(অলংকরণ: বিপ্লব দত্ত)





কবিতা পাঠ

আমাকে চেনে সেই বটগাছ
যার সাথে কোকিলের কথা হয়, 
আজ মাঝরাতে নেমেছে তারাদের বৃষ্টি,
আমি চান করি তাতে,
দেখো আমার গায়ে হাস্নুহানার গন্ধ,
দেখো আমার শরীরে জোৎস্না লেগে আছে।
আমার প্রেমিকারা আমাকে চেনে না,
চেনে শুধু ওই বটগাছ, তবুও আমি পথ চলি এ সীমান্ত থেকে অন্য সীমান্তে, পথে পড়ে থাকে রক্ত মাখা ইতিহাস আর জীবনের গান।
তবুও মৃত্যু বারবার হানা দেয়, আমি কবিতা বলি বধিরেরা শোনে।
তারপর অচেনা পাখির পালক আসে কাছে আর আসে ঠাকুমাদের রূপকথার গল্প।
আমি সিনেমা নয়, ছবি দেখি আকাশের গায়ে,
আমার শরীরে জোছনা, গায়ে হাস্নুহানার গন্ধ।






ছাড়তে হবে

মৃত্যু মুচকি হাসে, জীবন বলে অনেক হলো এবার যাই।
ভালোবাসা মাখামাখি এই জগত সংসারে তোমাকে কি প্রয়োজন আছে?
 ভাবো কবি, এবার ছাড়তে হবে হৃদকমল ,ছাড়তে হবে চির ঠাই।
কেবা স্বজন, কেবা ভাই ...
কেউ নাই, কেউ নাই।
চোখের জলের আশা করো নাকো
শুকনো কথায় জীবন চলে না।
তবু শুনতে হয়, বেঁচে থাকার লড়াই চালাতে হয়
ক্লান্ত মুখে বলতে হয় ভালো আছি।
তারপরে নড়বড়ে শরীরটা নিয়ে পথ চলার চেষ্টা, কত ক্রিয়া আর কত প্রতিক্রিয়া।
কেউ নেই, কেউ থাকেনা পাশে চিরকাল।
তবু অভিনয় করি সমাজের হাটে।
যে থাকে পাশে সেও তো চলে যাবে একদিন ক্লান্ত গলায় করবে প্রত্যাখ্যান।
ভালোবাসা মাখামাখি এ সংসারে আছে কি তোমার প্রয়োজন?
না হলে চলো সেই পথে, অনন্তে।
ছাড়তে হবে হৃদকমল, ছাড়তে হবে চির ঠাঁই।
কেউ নাই, কেউ নাই ...






গাজনের গান

নেতারা ডিগবাজি খান
এ দল থেকে ও দলে,
গুন্ডারা কাঁসর বাজায়
চামচেরা দেয় হরিবোল।
জনতা ছাগলের বাচ্চার মতন
ঠ্যাং তুলে নাচে‌।
দেশ লুঠ হচ্ছে,
তাতে তোমার কি, তাতে আমার কি?
পাবলিকের আবার সম্মান, বুদ্ধিজীবীদের আবার অপমান!
ছড়ানো ছেটানো দানে আমরা মুগ্ধ বেচারা,
দেশে স্বৈরতন্ত্র চলছে গণতন্ত্রের মুখোশ পরে।
দুর্নীতিতে ধরা পূর্ণ, তবুও আমরা উৎসবে মাতি,
সন্ত্রাসে সন্ত্রাসে বাক স্বাধীনতা মৃত্যু গহবরে,
তবুও আমাদের বেঁচে থাকতে হয়।
অম্বলে কম্বল চাপাই বিনা শীতে, 
গাজনের গান গায় নিতাই পাগল।
নেতারা ডিগবাজি খান এ দল থেকে ওদলে।






যজ্ঞ 

অলৌকিক শক্তি নেই, আছে মাটির ওপর পা, বুজেছি বেঁচে থাকাই সার কথা এ সংসারে। প্রতিদিন বিবেকের কবর খুঁড়তে বসি - যুগাত্মা ক্ষমতাবানদের পায়ের তলায়। তবুও মাথা উঁচু করে থাকার ইচ্ছে জাগে।  আমার তূণীরে কোনো ধাতুর অস্ত্র নেই, আছে বিবর্ণ পান্ডুলিপিময় রক্তাক্ত কবিতা, তাতে লেখা অসহায় মানুষদের জীবনকথা, আর এক প্রতিরোধ যজ্ঞের আয়োজনে মাতে এ যুগের পরশুরাম।







কথাপার্বণ

আমি যুদ্ধ করতে গেলে 
হয়ে যায় নাটক ... 
আমি কিছু বলতে গেলে 
কান্না এসে ভিড় করে, 
আমি প্রেমে পড়তে গেলে 
খোঁজ পাই না তেপান্তরের,
আমি কিছু করতে গেলে 
হারতে হারতে হাঁপিয়ে উঠি।
আমি অনেক পেতে গেলে 
ছেঁড়া কাঁথায় নক্সা বুনি,
আমি কবিতা লিখতে গেলে 
আবোল তাবোল বর্ণলিপি।




কৌশিক গাঙ্গুলি 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন