিতে চায় গোপন অলক্ষ্যে, সেখানে নির্বাচন নেহাৎই তুচ্ছ উপাদান। তো,যা বলছিলাম সেই ঠিকানাহীন ঠিকসন্ধ্যা। অমন জুঁইফুল অথবা লীলাময়ের আস্তানা কিংবা  অভিসারী দগ্ধদিন...

এমন কত ঠিকসন্ধ্যা আমার ঝুলিতে, গুনতে বসলেই সামনে এসে দাঁড়ায় হলুদ জাহাজ 






মা-কবিতা

নয় নয় করে প্রায় হাজার খানেক কবিতা লেখা হয়ে গেল, হয়তো তার বেশীও। দ্বন্দ্ব লাগল না, লাগল না অতিলৌকিক প্রক্রিয়া , দরকার হল না কোনো প্রকার সৌদিআরবীয় খনি। বান্ধবঅঞ্চল  পেয়ে গেলাম মাটিপথে। ভাঁটিগাঙ পেরিয়ে এসে সটান উঠলাম মৃত মায়ের কোলকাপড়ের আড়ালে। ততক্ষণে তাঁরও তন্নতন্ন করে খোঁজা শেষ হয়েছে কন্যাসন্তানের ক'টি দোহারা চেহারার বই,দু'জনে  একত্রে নৌকা বুনে দিলাম একে অপরের গা ঘেঁষাঘেঁষি করে। সূর্যাস্তের সময় সে ঝনঝনে কিছু মুদ্রা গাঢ়রং অভিষেক আর এক বুক বুভুক্ষা দিয়ে নেমে গেল নদীর দিকে। খুব সন্তর্পণে আমিও তাঁকে জলে মিশিয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। দেখি তখনও আমার পোশাকে লেগে আছে নদীপাড়ের  মাটি।  মা দিয়ে গেছে খুনী না হয়েও কবিতা লেখার সহবৎ

অথচ দেখুন,
নশ্বর এ' জন্মে ভেদরেখা নেই,নেই আমার আর মায়ের কোনো  যোগাযোগও






জুলাই বিষয়ক

আষাঢ় একটি পুরুষ হলে, মাসকাবারির খাতায় খুব ছোট্ট করে লুকিয়ে লিখে রাখি কাজু কিসমিস আর খেজুরের ক্রয়মূল্য। দিনান্তে পরিশ্রম ফুরিয়ে এলে তার হাতে তুলে দিই ভরন্ত সূর্য।  স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বাড়ে, পাইক পেয়াদা লাঠি লস্কর নিয়ে সে এগিয়ে আসে চোখ পাকিয়ে। তর্জনী উঁচু করে তুলে ধরার সময় ধীরে বলি , " তোমার বোচকার দিকে তাকাও "। নিজেকে হতভাগ্য বলা পুরুষের মুখ তখন ঢেকে গেছে লাজুকবস্ত্র আর মিহিদানাপ্রেমে।  ইন্দ্রিয়বিলাসী তখন নম্রমুখ নদী। সে দেখায় নদীর জলে পা ডুবিয়ে কিভাবে সে একদিন সন্ধ্যাতারা বলে ডেকে উঠেছিল প্রিয়নারীকে। 

কোনো একটি জুনের ভোররাতে আমরা একসাথে অপেক্ষা করছিলাম জুলাই বিষয়ক কবিতার জন্মমুহূর্ত  নিয়ে 







নৈ:শব্দ্য

যেন একটা যুগ।
কেউ যেন আটকে রেখেছে গুহায়
বন্ধ হয়ে আসছে শ্বাস, আমার দিকে শুধু তাকিয়ে আছে একজোড়া চোখ

সেই চোখে ব্রহ্ম
সেই চোখে আত্মা
সেই চোখে পুকুর

অসংখ্য বাদুড়,এ ডাল থেকে অন্য ডালে
অসংখ্য মানুষ -- ঝোপের ভেতর
অসংখ্য হাঁস -- পুকুরের জলে

সাজো সাজো রব -- কেউ বলছেন পরিতাপ, কেউ প্রণয়, কেউ বলছেন পরিবর্তন

তুমি স্থির--স্থবির--শীতল
তোমার সর্বাঙ্গে উড়ে আসছে মেঘ
ঝড় আসার কথা জেনেও তুমি খুলে রেখেছ আকীর্ণ দরজা জানালা

ঈশ্বর... 
হিমঘরে কে ? 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন