মাটির এক আকাশ মানের যাপনচিত্র




এখনও যে মাটির মানে বুঝেছি তা ঠিক জোর দিয়ে বলতে পারি না। চৌকাঠ পার হয়ে আর দূরের তালগাছটার মাঝে অনেকটা ফাঁকা জায়গা ছিল আমাদের। হাঁটতে শিখতাম আমরা। সবসময় যে চোখ থাকত তা নয়। তবে পড়ে গেলে লাগত না। মাটি মানে তো পড়েছি উড়ে যাওয়া। হাঁটতে হাঁটতে বাবা পড়িয়েছে। 




সন্ধে সকাল বাবা পড়া ধরতো। মাটি মানে দেখেছি একটি নদীর অবিশ্রাম বয়ে চলা। জল মাটি কিছুই চিনি না। বাবা বলতো, মানে বুঝে ফেলা কোনো যুদ্ধে জিতে যাওয়া নয়। বরং তাতে হাত পা অনেক ছোটো হয়ে আসে। মাটি ধরতে সমস্যা হয়। তুমি শুধু জলপায়ে এগিয়ে যাও সারাবেলা। 




একটা গাছের কথা মনে পড়ে। তালগাছ। মাটি থেকে কিছুটা উঠে হঠাৎ বেঁকে গেছে। আমি বসে বসে পা দোলাতাম। বাবা মাঝে মাঝেই তালতলায় গিয়ে বসত। এমন কথা বলার জন্য মুখের উৎসপথে যতটুকু আলো দরকার তার থেকে একটু বেশিই আলো নিয়ে নাড়াচাড়া করতাম। দেখতাম আলোতে মাটির দানাগুলো সুঠাম অক্ষরে সরে গেছে।




রোদ্দুর দুপুরে মাটি বলতে জানতাম ছাতা। মালোপাড়ার দশহাত গড়ানে গড়িয়ে পড়তে পড়তে ঠাণ্ডা মাটির ভাষা কবে যেন শিখে ফেলেছিলাম। জলপায়ে দাগ পড়লে মাটি আমাদের দুয়ার খুলে দিত। কিছুক্ষণ পরে চোখ বুজলে বাবা পড়াত ঠাণ্ডা মাটির বর্ণপরিচয়। যদিও স্পষ্ট নয় তবুও দূর নক্ষত্র দেশ পর্যন্ত চোখে ভাসতো আমাদের জন্মপরিচয়। 





হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন