প্রতিরোধ এবং করুণা বাড়িয়েছি
নিংড়োলে কী রস বেরোবে এই পরচুলো
শহরটার, পড়ন্ত আলোতে যে দিন প্রায়
ফুরিয়ে এলো, এখনই নিয়ন আলোর
ফূর্তিবাজ প্রবেশ ঘটবে। লম্বা, প্রসারিত হাঁটা
আমাদের এই বিকেলে, ভুলতে চাওয়ার মত
ঠান্ডা হাওয়ার ছোপ শরীরে, গান, খানিকটা
বেসুরো কিচিমিচি, খানিকটা ফেলে আসা অভিমান।
অসংলগ্ন মেসেজ একটা । আমি গান
হারিয়ে ফেলেছি গো, আমি আর ভালো নেই।
আমার মনিটরটা, আমার স্ক্রীনটা এবার ধুলোয়
ঢেকে যায়, একটা ফালি অংশ
শুধু স্পষ্ট থাকে, পাঠযোগ্য, বাকিটা নগণ্য,
বাকিটা স্রেফ শূন্য পাল্লায় –
এতে যদি
তোমরা অবাক হতে চাও তো হও,
আমি আমার প্রতিরোধ এবং
করুণা বাড়িয়েছি বহু বছরের
স্যাঁতসেঁতে উদাসীনতায়।
২
কে হবে সেই শুদ্ধ অব্যয়
দোয়েল ব্রাত্য ছিল, আমি মনখারাপের দাদন শুনলেই
দোয়েলের ভাষা অনুবাদ করতে থাকি।
এই ভাবে আমি দু’ একটা
বাঙলা শব্দেরও মানে বুঝতে শিখেছি। পরাঙ্মুখ শব্দটা
তাড়া করে আসছে সেই অবনীর আমল থেকে, এখন তার
রিয়াটার করা দরকার। নতুন ঘোর চাই একটা,
নিশিদিন নিশিদিন
একটা নতুন নেশা, যে কথায় কথায় চলে যেতে বলবে
আবার পিছু ডেকে এনে তৎক্ষণাৎ ভালোবাসা, তৎক্ষণাৎ
ঘটনাপরম্পরা। কে হবে সেই শুদ্ধ অব্যয় আমার,
পরিমিত অন্বয় যার, বিন্যাসে সহস্রধারা?
৩
খারাপ খারাপ সব ফিটনেস ধাত
প্রাগৈতিহাসিক যে সমস্ত নেতারা মন্ত্রকের
কাজ চালাতেন এ দেশে, তাদের সঙ্গে একবার
দেখা হয়েছিল নৈশ ভোজনে,
খুবই দুঃখের সঙ্গে জানালেন যে
হামাগুড়ি দিয়ে বেগার খাটার আর বাজার নেই এখন,
ছেলেমেয়েরা সব বড় হয়েছে, স্বার্থপর কিন্তু জনপ্রিয়
হতে চায় তারা, স্বকীয়তা আর জ্যামিতিতেই তাদের
উৎসাহ। মেয়েটি দেখলাম স্বতঃস্ফূর্ত, অঙ্ক জানে,
ইতিহাসও, মাথার ঘাম ফেলে অ্যাপ বের করেছে
সমাজসেবার, ছেলেটির জন্যেই
আমার চিন্তা হল, পলকা মতন এক পুত্রসন্তান,
বোকা আদরে বোধহয় হাফনষ্ট বা
খারাপ খারাপ সব ফিটনেস ধাত শিখেছে
কাদের কথা মত উঠতি বড়লাট হয়ে।
৪
এ অঞ্চলেও আলো আসে ফিনকি দিয়ে
আমি আবার শুরু করে দিয়েছি ক্লাসিক পড়তে, এ অঞ্চলে
আলো আসে ফিনকি দিয়ে, সে বোধহয় একবার
এলোমেলো ভুলে পা ফেলেছিল দূরে, তাই পুনরায়
ঘটা করে শোনায় সেই আখ্যান – হয়তো সত্যিই
জেনে গেছে এবার সব কথাগুলোর মানে।
সবেতেই সংশয় আমার, জন্ম থেকেই
সবকিছু অদ্ভুত কেমন, বেয়াড়া, লেগোগুলো আর
জোড়া লাগে না কারুর সঙ্গে।
কাল সন্ধেয় আমরা
শহরের পুরোনো দিকটায় গেছিলাম, গ্রাফিতি
গ্যাং এর সমাবেশ, একটা নেমে যাওয়ার
সিঁড়িও দেখেছি, অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর।
এ অঞ্চলেও আলো আসে ফিনকি দিয়ে।
কিন্তু যথেষ্ট মজবুত নয়।
৫
ট্যাঙ্ক চলেছে মুখটি তুলে
জুতোর ফিতে খুলে ঝুলছিল সেই নায়কের
পায়ে হাঁটলে হয়তো জড়িয়ে একশেষ হতো সব,
কিন্তু সেদিকে আর নজর ছিলো না কারুর
সবাই তখন প্রশংসা করছে তার নতুন
ঢালুগড়ানে ট্যাঙ্কটার, চাকা দেখেছ কেমন,
পূর্ণচাঁদের মায়া যেন, হাবক্যাপে আবার কি সমস্ত
চকচকে রঙ করা।
আমি যা দেখছি, এও কি তাই দেখছে,
এরও কি নজর ওই পুরোনো বটগাছটার দিকে,
যুদ্ধ ঘোষণা করেছে তার বিরুদ্ধে,
কোন দিকে তার নিশানা, জমায়েত এদিকে ক্ষেপে উঠছে
শিহরণে, হাইব্রিড মডেলটা দেখেছেন
এই সমস্ত নতুন বুলডোজারগুলোর, ঘনঘন শিস চলছে
জনমতে, চটপটি, উলুধ্বনি, ট্যাঙ্ক চলেছে মুখটি তুলে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন