(২টি অণুগল্প)








বিরিঞ্চির দোকান

সকালে উঠে মায়ের মমতামাখা মুড়ি ও লিকার চা খেতাম। তারপর দাদু বলতেন, এবার পড়তে বোস। তারপর বিরিঞ্চির দোকানে যাব নটকনের মাল আনতে। আমি বলতাম, নটকনের মাল কী দাদু?
দাদু বলতেন, এই চাল, ডাল, মশলাপাতিকে গ্রামের লোক নটকনের মাল বলে।
ছোটবলায় এই দোকানেই আমাদের স্বপ্নপূরণ হত। বন্ধুরা সকলে একত্রে ঈশানী নদীর পাড়ে বনভোজন করতাম এই দোকান থেকে চাল ডাল তেল, ডিম, মশলাপাতি কিনে। 
লজেন্স, চানাচুর আর শোনপাপড়ির মিশ্রিত গন্ধজুড়ে মেতে উঠত ছেলেবেলার সোহাগি সকাল। 
তারপর দাদু পরলোকে চলে গেলেন আামাদের ছেড়ে।
আমার মা বলতেন- 'তোর বয়স বেড়েছে। কিন্তু আদৌ বড় হয়েছিস কিনা কে জানে?'
বাবার সঙ্গে একবার বেড়াতে গিয়ে বিরিঞ্চির দোকানঘর দেখে থমকে গেলাম। তার মাটির ঘরের কাবারির কঙ্কাল বুকে শেলবিদ্ধ করল আমার। খুব মর্মাহত হয়ে বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম, বাবা বিরিঞ্চির দোকানের এই হাল কেন? বাবা বললেন, সেই বিরিঞ্চিদাও নেই আর দোকানও নেই। তার ছেলেরা এই বাড়ি বিক্রি করে শহরে গেছে উন্নতির আশায়।

বাবার কথা আমার কানে ঢোকেনি।
আমি তখনও, দাদুর সঙ্গে বিরিঞ্চির দোকানে চলেছি ছোটবেলার স্মৃতিপথ ধরে।








ফিরে দেখা

যে স্কুলে পড়তাম, দীর্ঘ কুড়িবছর পরে সেই স্কুলের সিঁড়িতে দেখলাম স্মৃতিগুলো থমকে আছে অতীতের থাম ধরে। আমার কাঁচাপাকা চুল সহসা কালো হয়ে ফুটে উঠল। কী করি, কোনটা আগে দেখি পড়িমরি করে ছুটলাম রসায়নাগারে। এখানে লাফিং গ্যাসের বোতল খুলে গেছিল অজানা কারণে, আমরা সকলে হাসছিলাম, এমনকি শিক্ষকমহাশয় পর্যন্ত হাসছিলেন, নাইট্রাস অক্সাইডের বিক্রিয়ায়। তারপর, গ্রন্থাগারের দরজা খুলে মৌন হলাম। সারি সারি বই সাজানো, আব্দুল স্যার গম্ভীর হয়ে বই পড়ছেন। মায়ামাখানো অপূর্ব দৃষ্টিতে  তাকিয়ে তিনি বললেন, এখানে আয়। কেমন আছিস? 
ঢং করে, ঘন্টা পড়তেই চমকে দেখি কেষ্টদা বলছেন, কেমন আছিস বাছা। তোর নাম মনে পড়ে না, তবে মুখটা মনে আছে। মনে পড়ল কবি শেখর কালিদাস রায়ের কথা, "মালিকা পরিলে গলে, প্রতিফুলে কে বা মনে রাখে"...









সুদীপ ঘোষাল 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন