উত্তম চক্রবর্ত্তী
প্রথম পরিচয়
সকাল থেকেই আজ মনটা ভীষণ উতলা হয়ে আছে। তার কারণ অবশ্য গোপন করে কোনও লাভ নেই। আজ দুর্গাপূজার অষ্টমীর দিন, চারিদিকে আনন্দের ধারা বইছে। ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েরা নতুন নতুন জামাকাপড় পরে বেশ চতুর্দিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর ওদের এই কোলাহলে আমার মনেও এক অদ্ভুত শিহরণ বারে বারে জেগে উঠছে। এই অনুভূতি আমি কি করে, কার কাছে প্রকাশ করবো তা ভেবে উঠতে পারছি না। আমার মন এতই চঞ্চল যে আমি নিজেকে আর সন্ধ্যা পর্যন্ত সামলে রাখতে পারছি না, তার কারণ আজ আমি এক মহিলার সঙ্গে দুর্গাঠাকুর দেখতে বের হবো। যার সাথে আজ আমার প্রথম পরিচয়ের সুযোগ ঘটবে। একথা ভাবতেই আমার মনের চঞ্চলতা ক্রমশ্য বৃদ্ধি হচ্ছে আর হৃদয়ের স্পন্দনও বেড়েই চলেছে। ভাবছি পরিচয় না হওয়ার আগেই যে রোমাঞ্চ আমি এখন অনুভব করছি, পরিচয় হওয়ার পর যে কি হবে তা তো ভাবতেই পারছি না।
সন্ধ্যাবেলা কর্ণিকার (কর্ণিকা মানে পদ্মের বীজকোষ বা লেখনী)-র সঙ্গী হয়ে এই প্রথম বাইরে কোথাও যাবো। আজ ঠিক সন্ধ্যে সাতটার সময় ওর সাথে দেখা হবে হাজরা রোডের মোড়ে। আজ দুর্গাপূজার এই বিশেষদিনে আমাদের সামনে যেন এক অজানা সন্ধ্যা নানারকম আকার নিয়ে অপেক্ষা করছে। আমার এই শিহরণ আমি কেমন করে সবাইকে বোঝাবো তা ভেবে পাচ্ছি না। শুধু এটুকু মনে হয় ঢেউ যেমন সমুদ্রতীরে একটার পর একটা কখনও মৃদু কখনও বা তাঁর বেগে এসে আঘাত করে তেমনই আমি আমার মনের মধ্যে অনুভব করছি। এটা যে শুধু আমার হচ্ছে তাই নয় এরকম পরিস্থিতির অনেককেই সম্মুখীন হতে হয়েছে, তা আমি আগে অনেক শুনেছি।
এই শরৎকালের দুর্গাপূজার উৎসব আজ পৃথিবীর সর্বত্র চলেছে। বাঙালীরা যেখানেই থাকুক না কেন সেখানেই এই পুজো হচ্ছে। আমার বন্ধুবান্ধব সবাই আজ কোথাও না কোথাও কোনো বিশেষ জায়গায় যাবে এবং আনন্দ করবে, তাই আগে থাকতে আমিও ঠিক করেছি আজ কোথাও একটা যাবো। এসব আলোচনা যখন আমরা বন্ধুরা মিলে সবাই করছিলাম তখনই আমার বন্ধু মিলন আমাকে বলেছিল আমি রাজী থাকলে তবে ও একটি মেয়েকে চেনে তাকে বললে হয়তো আমার সাথে এই শুভ অষ্টমীর সন্ধ্যায় ঠাকুর দেখতে যেতে পারে। ব্যস, আমিও এক কথায় রাজী হয়ে গিয়েছিলাম। আমি জানি, আমার বত্রিশ বছর হয়ে গেল অথচ আমি কোনো প্রেয়সীর স্পর্শ এখনও পাইনি। যেসব মেয়েবন্ধু আমার আছে বা যাদেরকে চিনি তারা সবাই নানারকমভাবে প্রোগ্রামে ব্যস্ত। আর এদিকে আজ পর্যন্ত আমি কোনো মেয়েকে নিজের বান্ধবী বলে পরিচয় দেওয়ার সুযোগ ঘটাতে পারিনি। তাই আমার সব জায়গার বন্ধুরাই আমাকে এই বিষয় নিয়ে নানাভাবে উত্তক্ত করে, তাদের মত এই যে তোর মত ছেলের কেন কোনও মেয়ে বান্ধবী নেই এটা ভাবতেই আশ্চর্য্য লাগে। তবে আমি এ ব্যাপারে আগে কখনও পাত্তা দিতাম না, পড়াশুনা আর মা-বোনকে নিয়েই সব সময়ই ব্যস্ত থাকতাম। কোনও মেয়ের প্রেমে পরার সুযোগই ছিল না। দেখতে দেখতে আজ আমার বয়স হয়ে গেল। একদিন মা একথা তুলতে বলেছিলাম, তুমি চিন্তা করো না আমি আমার জীবন সঙ্গিনীটিকে ঠিকই খুজে নেব।
কর্ণিকাকে আগে আমি কখনো দেখিনি। কি রকম দেখতে, কত বয়স, কোথায় থাকে, কি করে, তার কিছুই আমার জানা নেই বা মিলন আমাকে ওর সম্বন্ধে বিশেষ কিছু খুলে বলেওনি। আমিও এই নিয়ে আর ওকে কিছু প্রশ্ন করিনি, কারণ- আমি জানি মিলন আমাকে কখনো এমন কারো সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে না, যার সাথে আমার মতের ঘোরতর বিবাদ হতে পারে। তাই মনে মনে আমি অনেক জল্পনা কল্পনা করে চলেছি। ওকে ঠিক কেমন দেখতে, কেমন তার চোখের ভাষা, কেমনই বা তার হাসি এই ভাবতেই আমার কেমন লাগছে। সন্ধ্যার জন্য যেন আর অপেক্ষা করতে পারছিলাম না।
দুপুরবেলা পাড়ার পূজা দেখতে গেলাম, এখানে পাড়ার বন্ধুদের সাথে পূজার অঞ্জলী দিয়ে, পাড়ার লোকজনদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করলাম। ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের সঙ্গে নানারকম হাসিঠাট্টা করে ওদেরকে মাতিয়ে রাখলাম। এসব করতে করতে বিকেল পাঁচটা বেজে গেল। আমি বাড়িতে এসে তৈরি হতে লাগলাম। মাঝে মাঝে আমি মনের মধ্যে বেশ দুর্বলতা আর চঞ্চলতা অনুভব করছি। আমার মনে যে আজ এত তোলপাড় চলছে বাড়ির কারোর তা নজরে পড়ছে কিনা ঠিক বুঝতে পারছি না। আমার বাড়িতে শুধু মা আর এক ছোটো বোন আছে। ওরা এখনো পূজামণ্ডপ থেকে ফিরে আসেনি। মা যাবার আগে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, “হাঁ রে মধুর, তুই কি আজ সন্ধ্যাবেলা কোথাও বেরোবি?” আমি সটান তার উত্তরে বলেছি, "হ্যাঁ, মা।”
শুনে মা আর কিছু বলেলো না। কিন্তু আমার বোন রশনা বলে উঠলো, “আমি জানি তুই কোথায় যাবি।”
আমি ওর দিকে চোখ পাকিয়ে বললাম, “তুই থাম, তোকে আর পাকামো করতে হবে না।”
মা বুঝতে পেরে মুচকি হেসে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলেন।
আমি, মা আর আমার বোন এই বাড়িতে আজ প্রায় একুশ বছর ধরে আছি। বাড়িটি ভীষণই বড়। এই বাড়িতে তিনজনের থাকার জন্য খুবই বেশি জায়গা বলে মনে হয়। বাবা মারা যাওয়ার কিছুদিন আগেই আমরা এই বাড়িতে প্রবেশ করেছিলাম। বাবা অনেক বছর ধরে, কষ্ট করে বেশ কিছু টাকা জমিয়ে এই বাড়িটা নিজের মনের মত করে তৈরি করেছিলেন। কিন্তু উনি বাড়িটা তেমন বেশি সময়ের জন্য ভালভাবে ভোগ করতে পারেননি। বাবার হৃদয় সংক্রান্ত ব্যাধি হওয়া মাত্রই মা কিন্তু এই বাড়িতে আর থাকতে চান নি। উনি বারে বারে কেবল বাবাকে বলেন যে বাবা-ই যদি এই বাড়ি ভোগ করতে না পারেন তবে আমাদের থেকে কি লাভ। বাড়িটা বিক্রি করে দাও। তবে বাবা কিন্তু কোনো মতেই মার সাথে একমত হননি। আমার মাঝেমাঝে মনে হয় মা যেন জানতেন যে বাবা বোধ হয় বেশি দিন এই পৃথিবীতে থাকবেন না। জানি না মা কেন এটা তখন ভেবেছিলেন। আমরা অবশ্য তখন খুবই ছোটো, সুতরাং মা আমাদের মতামতের জন্য অপেক্ষাও করেননি। আর করলেই কি আমরা আমাদের মত দিতে পারতাম? মত মানে কি বস্তু তাই তো জানতাম না। বাবা কিন্তু তার শেষ নিঃশ্বাস নেওয়ার আগে মাকে দিয়ে শপথ করিয়ে নিয়েছিলেন এই বলে যে, আমরা যেন এই বাড়িতেই থাকি, এই বাড়ি যেন কখনো বিক্রি না করি। মা সেই আশ্বাস বাবাকে অবশ্য দিয়েছিলেন। আমরা ছাড়াও তো আছে মোহনাদি, যিনি আজ আমাদের সাথে বহু বছর ধরে আছেন, উনি আমাদের বাড়ির সব কিছুই দেখাশুনা করেন, তার উপর আমরা সবাই নানা ভাবে তার উপরেই আমরা নির্ভরশীল।
মোহনাদি কাছাকাছি ছিলেন, তাকে বললাম, “মোহনাদি, আমি এখন স্নানে যাবো গিজারটা কি চালানো আছে?”
মোহনাদি সোজা বললেন, "চালানো না থাকলে তুমি চালিয়ে নিও, তুমি তো জানো।”
আমি একটু লজ্জায় পরে বললাম, “তুমি ঠিকই বলেছ।”
আমিও আর না দাড়িয়ে তাড়াতাড়ি নিজের ঘরে গিয়ে জামাকাপড় নিয়ে সোজা বাথ রুমে ঢুকে পড়লাম।
আমাদের বাড়ি হরিশ মুখার্জী স্ট্রিটে, ওখান থেকে হাজরা রোড বড়জোর হবে পাঁচ-সাত মিনিটের রাস্তা। সুতরাং আমার হাতে এখনো অনেক সময় আছে। মা-র দেওয়া নতুন জামাকাপড় পরে সবে তৈরি হচ্ছি ঠিক তখনই রশনা এসে হাজির।
''এই দাদা, তুই তো এত মাঞ্জা দিচ্ছিস, কেন রে? তা তোর ডেট দেখতে ঠিক কেমন সেটা জানিস তো?”
আমি ওর দিকে কৃত্রিম রাগ দেখিয়ে বললাম, “তোর জেনে কি হবে?"
“বা-রে কর্ণিকা যদি আমার বউদি হয়ে যায়, তবে?” বলে মুচকি হাসল রশনা।
আমি ওর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞাসা করলাম, “রশু, তুই এর নাম জানলি কি
করে?”
"আরে বাবা আমি সবই জানি।”
রশনার চোখদুটি যেন হাসছে আর বলছে আমাকে তুই কখনো ফাঁকি দিতে পারবি না রে, দাদা।
আমি বললাম, “আরে দাঁড়া আগে আমি তো ওকে দেখি তারপর নাহয় তোকে সব বলবো।”
আমরা দুই ভাই-বোন বরাবরই নিজেরা নিজেদের মধ্যে কোনো জিনিস গোপন রাখি না। ওকে যে আমি খুব স্নেহ করি তার সুযোগ রশনা খুবই নেয়। আমার কিন্তু ভালই লাগে ওর এই চঞ্চলতাকে। তক্ষুণি বললাম, " পালা এখান থেকে, নাহলে আমি তোর কানটা মুলে দেব।"
“এই দাদা, প্রথমদিন কিন্তু নিজেকে সামলে রাখিস।” বলেই মুচকি হেসে ঘর থেকে পালালো রশনা।
ঘর থেকে বেরিয়ে দেখি চারিদিকে লোকে লোকারণ্য, জাকজমক, নানা রঙের আলোর আলোময়, মাইকে গানের সুর, গাড়ির শব্দ, লোকজনের কোলাহল, ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের ছোটাছুটি সব মিলিয়ে যেন সারা কলকাতা এক অন্য রূপ নিয়েছে। এ রূপের এক ঐতিহ্য আছে, মনকে আনন্দে ভরিয়ে দেয়, মাতিয়ে তোলে। এসব দেখতে দেখতে আর উপভোগ করতে করতে নিজের মধ্যে যে একটা ভয়ের ভাব ছিল তা কখন উবে গেছে তা নিজেই জানি না। আর এর মধ্যে কখনই বা হাজরা রোডের মোড়ে এসে পড়েছি সে খেয়াল হয়নি। সম্বিত ফিরে পেলাম কর্ণিকার মুখোমুখি এসে দাড়িয়ে পড়েছি। মিলনের মাধ্যেমে আমরা ঠিক করেছিলাম যে আগে পৌঁছাবে সে রাস্তার কোণের দিকে লাম্পপোস্ট থাকবে, তার নীচে যে আগে আসবে সে অন্যের জন্য অপেক্ষা করবে। আমরা দুজনে প্রায় একই সময়ে পৌঁছে গেছি। আর আমরা নিজেদের চিনতে কোনও অসুবিধা করলাম না। দুজনেই মৃদু হেসে পরস্পরকে হাত তুলে নমস্কার করলাম। এই নমস্কার করার সময় আমার মনে হল কর্ণিকার মুখটা যেন একটু উজ্জ্বল হয়ে গেল। মনে হল ও আমার সাথে পরিচিত হয়ে খুব ভাল অনুভব করছে। এটা উপলব্ধি করেই কর্ণিকাকে আমি আত্মবিশ্বাস নিয়ে সরাসরি বললাম,
"কি ভাল লাগছে । আপনার মনকে আমি জয় করতে পেরেছি?"
কর্ণিকা আমার কথা শুনে হেসে বলল "আপনার তো দেখছি নিজের উপর অশেষ আশ্বাস আছে।"
আমি হ্যাঁ বা না কিছুই বললাম না, শুধু ওর দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলাম। দেখলাম ওর মুখের হাসি তখনও মিলিয়ে যায়নি। মনে মনে ভাবলাম আজ আমাদের প্রথম পরিচয়। কিন্তু আমরা আমাদের নিজেদেরকে কেমন সুন্দর ভাবে আপ্যায়ন করলাম। এই সন্ধ্যাটা আজ আমাদের ভালই কাটবে, এ হল আমার দৃঢ় ধারনা এবং আর এই অল্প সময়ের মধ্যে আমরা যে দুজনে দুজনের প্রতি আকর্ষিত তার বিন্দু মাত্র সন্দেহ আমার মনে ছিল না।
তাই ওকে আমিই প্রথমে বললাম, "চারিদিকে কেমন সবাই মেতে উঠেছে।"
তার উত্তরে কর্ণিকা হেসে বলল, "ঠিকই বলেছেন।"
"আপনি আজ কি করবেন কিছু কি ভেবেছেন?”
উত্তরে ও বলল, “হ্যাঁ। চলুন আগে কয়েকটা ঠাকুরের প্যান্ডেল দেখতে যাই তারপরে না হয় কোথাও গিয়ে বসা যাবে। আপনার কোনও তাতে আপত্তি নেই তো?"
আমি ওর এই স্থির সিদ্ধান্তে সহজেই সায় নিয়ে বললাম, “আপনি তো বেশ ভালই প্রোগ্রাম ভেবে রেখেছেন ছেখছি। আমারও এক মত।"
আশেপাশের পান্ডেলগুলি ঘুরে ঘুরে দেখছি আর আমরা নিজেদের মধ্যে শুধু পুজো, ঠাকুর, লোকেদের চলাফেরা এসব নিয়ে ছোটখাটো কথা বলছি। আমি কিন্তু মাঝে মাঝে আমার চোখের কোণ দিয়ে ওকে পর্যবেক্ষণ করছিলাম আর ভাবছিলাম কর্ণিকাকে যে রকম দেখতে হবে ভেবেছিলাম তার সঙ্গে মুখের মিলের অনেক তফাৎ আছে। আমি মনে মনে ওর মুখের আর দেহের একটা ছবি এঁকেছিলাম। ভেবেছিলাম কর্ণিকার উচ্চতা হবে পাঁচ ফুট চার বা পাঁচ ইঞ্চি, গায়ের রঙ হবে উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ আর খুব একটা মোটা বা খুব একটা রোগা হবে না অবশ্য মুখের গঠন কেমন হবে তা ঠিক মত আমার মনের মধ্যে বানাতে পানিনি। কিন্তু যা দেখছি তাতে আমার বেশ ভালই লাগছে। যা আশা করেছিলাম তার তুলনায় ওকে বেশ লম্বা আর আরও দেখতেও ভারী সুন্দর। অবশ্য এর মুখ কিন্তু ঠিক একেবারে বাঙালীর মতো মনে হচ্ছে না। কেন এরকম মনে হচ্ছে সেটা ঠিক ভেবে উঠতে পারছি না। তবে ওর হাসিটা কিন্তু আমার মনকে ভীষণভাবে জয় করেছে। তবে আমি জানি না ওর আমাকে ঠিক কেমন লাগছে?
আমরা হাজরা রোড ধরে দুর্গা ঠাকুর দেখতে দেখতে কখন যে দেশপ্রিয় পার্কে চলে এসেছি তার কোনও খেয়ালই ছিল না। ঘড়ির দিকে আমরা যখন দুজনে তাকালাম তখন প্রায় দশটা বেজে গেছে।
আমি বললাম, “চলুন কোথাও গিয়ে আমরা কিছু খেয়ে নিই।”
কর্ণিকা আমার কথায় সায় দিয়ে বলল, “এখানে কাছেই একটা বেশ ভাল রেস্টুরেন্ট আছে, চলুন। ওখানে নানারকম পশ্চিমদেশের তৈরি ডিস্ পাওয়া যায়, নাম “ওমেনা”। এটা যদিও মণিপুরি নাম। তবে এখানে যেতে আমার বেশ ভাল লাগে। মনে হয় যেন বাড়িরই খাবার খাচ্ছি।"
এ কথা শুনে আমার মনে কৌতূহলের সৃষ্টি করল, অবাক হয়ে ওকে প্রশ্ন করলাম, "তার মানে? আপনি কি মণিপুর থেকে?"
কর্ণিকা এবার আমায় পালটা প্রশ্ন করে বলল, “কেন, মিলন আপনাকে আমার সম্বন্ধে কিছু বলেনি বুঝি? আমার মা হচ্ছেন বাঙালী, কিন্তু বাবা মণিপুরী । এজন্য আমি দুই জায়গার সব জিনিসই ভালবাসি।”
"আপনাকে দেখলে কিন্তু মনে হয় না যে আপনি মণিপুরী।”
"আপনি যদি আমায় না জানাতেন আমি কিন্তু কখনই বলতে পারতাম না। কারন, আপনার বাংলা বলার মধ্যে কোনও অবাঙালীর টানই নেই।"
আমার গলায় তখনও আশ্চর্যের আভাস রয়েছে। ওর পদবী আমি জানতাম না। কর্ণিকা আমার কথার উপরে বলল,“আমি মার মতোই অনেকটা দেখতে যার জন্য কেউ বুঝতে পারে না যে আমার মধ্যে মণিপুরী রক্ত বইছে, আর আমি এই কলকাতাতেই মানুষ।”
"হ্যাঁ, আপনি যে পুরোপুরি বাঙালী নন সেটা আমি কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছিলাম। কিন্তু কথাটা জিজ্ঞাসা করাটা সাম্য নয় ভেবে আর জিজ্ঞাসা করিনি। এছাড়া এবিষয়ে আমার কোনও আপত্তি নেই। বরং, আমার কিন্তু আপনাকে বেশ ভালই লাগছে।”
এরপর প্রসঙ্গ এড়াতে বললাম, "আজ যা ভীড় হবে, এই রেস্টুরেন্টে আমরা ঢুকতে পারলেই লাভবানই হবো।”
তার উত্তরে ও সাহস করে বলল, “এটা নতুন হয়েছে, এর মেনুতে বেশীর ভাগ আইটেমই বিদেশী, অনেকের এ খাবার খেতে ভাল নাও লাগতে পারে।"
আমি আর কথা না বাড়িয়ে এর পাশাপাশি চলতে লাগলাম। মিনিট দুয়েকের মধ্যেই আমরা রেস্টুরেন্টের কাছে পৌঁছে গেলাম। কাছাকাছি আসতেই আমি একটু সুস্থির স্বরে বললাম, “আপনি ঠিকই বলেছেন। খুব বড় একটা লাইন দেখতে পাচ্ছি না।”
আমরা রেস্টুরেন্টের কাছে গিয়ে দেখি আমাদের সামনে প্রায় কুড়ি জন লোকের মত লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ওকে লাইনে দাঁড়াতে বলে সামনে গিয়ে রেস্টুরেন্টের যে হোস্টেস আছে তাকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম আমরা প্রায় কুড়ি মিনিটের মধ্যে খেতে বসার জায়গা পাবো। হোস্টেস আমাকে এও বলল যদি চাই তবে কিছু ড্রিঙ্কস নিয়ে আমরা একটি অপেক্ষার জায়গা আছে ওখানে গিয়ে বসতে পারি। যখন আমাদের জন্য টেবিল খালি হবে তখন ও এসে আমাদের ডেকে নিয়ে যাবে। আমি তাতে রাজী হয়ে গেলাম। আমি ফিরে এসে যখন কর্ণিকাকে এ কথা জানালাম তাতে ও কোনও আপত্তি দেখালো না। আমরা আমাদের নাম লিখিয়ে সোজা ঐ ছোট বসার জায়াগায় চলে গিয়ে দেখি আমাদের মতো আরও কয়েকজন বসে আছে।
ঘরটি বেশ সুন্দর করে সাজানো। একদিকে বসার জন্য কয়েকটা ছোট টেবিল এবং দুটি করে চেয়ার আর তার উপরে রয়েছে খুবই কম আলোর ঝোলানো বাতিঝাড়। ঘরের অন্যদিকে আছে যাতায়াতের জায়গা আর তার পরেই রয়েছে ড্রিঙ্কসের বার, ঠিক তার পেছনে রয়েছে রংবেরংয়ের থরে থরে সাজানো নানা দেশের মদের বোতল। সত্যি করে বলতে কি ঘরটিকে অপরূপ দেখাচ্ছে কিন্তু তার মাঝখানে এত জোড়ে সবাই কথা বলছে যে পরিবেশটার মাধুর্যতা ঠিকভাবে উপলব্ধি করা যাচ্ছে না। আমাদেরও কোনও বিকল্প কিছু করার উপায়ও ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে আমরা একটি টেবিল অনায়াসেই দখল করলাম। আমি সঙ্গে সঙ্গে বুছতে পারলাম যে এখানে পানীয় যাতীয় জিনিসের প্রচুর দাম হবে। কিন্তু এখন এখান থেকে বার হওয়া মানে নিজেকে লজ্জার মধ্যে ফেলা।
কর্ণিকা আমার অবস্থা ঠিক আনুমান করে বলল, “আমার কাছেও কিছু টাকা আছে দুজনে মিলে সবকিছু দিয়ে দিতে পারবো, কিন্তু অন্য কোথাও যদি যেতে চান তাহলে চলুন এখনি বেড়িয়ে পড়ি।”
আমি সাথে সাথে অস্বীকার না করে বললাম, “এখানেই থাকি। আমাদের অসুবিধা হবে না।”
আমরা দুজনের ড্রিঙ্কস এলে, অবশ্য কোনও মদ্যপানীয় নয়, কেবল দুটি কার্বনেটেড জল নিয়ে বসে টুকটাক কথা বলতে থাকলাম। তবে এর মধ্যে আমার কথাই বেশী হচ্ছিল। আমার সম্বন্ধে কর্ণিকা সব জানতে খুবই আগ্রহ দেখাল।
আমি কিন্তু ওকে বললাম,“আমার জীবন সম্বন্ধে তেমন কিছুই বলার নেই। আমার মা এবং ছোট এক বোন আছে। বাবাকে হারিয়েছি অনেক ছোটোবেলায়। তবে মা আমাদের কেবল একটা কথাই সবসময় বলতেন আমরা যেন সবসময় পড়াশুনা করি, কখনো যেন এটার প্রতি অবহেলা না করি। উনি এ ব্যাপারে প্রচন্ড কড়াও ছিলেন। মার কাছে আমরা দুই ভাইবোন এই লেখাপড়ার ব্যাপারে খুবই কৃতজ্ঞ। বাকি সব জিনিস নিশ্চয় মিলনের কাছে শুনে থাকবেন।”
আমি আমার কথা শেষ করে কর্ণিকাকে পাল্টা প্রশ্ন করে বললাম, "এবারে আপনার কথা বলুন, আমারও ভীষণ জানতে ইচ্ছা করছে।”
এ বলার পর পরই রেস্টুরেন্টের হোস্টেস এসে জানালো আমাদের টেবিল রেডি। আমরা আর বিলম্ব না করে আমাদের টেবিলে চলে আসলাম। মেনু দেখে আগেই কোন খাবারের অর্ডার দেব তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। সুতরাং এই পর্ব খুবই দক্ষতার সঙ্গে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন করেই আমি কর্ণিকার প্রতি আমার কৌতূহল ভরা চোখ দুটি ওর চোখের উপর স্থাপন করলাম।
ও হেসে বলল, "আপনি আপনার প্রশ্ন ভুলতে পারেননি। "
আমার চোখের সম্মতি কর্ণিকা অনায়াসেই উপলব্ধি করতে পারলো। আর কোনও বিলম্ব না করে ধীরে ধীরে ওর বাড়ির ইতিহাস আমার সামনে উন্মুক্ত করে বলল, “আমরা চার ভাই বোন, আমি হচ্ছি তিন নম্বর। উপরের দাদারা এখন মণিপুরে থাকে আর আমি ও আমার ছোট বোন এই কলকাতার ব্র্যাবোন কলেজে পড়াশুনা করি। আমি এ বছরে আমার কলেজ শেষ করব ইংরাজী সাহিত্যের উপর। ছোট বোন একই বিষয়ের উপর পড়ছে আর ও শেষ করবে দুই বছর বাদে। আমার মার ইচ্ছা যে আমরা মেয়েরা বাংলার প্রভাব যেন পাই এবং সেই জন্য আমাদের কলকাতা পাঠিয়ে দিয়েছেন। আমরা ছোটমাসির বাড়িতে থেকেই কলেজে যাতায়াত করি।”
একটু গ্লাসে চুমুক দিয়ে আবার মৃদু স্বরে আমার চোখের উপর ওর চোখ রেখে বলল, "জানেন, আমার মার সাথে কিন্তু আমার বাবার সম্বন্ধ করেই বিয়ে হয়েছিল। তারও এক ইতিহাস আছে। আমার ঠাকুরদা কলকাতায় বহু বছর ছিলেন এবং মণিপুর থেকে আসলেও কলকাতার প্রতি ওনার খুবই আকর্ষণ জন্মে গিয়েছিল আর এটা হয়েছিল কেবল বাংলা ভাষার জন্য। কারণ তিনি যখন প্রথম রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনেছিলেন উনি কোনও কারণে এই সঙ্গীতের প্রতি প্রথম থেকেই একটা বড় আকর্ষণ অনুভব করেছিলেন। যার ফলে উনি বাংলা ভাষা বেশ ভাল ভাবেই শিখেছিলেন। এই সময়ে উনি এক বাঙালী পরিবারের সংস্পর্শে আসেন আর তাদের বাড়ির বড় মেয়ের সাথে ওনার বড় ছেলের সম্বন্ধ করে বিয়ে দেন। আমার দাদু বা দিদিমা এ বিয়ের ব্যাপারে কোনও আপত্তি করেননি। সেই থেকেই আমাদের কলকাতার সাথে যোগাযোগ।”
এই সময়ে কর্ণিকা এখানে একটু থেমে নিজের গ্লাসের ড্রিংসে আবার একট চুমুক দিয়ে আরম্ভ করল, “বাঙালী এবং বাংলা ভাষার প্রতি এতটা ভালবাসা জন্মেছিল যে উনি নিজের ছেলেমেয়েদেরও এই ভাষায় স্কুল করিয়েছেন। শেষ বয়সে উনি মণিপুরে ফিরে যান এবং আমার বাবা-মাও ঐ সঙ্গে ঠাকুরদার জন্য ইম্ফলে গিয়ে বসবাস আরম্ভ করেন। আমরা অবশ্য মার পীড়াপিড়িতে স্কুল শেষ করে কলকাতার কলেজে ভর্তি হয়। তারপরে তো সবই জানেন।"
আমি এতক্ষণ খুব মনযোগের সঙ্গে এর কথাগুলি শুনছিলাম। যদিও এর পরের পর্বগুলি কিছুই জানি না, কিন্তু আমি আর এবিষয়ে কোনও কথা না বাড়িয়ে আমাদের অর্ডারের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের অর্ডার এসে গেল। আমাদের খাবার সমাপ্ত হওয়ার সাথে সাথেই আমরা বিলটার ঝামেলা মিটিয়ে দিয়ে আবার জনসমুদ্রের মধ্যে হারিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলাম। আরো কয়েকটা আশেপাশের প্যান্ডেল ও ঠাকুর দেখে আমরা যখন ঘড়ির দিকে তাকালাম তখন ঘড়িতে বাজে রাত্র দুটো। কর্ণিকা আমাকে ইঙ্গিতে জানাল যে ও বাড়ি যাওয়ার জন্য প্রস্তুত।
আমিও সায় দিয়ে বললাম, “চলুন, আমি আপনাকে আপনার বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসি।”
তার উত্তরে ও কোনও আপত্তি না করে আমাকে নিয়ে বাড়ির রাস্তার দিকে এগোতে থাকলো। বাড়ির দরজার কাছে এসে আমাকে ওর বাড়ির ভিতরে যাওয়ার আমন্ত্রণ করতে আমি একটু ইতস্তত করাতে কর্ণিকা বলল, "আসুন, এক কাপ চা খেয়ে যান। এতে আপনার বা আমার কাররই কিছু ক্ষতি হবে না।”
আমি আর আপত্তি না করে ওকে বললাম, “বেশ তাই হোক। চলুন।”
বাড়ির ভিতরে নিয়ে আমাকে বসারঘরে বসতে বলে ও রান্নাঘরে চলে গেল। আমি ওর মাসির ঘর সাজানো ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকলাম এবং দেখে যখন সত্যিই খুব বিস্মিত হচ্ছিলাম। ঠিক তখনই কর্ণিকা ট্রেতে করে চায়ের সরঞ্জাম নিয়ে এসে একগাল হেসে বলল, "আমার মাসি ঘর সাজাতে খুবই ভালবাসেন।”
চায়ের সঙ্গে কয়েকটা মিষ্টি পরিবেশন করতে দেখে আমি সত্যি আপত্তি জানালাম। কিন্তু ও কোন কথা না শুনে সবকিছু নিয়ে আমার পাশে নিঃসংকোচে এসে বসল। আমি কিন্তু এর জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলাম না। এজন্য মনে মনে একটু উত্তেজনাও অনুভব করছিলাম। কিন্তু কোনও কথা না বলে ওর চায়ের পরিবেশন দেখতে থাকলাম। ওর পরিবেশন করার মধ্যে যে একটা আভিজাত্য আছে তা অনায়াসেই উপলব্ধি করলাম। সাথে সাথে পেলাম ওর গায়ের গন্ধ, শাড়ীর স্পর্শ এবং হাতের চুড়ির মৃদু শব্দ আমাকে মাদকাসক্ত করে তুলছে। জানি না কর্ণিকা কি একই জিনিস অনুভব করছে কি না!
তার উত্তর এর কথার স্বর থেকেই বুঝতে পারলাম ও যখন আমাকে কাঁপা স্বরে বলল, “মধুরবাবু, এই আপনার চা আর মিস্টি।”
ও আমাকে একটা কাপভরা চা এবং মিষ্টির প্লেট হাতে তুলে দিল।
আমি তার উত্তরে জানালাম, “অনেক ধন্যবাদ, আপনার চা-মিষ্টি কোথায়?"
“আপনি আরম্ভ করুন, আমি নিচ্ছি।” বলেই ওর স্নিগ্ধ হাসিতে ভরা চোখদুটি আমার চোখের উপর রাখল। আমিও চোখ সরালাম না। আমাদের দুই জোড়া চোখ যেন কৌতূহল ভরা রাজ্যে চলে যেতে চাইছে আর সেই কৌতূহলকে উন্মুক্ত করার আয়োজনে নিজেদেরকে ব্যস্ত করার প্রয়াস পাচ্ছে। আমি মনে মনে সাহস সংগ্রহ করে ওর হাত নিজের হাতের মধ্যে নিলাম আর অনুভব করলাম ওর প্রশ্রয় দেওয়া প্রত্যুত্তর।
আমি কাঁপা স্বরে বললাম, “কিছু মনে করলেন না তো?”
কর্ণিকা নিঃশব্দে আমার আরো গাঁ ঘেঁষে বসল।
আমি উত্তেজিত ভরা গলায় জিজ্ঞাসা করলাম, “মাসি বা আপনার বোন যদি এসে পড়ে?”
“আসলেই বা কি? আপনি ভয় পাচ্ছেন নাকি?”
আমি একটু ভয়ের ভাব দেখিয়ে ওকে আরো কাছে টেনে বললাম, "ভয় পাবো না? ওনারা আমাদের কি ভাববেন?"
ও তার উত্তরে বলল, “আমরা এখন যথেষ্ট বয়সী, আমাদের কি কোনও বিচার শক্তি নেই? এ ছাড়া ওরা কেউ বাড়িতে নেই। ওরা কাল আসবে।"
বলেই নিজের চাহনি দিয়ে আমাকে আরো দুঃসাহসী হবার আহ্বান জানাল। আমিও ওর এই আহ্বানকে পরিপূর্ণ ভাবে হাসিল করার পরিপ্রেক্ষিতে বললাম, "ওরে দুষ্টু, আমি তোমায় মজা দেখাচ্ছি'', বলেই ওর ওষ্ঠ দুটিতে আলতো করে চুমু দিলাম।
কর্ণিকা তার প্রতিবাদ না করে আমার চুম্বনকে আগ্রহ সহকারে গ্রহণ করলো। আমরা চা-মিষ্টির কথা একদম ভুলে গিয়ে দুজন-দুজনকে আরো ঘনিষ্টভাবে নিজেদেরকে শারিরিক উত্তেজনার বশীভূত করতে উদ্যত হলাম। মাঝে মাঝে আমরা চুম্বনের স্পর্শে থর থর করে বারে বারে কেঁপে কেঁপে উঠছি আর পরস্পরের দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাসের অনুভূতি আমাদের কোন স্বপ্নরাজ্যে নিয়ে যাচ্ছে।
কখন যে আমরা আমাদের পরস্পরের জামাকাপড় উনমুক্ত করেছি তা নিজেরাই জানি না। কিন্তু এই করার মধ্যে যে উত্তেজনা আর শারিরিক অনুভুতি রয়েছে তা এক যুবক-যুবতীকে কিভাবে দিশেহারা করে এর আগে আমি কখনো অনুভব করিনি।
মনে হচ্ছে আমি যেন কেবলই স্বর্গের দিকে দ্রুত পদে অগ্রসর হচ্ছি আর কর্ণিকা কিন্তু বিড়বিড় করে আমার নাম উচ্চারণ করে বলছে, “মধুর, তুমি থেম না।”
পূর্বে এই অর্থ বোঝার সম্মুখীন আমি কখনো হইনি। কিন্তু এই মুহূর্তে যা অনুভব করছি তা যেন আর শেষ না হয়। পর মুহূর্তে আমরা দুজন থর থর করে কেঁপে উঠলাম আর মনে হল আমরা দুজন যেন কোথায় হারিয়ে গেছি। কিছুক্ষন বাদে আমরা নিজেদের আগের সত্তা যেন আবার ফিরে পেলাম, কিন্তু দুজন-দুজনকে ছাড়লাম না, শুধু শক্ত ভাবে দুজন- পুজনকে আলিঙ্গনে বন্ধ রাখলাম আর দিলাম চুমায় ভরিয়ে। ভাবলাম এ জীবনে কখনো এ ভাবে কাউকে এরকম সান্নিধ্যে পাবো তা আমার স্বপ্নের মধ্যেও ছিল না। জানি না ওদিকে কর্ণিকা কি ভাবছে...
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন