শ্লোক

মাছঘুড়ির জন্মদিনে সাদা-বেলুন
একটা শ্লোক বলল। আর তাতেই কাগজফুলের
মনখারাপ। এমনটা যে হবে সে-কথা জোনাকি-
পোকার মেয়ে জানতেই পারেনি।

আর জানলেই-বা কী হবে? এতে কি ভাঙা
আয়নার রেটিনায় জমে থাকা নিঃসঙ্গতার গায়ে
কেউ হলুদ মাখিয়ে দেবে?

অনেকদিন আকাশ থেকে ফুল ঝরেনি।
তাই লালচে ব্রণগুলি পা ছড়িয়ে কাঁদতে
বসেছে। তবু বুড়ো কলমটি হাইকু লিখেই
চলেছে।

নীল-রুমালের মাসতুতো-বোন খোলা দরজাকে
যে কথা বলছে। জানালাটি সেই কথা
আড়ি পেতে শুনে নিচ্ছে।

এতে যে ফুলদানিটি কোমায় চলে যাবে সে
বুঝতেই পারছে না।






চিরুনির বিরুদ্ধে উকুনের স্লোগান

উর্বশী খুব জোরে জোরেই বলছে,
আমার মাথার উকুনগুলো সংস্কৃত ভাষায় কথা
বলতে পারে।

মেনকা থেমে যাবার মেয়ে নয়, সে-ও বলছে,
আমার মাথার উকুনগুলো কত্থক নাচে
বিশ্বচ্যাম্পিয়ন।

রম্ভা ওদের কথা শুনে হাসছে। আর বলছে,
আমার মাথার উকুনগুলোর বন্ধু-তালিকায়
দেবরাজ ইন্দ্র আছে।

তিলোত্তমা চুপ। সে জানে তার
উকুনগুলোর কোনো যোগ্যতা নেই। ওরা শুধু
চিরুনির বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে পারে।

অহংকারে ভরা পৃথিবী।
এখানে কি স্লোগান দেওয়া যোগ্যতা হিসাবে গণ্য
হবে?






জেব্রাপাঠ

ভাঙাচোরা রোদে দাঁড়িয়ে আছে
একজন জেব্রা। তার গায়ে ডোরাকাটা দাগ। এই
দাগেরই যমজ-বোন জেব্রাক্রসিং। আমি গুণে গুণে
দেখলাম, ৭৭টা দাগ।

আমি তৃতীয়-চোখ মেলে দেখলাম,
কোনো দাগে কুরুক্ষেত্রের হাহাকার কোনো দাগে
রিলকের মৃত্যু কোনো দাগে শ্রীচৈতন্যের কান্না
কোনো দাগে গুয়াভারার রক্ত আবার কোনো
দাগে টাইটানিকের SOS.

আমি ডোরাকাটা দাগের সাদা অংশটাও পড়লাম।
কেননা সাদা-কালোর পুরোটা না-পড়লে
জেব্রাপাঠ অসমাপ্ত থেকে যাবে।

আমি জেব্রার গায়ের সাদা অংশটাতে ফ্লোরেন্স
নাইটিঙ্গিলকে দেখলাম। ওই বিখ্যাত নার্স
কালোদাগের যন্ত্রণাগুলোকে শুশ্রূষা
করছে।






রিলকের কখনো মৃত্যু হয় না

আঙুলে গোলাপের কাঁটা ফুটে
রাইনার মারিয়া রিলকে মারা গেলেন।

টলস্টয় গোর্কি এলিয়ট অথবা পিকাসো
কখনোই বলেননি,
এটা মৃত্যু নয় আত্মহত্যা।

জুঁই চাঁপা আর রজনিগন্ধায় কাঁটা নেই,
একথা কবি জানতেন। তবু তিনি গোলাপের দিকেই
এগিয়ে গেলেন।

ওডিসিতে লেখা নেই রিলকে কার জন্য গোলাপ
তুলতে গিয়েছিলেন।

ইলিয়ার্ডে লেখা নেই রিলকে কোন গোলাপের
দিকে হাত বাড়িয়েছিলেন?

কুইন ভিক্টোরিয়া রোজ? লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি রোজ?
ভিনসেন্ট ভ্যানগগ রোজ? অথবা সুইট ড্রিম রোজ?

মোমবাতি মোমদানিটিকে বলছে,
রিলকের কখনো মৃত্যু হয় না। যাঁরা রক্তাক্ত হবে
জেনেও গোলাপের দিকে হাত বাড়ায় তাঁরা সবাই
রিলকে।






হরিণীর গজদন্ত

আমি কেন নৌকো হতে পারিনি,
তাই নিয়ে জুঁইফুলের মেয়েরা সন্ধ্যাবেলা ফিশফিশ
করে।

চাঁপাফুলের ছোট-বোন অঙ্ক কষে পাশের বাড়ির
গন্ধরাজকে জানিয়ে দিল, আমি জীবনে
মোমবাতি হতে পারব না।

ওদের কথায় আমি সেঁকো বিষের সন্ধান
করিনি। অথবা একতারা হাতে নেমে পড়িনি
পথে।

আমার ডাকবাক্সে প্রতিদিন অজস্র চিঠি আসে।
আজ রজনিগন্ধার চিঠি পড়ে জানলাম,

হরিণীর গজদন্ত দ্যাখার পর,
যুদ্ধবাজ সেনা-ও কবি বিদ্যাপতি হয়ে ওঠে।






উলু

আমি কখনোই ইঁদুরগুলোকে
বলতে পারছি না, পাশের বাড়িতে  যা।
কেননা তাহলে দক্ষিণের জানালা দিয়ে ফুলের
গন্ধ না-ও আসতে পারে। আর জল-শালুকের
বিপন্ন হবার সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে
১০০ গুণ।

প্রতিদিন অসংখ্য ইঁদুর ঘরের খাবার খেয়ে
ফেলছে। বইগুলোর পাঁজরে সুড়ঙ্গ কেটে চলে
যেতে চাইছে,অজানা কোনো দেশে।

ওদের হাত থেকে নিস্কৃতি পেতে আমি
একটা বেড়াল আনলাম। আজ অবাক হয়ে
দেখছি, বেড়ালটাকে দেখে বই আর
পত্র-পত্রিকাগুলো উলু দিচ্ছে।






তৃষ্ণা

এক-গ্লাস জলের ইনসুইংয়ে
তুখোড় তৃষ্ণা প্যাভিলিয়নে ফিরে গেল।

এখন আর সে হুক করে পাঁজরে পুল করে চোয়ালে
কাট করে পায়ে অথবা ড্রাইভ করে মুখে
বিষাদ ছড়াতে পারবে না।

তৃষ্ণার চৌকো ছক্কা আর সিঙ্গেলগুলি
হাহাকারের স্কোরবোর্ড থেকে আস্তে আস্তে
নিভে যাচ্ছে।

আজ আনন্দে আমার ঠোঁট গেয়ে চলেছে,
খোলা জানালার টপ্পা,

দুটো চোখ থেকে ছড়িয়ে পড়ছে আলো,
আর মাথাটা নীল-পাখিদের শুনিয়ে যাচ্ছে
শিমুলতুলোর লিরিক।

দেখছি, এরইমধ্যে সমস্ত দাঁত
মেঘের দিকে হাওয়া-চুম্বন ছুড়ছে।

এক-গ্লাস জলের এত প্রতিভা, বুকে আগুন
না-জ্বললে জানতাম না।






মেরেছ কলসির কানা

এখন আর কোনো ফুলকেই
আমার কত্থক নাচের মুদ্রা মনে হয় না। সাদা-
কাগজ আর পার্কার কলমটির-ও কি একই কথা
মনে হয়?

অ্যাশট্রের ভিতর মৃত সিগারেট।
কেউ ওদের জন্য এলিজি লিখছে না। তাই
ফুলদানির খুব মনখারাপ।

বৃষ্টি পড়ছে। রিমঝিমধ্বনি
সবার হৃৎপিণ্ড মাখন করে দিয়েছে। আজ ভাঙা
আয়নাটি-ও বলছে,

মেরেছ কলসির কানা...






মেছুনি

তুমি আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালে,
সেখানে একটা নীল পদ্ম ফুটে উঠল। এই পদ্মকেই
রূপসিরা বলে নীলজা।

আমি তোমার কাছে এসে দাঁড়ালাম। মুহূর্তেই
তীব্র আঁশটে গন্ধ ছিঁড়ে দিল বুক।

একটু আগেও তুমি চিলেকোঠায় ছিলে। এখন
নূপুর বাজিয়ে চলে যাচ্ছ স্নানঘরের
দিকে।

আজ আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি,
তুমিই সেই বেহায়া মেছুনি। অসংখ্য মাছের সর্বনাশ
করতে পৃথিবীতে এসেছ।






যক্ষ আর মেঘের কথাবার্তা

গাধাগুলো ঘোড়ার ডাকের মিমিক্রি
করছে। আর এতেই নেলপালিশটি ভয়
পাচ্ছে। যদি বিকট শব্দে লিপস্টিক-কিশোরী
বাসররাতের হেঁয়ালি ভুলে যায়।

১লা আষাঢ়।
বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে, যক্ষ আর মেঘের কথাবার্তা।

যক্ষ বলছেন: ১টা ফরাসি চুম্বন ১০ মিনিট স্হায়ী
হলে, রাগ মিয়া কি মল্লার  ডিভানে শীৎকার
দিয়ে নৌকো বানায়।

মেঘ বলছেন: যেসব চাতকের ডানায় পলাশফুলের
ম্যানিফেস্টো একদিন ছায়াপথে ওদের স্ট্যাচু
বাসানো হবে।

কথার ওপর কথা সাজাতে যুবতি হচ্ছে রাত। শুধু
১লা আষাঢ় জানে,

যক্ষ আর মেঘের কথাবার্তা হিমযুগ শেষ হলেও
শেষ হবে না। 



সুশীল হাটুই

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন